মানিকতলার একটি বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত মামলায় তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘দরকার পড়লে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছ থেকে বুলডোজার ভাড়া করতে হবে। কলকাতার হাইকোর্টের নির্দেশমতো সেই বেআইনি নির্মাণ ভেঙেছে পুরসভা। তবে যোগী আদিত্যনাথের বুলডোজারে নয় পুরসভার যন্ত্রেই ভাঙা হয়েছে ওই বেআইনি নির্মাণ।
আরও পড়ুন: যোগীর কাছ থেকে কয়েকটা বুলডোজার ভাড়া করুন, পুরসভাকে পরামর্শ জাস্টিস গাঙ্গুলির
উল্লেখ্য, কলকাতা পুরসভা গত ৪ অগাস্ট রাত ১০টা নাগাদ মানিকতলার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই বেআইনি নির্মাণ ভেঙেছে। সোমবার সেই মামলায় পুরসভার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এবং বিল্ডিং বিভাগের ডিজির তরফে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত বুলডোজার দিয়েই কোনও নির্মাণ ভাঙা সহজ। কিন্তু এক্ষেত্রে রাস্তা সংকীর্ণ ও সরু হওয়ায় বুলডোজার ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। তাই পুরসভার যন্ত্রতেই ভাঙা হয়েছে বেআইনি নির্মাণ। প্রসঙ্গত, এই মামলায় বিচারপতি আগে মন্তব্য করেছিলেন, ‘দরকার পড়লে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের থেকে কিছু বুলডোজার ভাড়া করতে হবে।’
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ওই বেআইনি নির্মাণটি তৈরি হয়েছিল ২০১৮ সালে কলকাতা পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ১২১/৪জেড/২ মানিকতলা মেন রোডে। এই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রতিবেশী রানু পাল। তাঁর অভিযোগ ছিল, তাঁর জমি দখল করে বেআইনি নির্মাণ করেছেন তাঁর প্রতিবেশী। তিনি পাশের ভবনে যাতায়াতের জন্য বেআইনিভাবে পথ নির্মাণ করেছিলেন। এ নিয়ে বারবার পুরসভার কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও সমাধান না হওয়ায় শেষে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। ২০১৮ সালে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে যখন আবেদন জানিয়েছিলেন সেই সময় মামলাটি উঠেছিল বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে। সেই সময় বিচারপতি বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন মামলাটির নিষ্পত্তি হয়ে গেল উপরে আবার বেআইনি নির্মাণ শুরু করেন প্রতিবেশী। এ নিয়ে মানিকতলা থানায় অভিযোগ জানান রানু পাল। কিন্তু তারপরেও কাজ না হওয়ায় ফের তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। ২০২১ সালে তিনি নতুন করে মামলা দায়ের করেন। সেই সময় মামলা উঠে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে।
সেই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে গত ২৬ জুন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় গোটা ভবনটি ভাঙাএ নির্দেশ দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয় আদালতের নির্দেশও অন্যান্য করায় অভিযুক্তকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছিল আদালত। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন আবেদনকারী। তবে ডিভিশন বেঞ্চও সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশকে বহাল রাখে। এরপরে মানিকতলা থানাকে মামলায় যুক্ত করে আদালত। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তখন বলেছিলেন, ‘ভন্ডামী বরদাস্ত করা যাবে না। প্রয়োজন পড়লে যোগী আদিত্যনাথের কাছে কিছু বুলডোজার ভাড়া করুন।’ এরপর বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন বিচারপতি। শেষে সেই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলা হয়। আগামী বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।