পশ্চিমবঙ্গে গত লোকসভা নির্বাচনে ১৮ টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। তবে বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই ভাঙন দেখা দিয়েছে বিজেপিতে। একের পর এক বিজেপি নেতারা দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এখনও দিচ্ছেন। আর এরই মধ্যে দলের অন্তর্কলহ এখন চরমে রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনের প্রায় অর্ধেক সময় পেরিয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে আসন ধরে রাখাটা বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। সমীক্ষা বলছে, যোগ্য নেতারা এখনই দলের হাল না ধরলে পশ্চিমবঙ্গে আগামী লোকসভা নির্বাচনে দুটির বেশি আসন বিজেপির পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়। এই দুটি আসন হল দার্জিলিং এবং বনগাঁ।
প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে প্রত্যাশামতো ভালো ফল না হওয়ার পরে ভাঙন দেখা দেয় বিজেপিতে। অনেক তৃণমূল নেতা বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু, বিধানসভার ফল প্রকাশের পরে একে একে বহু নেতা যেমন তৃণমূলে ফিরেছেন, তেমনি বিজেপির নেতারাও তৃণমূলে যোগ দেন। সেইসঙ্গে, রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব পরিবর্তনের কারণে দ্বন্দ্ব শুরু হয় বিজেপির মধ্যে। তা এখনও চলছে। লোকসভা ভোটে এখনও দু'বছর বাকি রয়েছে। তবে তার আগে বিজেপির বর্তমান অবস্থা রাজ্যে কেমন রয়েছে তা নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছেন বিজেপি এবং সংঘ পরিবার। সেই সমীক্ষাতেই এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। যদিও তিনি এখন সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেননি। তবে সেখানে ভোট হলে বিজেপির জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছে বিজেপি নেতৃত্ব। আসানসোলের বিজেপি সাংসদ ছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। কিন্তু, তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়ে এখন বিধায়ক। বর্তমানে তৃণমূলে টিকিটের সেখানে সাংসদ হিসেবে জয়ী হয়েছেন শত্রুঘ্ন সিনহা।
এই অবস্থায় বাকি আসনগুলি ধরে রাখা বিজেপির পক্ষে খুবই মুশকিল বলে মনে করছে নেতারা। বিজেপির এক নেতার কথায়, বর্তমান সময়ে দল যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে তাতে লোকসভা ভোটে বিজেপির জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে দার্জিলিং এবং বনগাঁ আসনটি। দার্জিলিঙে গোর্খাদের সমর্থন থাকায় সেখানে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর বনগাঁতে মতুয়াদের সমর্থক থাকায় বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মতুয়ারাও বিজেপির উপর ক্ষুব্ধ। কারণ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে মোদী সরকারের গড়িমসির ফলে মোটেই সন্তুষ্ট নন মতুয়াদের একাংশ। ফলে এই আসনটি ধরে রাখাও বিজেপির পক্ষে বেশ কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই অবস্থায় বুথ স্তর থেকে সংগঠনকে আরও মজবুত করতে চাইছে বিজেপি। দলের মধ্যে অন্তর্কলহ মেটাতেও তৎপর হয়েছে নেতৃত্ব। শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যোগ্যদের ফিরিয়ে এনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে হবে। তাছাড়া ভোট-পরবর্তী হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত বিজেপি কর্মীদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। এছাড়াও, গতকাল থেকে বিজেপির বুথ শক্তিকরণ অভিযান শুরু হয়েছে। রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুকে নিয়ে আগামী ৬ মাস ধারাবাহিকভাবে পথে নেমে আন্দোলন করার পরামর্শ দিয়েছেন জেপি নাড্ডা।