হরিদেবপুরের বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে এক ব্যক্তি ও এক মহিলার দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। নিহত ব্যক্তির নাম রবীন্দ্রকুমার চৌরাসিয়া (৪৪)। এই রবীন্দ্রবাবুর সঙ্গে নিহত মহিলার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করেছিল পুলিশ। আর মহিলাকে খুন করে আত্মঘাতী হন রবীন্দ্রবাবু বলে মনে করা হয়েছিল। আসল গল্প অন্য। মৃত দু’জন প্রেমিক–প্রেমিকা ছিলেন না। ফ্ল্যাটে উদ্ধার হওয়া দেহ দুটি দম্পতির। নানা সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং সেটা নিয়ে অশান্তির জেরেই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে তাঁদের।
ঠিক কী উঠে আসছে তদন্তে? পুলিশ সূত্রে খবর, হরিদেবপুরের ফ্ল্যাটে উদ্ধার হওয়া দেহ দুটি রবীন্দ্র চৌরাসিয়া এবং শাগুফতা পারভিনের দেহ। এবার উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোট। যা চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে। পর্ণশ্রীর আদর্শনগরে রবীন্দ্র চৌরাসিয়ার স্ত্রী, কুড়ি বছরের মেয়ে এবং ১৭ বছরের ছেলে রয়েছেন। মেয়ের বিয়ে আগেই হয়েছে। ঠিকাদারির ব্যবসা করতেন রবীন্দ্রবাবু। ২০১৮ সালে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হয় শগুফতার সঙ্গে। ২০১৯ সালে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে ওই যুবতীর সঙ্গে। সেটা নিয়ে রবীন্দ্রর স্ত্রীর সঙ্গে সাংসারিক অশান্তি শুরু হয়। তখন রবীন্দ্রবাবু পরিবার ছেড়ে হরিদেবপুরে ফ্ল্যাট কেনেন। তবে পরিবারকে টাকা পাঠাতেন তিনি। ২০২০ সালে এন্টালির ছাতুবাবু লেনের বাসিন্দা শগুফতার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন রবীন্দ্র চৌরাসিয়া।
আর কী জানা যাচ্ছে? তদন্ত যত এগিয়েছে তত একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সুইসাইড নোট বলছে, রবীন্দ্রকুমার চৌরাসিয়া রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন শাগুফতা পারভিনকে। কিন্তু সময় এগোতে থাকলে রবীন্দ্রবাবু বুঝতে পারেন এই শাগুফতার সঙ্গে বহু পুরুষের সম্পর্ক রয়েছে। শগুফতার মোবাইল ঘেঁটে রবীন্দ্র ওই সম্পর্কগুলির বিষয়ে নিশ্চিত হন। আর যে কোনও একটা রাস্তা বেছে নিতে বলেন। এক, রবীন্দ্রবাবুকে নিয়েই চলতে হবে। আর কোনও সম্পর্ক নয়। দুই, রবীন্দ্রবাবুকে ছেড়ে অন্য সম্পর্ক নিয়ে থাকতে পারে শাগুফতা।
তারপর ঠিক কী হল? এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। আর শাগুফতা হুমকি দিতে শুরু করেন রবীন্দ্রকে। এমনকী পুলিশের সামনে সব ফাঁস করে দেবেন বলেও হুমকি দেওয়া হয়। অশান্তির পর শগুফতা এন্টালিতে তাঁর মায়ের কাছে চলে আসেন। বুধবার রাতে আবার ফিরে যান হরিদেবপুরে। বুধবার রাতেও তাঁদের ফ্ল্যাট থেকে গোলমালের শব্দ শোনা যায়। ভোরে সেই শব্দ থেমে গেলেও কেউ বেঁচে ছিলেন না। যার তদন্ত চলছে।