বিদায়ী খাদ্য মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকার রেশন দুর্নীতির অভিযোগ আনল বিজেপি। জ্যোতিপ্রিয়র বিরুদ্ধে পাঁচ বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকার রেশন দুর্নীতির অভিযোগ তুলল বিজেপি। রবিবার আরটিআইয়ের নথি পেশ করে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগ এনেছেন বিজেপির বাংলার পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়।
পাল্টা অভিযোগ অস্বীকার করে বিজয়বর্গিয়র বিরুদ্ধে আইনি নোটিসের হুঁশিয়েরি দিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।বিদায়ী খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে চাল সংগ্রহ ও বণ্টনে কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন বিজয়বর্গীয়। এ প্রসঙ্গে কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘ কৃষকরা ধানের উৎপাদন মূল্য পাননি। কারণ, দুর্নীতিতে জড়িত রয়ছেন মমতা ঘনিষ্ঠ এই মন্ত্রী।
এদিন বাইপাসের ধারে একটি হোটেলে সাংবাদিক বৈঠক করেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তিনি বলেন ‘ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলো।
সেক্ষেত্রে কতজন কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়েছে, তার কোনও তালিকাই নেই রাজ্যের কাছে। আমরা জানতে চেয়েছিলাম, কৃষকদের কত টাকার চেক দেওয়া হয়েছে এবং কত টাকা নগদ দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়েছে। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধি যোজনা জন্য তালিকা দিতে পারেনি রাজ্য সরকার। এই শস্য গরিবদের কাছে পৌঁছয়নি।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে এই রেশন দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন কৈলাস। তিনি বলেন, ‘ ত্রিপলের পয়সা হলেও সেই টাকা গরিবদের কাছে পৌঁছয়নি। এমনকী, মোদীজি চাল পাঠিয়েছিলেন, সেটাও এখানকার গরিবদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। এটা শুধু পাঁচ বছরে তথ্য বললাম। মন্ত্রী নিজেও এতে জড়িত। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় তাঁর সম্পত্তির হিসাব রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামায় উল্লেখ রয়েছে, ২০০৬ সালে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল পাঁচ লক্ষ টাকা। ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫ লক্ষ টাকা। ২০১৬ সালে ১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা ও ২০২১ সালের ৬ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা।’
কৈলাসের আরও অভিযোগ তুলে বলেন, ‘এই সম্পত্তির আরও কয়েকগুণ বেশি সম্পত্তি রয়েছে, যা হলফনামায় প্রকাশ করা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘ বাংলাদেশেও তাঁর সম্পত্তি রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। যে ৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে, সেই টাকা গরীব কৃষকদের। এমনকী, গরু পাচারের সঙ্গেও তিনি যুক্ত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নোটবন্দির সময় জ্যোতিপ্রিয় ও তাঁর মেয়ের ব্যাংকে জমা দেওয়া টাকার হিসাবও পেয়েছি।’ কৈলাসের দাবি, নোটবন্দির সময় ৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন মণিদীপা মল্লিক। ওর মেয়ে প্রিয়দর্শিনী মল্লিকের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ৩ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা। টিউশন থেকে এই টাকা এসেছে বলে দাবি করেছেন তিনি। অথচ সপ্তম বেতন কমিশনের জন্য রাস্তায় বসেছেন শিক্ষকরা। ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতির তদন্ত হবে বলে ঘোষণা করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক।
এপ্রসঙ্গে বিদায়ী খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে বলেন, ‘ বিজয়বর্গীয়রা জানেন না—কীভাবে রাজ্য সরকার কাজ করে। আমাদের ন্যাশনাল ইলেক্ট্রনিক ফাণ্ড ট্রাস্ফারের মাধ্যমে
ধান কেনা বেচা হয়। নগদ টাকায় কেনা হয় না। আমরা সরাসরি কিনি না। সমস্তকিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাধ্যেমে কাজ হয়। গতবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে প্লাস্টিকের প্যাকেটে মুড়ে কৃষকদের চেক দিতে হয়েছিল। উপরন্তু এফসিআই নগদ টাকায় ধান কেনে। ওদের আধিকারিকরা দুর্নীতিতে যুক্ত। আমি ৫—৭ দিনের মধ্যে ওনার বিরুদ্ধে আইনজীবীর চিঠি পাঠাব।’ আসলে ওরা ভেবেছে উত্তর ২৪ পরগনায় ২৯টা আসন পাবে। কিন্তু মতুয়া ভোট ভেঙে গিয়েছে। তাই এখন আর এসব করে লাভ নেই। কারণ, এর আগেও ইডি, সিবিআই দিয়ে তদন্ত করেও কোনও লাভ হয়নি।’