‘তুমি এলিট সিনেমার সামনে এসো। আমি ওখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করব।’ এই কথাটি হচ্ছে প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে। এমন নানা কথা আগেও হয়েছে। কিন্তু এবার থেকে আর হবে না। অর্থাৎ এলিট সিনেমা হল আর ল্যান্ডমার্ক হিসাবে থাকবে না কারও জীবনে। কারণ ধর্মতলার এলিট সিনেমা হলের বাড়িটি এবার ভাঙা পড়ছে। এখানে বেশ কয়েকবছর ধরে সিনেমা আর আসে না। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এবার গোটা বিল্ডিংটিই হয়ে যেতে চলেছে ‘ইতিহাস’। চ্যাপলিন, প্যারাডাইস, ওরিয়েন্ট, লাইটহাউস, রক্সি, গ্লোব সিনেমা হলগুলি আগেই ধর্মতলা থেকে ইতিহাসের পাতায় গিয়েছে। এবার সেই তালিকায় যাচ্ছে এলিট সিনেমা হলও।
এখানে বহু প্রেমিক প্রেমিকাই একে অপরকে ল্যান্ডমার্ক হিসাবে এলিট সিনেমা হলের কথা বলে থাকেন। তাই এটা একটা ল্যান্ডমার্ক বটেই। তাছাড়া এটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় এই সিনেমা হলকে ঘিরে নানা দোকান গড়ে উঠেছিল। এখন হলটির পুরনো বাড়ি ভাঙার কাজ প্রায় শেষ। সেখানে মাথা তুলবে এখনকার আধুনিক শপিং মল। এই জায়গাটি কিনেছে একটি বহুজাতিক সংস্থা। ১৯৪০ সালে এলিট সিনেমা হল মনোরঞ্জন দেওয়া শুরু করে। এখানে একের পর এক ক্লাসিক ছবি রিলিজ হয়েছে। তবে পরে এখানে হিন্দি সিনেমাও জায়গা পেয়েছে। এমনকী একটা সময় গিয়েছে যখন ‘হাউসফুল’ থাকত এলিট।
এদিকে এলিট সিনেমার একদিকে নিউ মার্কেট অপরদিকে কলকাতা পুরসভা–সহ নানা জায়গা রয়েছে। এখান দিয়ে যাতায়াত করার সময় বহু মানুষ এলিট সিনেমা হলের দিকে একবার তাকিয়ে যান। কিন্তু এখন সেসব অতীত। সিনেমা হলে সিনেমাও চলে না। আবার ভেঙে পড়ছে বলে অনেকে তাকাচ্ছেন। এরপর সেটাও কেউ ফিরে তাকাবে না। নতুন প্রজন্মের সামনে মাথা তুলবে শপিং মল। যেখানে ভিড় জমাবেন মানুষজন জিনিস কিনতে। ২০১৮ সালে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এই এলিট। করোনাভাইরাসের সময় কলকাতা পুরসভা এলিট সিনেমা হলকে টিকাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। এখন হাতবদল হয়ে হলটি ভাঙা পড়ছে।
আরও পড়ুন: ‘দুটি দল বেরিয়ে গেলেও প্রভাব পড়বে না’, ইন্ডিয়া জোট শক্তিশালী আছে দাবি রমেশের
অন্যদিকে সোমবার দেখা গেল, ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এলিট। অনেকের বহু স্মৃতি এখানে রয়ে গিয়েছে। আবার নতুন স্মৃতি সেখানে তৈরি হতে চলেছে। সবই যেন শুধু সময়ের ফের। ভাঙার কাজ দেখতে মানুষের ভিড় করেছিল। অনেকেই একবার পা থামিয়ে, গাড়ি বন্ধ করে দেখছিলেন এলিটের শেষ বিদায়। এক ব্যক্তি বলেন, ‘চাকরি পেয়ে প্রথম এখানে সিনেমা দেখতে এসেছিলাম। অমিতাভ বচ্চনের সিনেমা দেখতে। আর আজ এ কি দেখছি!’ এলিট সিনেমা হলের পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। এলিট নামটি কি আর থাকবে? উঠছে প্রশ্ন।