বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বেতন বন্ধের হুঁশিয়ারি দিতে এজলাসের মধ্যেই কার্যত ভেঙে পড়লেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি গৌতম পাল। কাতর ভাবে বলেন, বাড়িতে ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা রয়েছেন। আমার বেতন বন্ধ করবেন না। এর পর নিজের ভুল স্বীকার করে দ্রুত বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
২০১৬ সালের এক টেট পরীক্ষার্থী মামলা করে আদালতকে জানান, প্রথমে তিনি টেট পাশ করেননি বলে জাননো হয়েছি। পরে তাঁকে জানানো হয় তিনি পাশ করেছেন। তবে ২০২০ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সুযোগ দেওয়া হয়নি তাঁকে। এর পর আদালতের দ্বারস্থ হন ওই ব্যক্তি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, ওই প্রার্থীকে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সুযোগ দিতে হবে। দ্রুত তাঁর ইন্টারভিউ নিতে হবে।
গত ৭ জুন মামলাকারী আদালতকে জানান, পর্ষদ তাঁকে ইন্টারভিউতে ডাকেনি। সেই মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে পর্ষদের আইনজীবী জানান, এই নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা হয়েছে। তাই নির্দেশ কার্যকর হয়নি। তখন পর্ষদের আইনজীবীর কাছে ডিভিশন বেঞ্চে দায়ের মামলার নম্বর জানতে চান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু তিনি তা জানাতে পারেননি। এর পর পর্ষদ সভাপতি গৌতম পালকে এজলাসে জরুরি তলব করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বেলা ৩টেয় হাজিরা দিতে বলেন তিনি।
আদালতের তলব পেয়ে হাইকোর্টে ছোটেন পর্ষদ সভাপতি। এজলাসে বিচারপতি গৌতমবাবুকে প্রশ্ন করেন, আপনারা ডিভিশন বেঞ্চে যে মামলা করেছেন তার নম্বর কত? কিন্তু গৌতমবাবুর কাছেও এই প্রশ্নের কোনও জবাব ছিল না। এর পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি আপনার বেতন বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছি। সঙ্গে আদালতে মিথ্যা তথ্য পেশ করায় পর্ষদকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হল।’
বেতন বন্ধের কথা শুনেই এজলাসে কার্যত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন গৌতমবাবু। বলেন, ‘হুজুর আমি দিন রাত কাজ করি। আমার মায়ের বয়স ৮০ বছর। তিনি অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসা চলছে। আমি পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য’। এর পর নিজের ভুল স্বীকার করে নেন গৌতমবাবু। বলেন, ‘আমরা আপনার আগের নির্দেশ মেনে চলব। ডিভিশন বেঞ্চে মামলা হয়ে থাকলে তা প্রত্যাহার করব। ওই প্রার্থীকে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সুযোগ দেব। আমাদের ২ সপ্তাহ সময় দিন।’ গৌতমবাবুকে শেষ সুযোগ হিসাবে ২ সপ্তাহ সময় দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন পর্ষদ সভাপতি।