যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুতে এখন রাজ্য–রাজনীতি তোলপাড় অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌচাকে ঢিল মারতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের ছাত্র সংগঠন (টিএমসিপি) ক্যাম্পাসে একটা শক্ত ভিত তৈরি করতে চাইছে। তাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে লড়াকু নেত্রীকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নতুন ইউনিটের সভাপতি করা হয়েছে। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ কাঁপানো বক্তব্য রাখা রাজন্যা হালদার যাদবপুরের মাটিতেও তীব্র আন্দোলন করে দেখিয়েছেন। এবার দায়িত্ব পেয়েই সোনারপুরের লড়াকু তরুণী পরিকল্পনা করতে শুরু করেছেন। আগামী দিনে কোন সাংগঠনিক কাজগুলি তিনি করবেন। নতুন প্রজন্মের রাজন্যার উপর আস্থা রেখেছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার ক্ষমতায় আসার পর বেশিরভাগ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদেরই রাজনৈতিক জমি শক্ত হয়ে ওঠে। অধরা থেকে গিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে একচেটিয়া দাপট বামপন্থী এসএফআই, এআইএসএ, আরএসএফ সংগঠনগুলি। এখানে কেমন করে টিএমসিপি’র ভিত শক্ত হবে? উঠছে প্রশ্ন। এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমে রাজন্যা বলেন, ‘কাজটা কঠিন হলেও আমি পিছিয়ে আসার মেয়ে নই। বাম–অতিবামদের বাড়বাড়ন্ত কমানোই লক্ষ্য। যারা গ্রেফতার হল শুক্রবার তারা থানায় ঢোকার সময় সংবাদমাধ্যমের দিকে কু–ইঙ্গিত করেছে। ঔদ্ধত্য কোন পর্যায়ে পৌঁছলে এটা করা যায়। এঁদের অত্যাচারের হাত থেকে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের রক্ষা করতেই হবে। সংগঠন বিস্তারের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছাত্র মৃত্যুর বিচার। তার জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।’
অন্যদিকে রাজন্যা কী করবেন? এই নিয়ে সবাই জানতে চান। ক্যাম্পাসের ভিতরে করণীয় কাজের খানিকটা আভাস দিয়ে রাজন্যা বলেন, ‘আমরা দু’একটা দিন দেখব। যদি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি না লাগান, তাহলে আমরাই তা লাগানোর ব্যবস্থা করব। ছাত্রীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন নেই। সেটাও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বসাতে হবে। না পারলে আমরা বসিয়ে দেব। শৌচালয় কার্যত নরক। কর্তৃপক্ষ যদি পরিষ্কার না করেন তাহলে সেটাও বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে আমরা করে দেব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেও আমাদের সংগঠন ছিল। কিন্তু কিছু সমস্যাও ছিল। কিন্তু এবার ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা আমাদের সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে।’
আরও পড়ুন: ‘কেন্দ্রীয় সরকার কি আপনাদের কোনও ক্ষমতা দিয়েছে?’ গরুপাচার মামলায় ইডিকে ভর্ৎসনা আদালতের
আর কী জানা যাচ্ছে? রাজন্যা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করেন। তার পর এখন অন্যত্র পিএইচডি করছেন। একই সঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএড পড়ছেন। সোনারপুর এলাকায় থাকেন। ছাত্র রাজনীতিতে সুবক্তা হিসাবে নজর কেড়েছেন। এমনকী লড়াকু মেজাজ দেখিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে আন্দোলন করে। ২০১৪ সালে ‘হোক কলরব’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েই ঘটেছিল। আর এখন ছাত্র মৃত্যু থেকে তৈরি হওয়া গণক্ষোভ বাম ও অতিবামেদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে বলেই মনে করছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাই রাজন্যা হালদার সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘আমরা এই ঔদ্ধত্য, কুৎসিত সংস্কৃতি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব। দিদি আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, সেটাই আমাদের কাছে বড় শক্তি।’