লোকসভা নির্বাচনের পর তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল ড্যামেজ কন্ট্রোল করার জন্য। কিন্তু দেখা গেল কন্ট্রোল তো করা গেলই না। বরং ড্যামেজ হয়েই চলেছে। এমনকী তাঁর উপরেই অনেকেই ক্ষুব্ধ। হ্যাঁ, তিনি ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলত্যাগ হয়েই চলেছে। তা ঠেকানো যাচ্ছে না কৌশল করে। শুভেন্দু অধিকারী, শীলভদ্র দত্ত–সহ দলত্যাগীদের তালিকা ক্রমশই লম্বা হচ্ছে৷ শুভেন্দু অধিকারীর পথে জোড়াফুল ছেড়ে পদ্মের পথে শাসকদলের একের পর এক বিধায়ক, সাংসদ, নেতা৷ এই পরিস্থিতিতে কালীঘাটের বাড়িতে কোর কমিটির বৈঠক করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে এবার সরাসরি ভোটকুশলী পিকের সঙ্গেও কথাবার্তা হয় তৃণমূল সুপ্রিমোর৷
এই ঘরের ভাঙন নিয়ে সরাসরি তৃণমূল নেত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রশান্ত কিশোর৷ সূত্রের খবর, এদিন কালীঘাটের কোর কমিটির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পিকের কাছে জানতে চান এই পরিস্থিতির কারণ কী? সমস্যাটা ঠিক কোথায়? তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘কেনও এইসব হচ্ছে? আপনার কী মনে হয়!’ উত্তরে প্রশান্ত কিশোর নাকি বলেছেন, ‘বিজেপি বিভিন্নভাবে এজেন্সির ভয় দেখাচ্ছে। অনেকে লোভে পড়েও এইসব করছে।’ উত্তর শুনে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘দেখুন, বাকিরা যাঁরা আছেন, তাঁদের বোঝান৷’ অর্থাৎ ভাঙন আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
কিন্তু তাহলে ভোটকুশলী রেখে লাভ কী হল? উঠছে প্রশ্ন। আগেও বিভিন্ন বিধায়ক, নেতা পিকের সংস্থা আইপ্যাকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷ দলত্যাগী বিক্ষুব্ধ বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত বলেন, ‘একটা কর্পোরেট সংস্থা বলে দিচ্ছে কী করব৷ এভাবে কাজ করা যায় না৷ আইপ্যাকের ছেলেরা এসে বলছে, এটা করুন এটা করবেন না ভোটের কথা আপনাকে চিন্তা করতে হবে না৷ ওটা আমাদের কাজ৷ জিতিয়ে আনার জন্য তো আমরা টাকা পেয়েছি৷ এভাবে কি ভোট হয়?’ শীলভদ্র এই কথোপকথন প্রকাশ্যে আনলেও অনেকে তা আনেননি। কিন্তু ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে দল ছেড়েছেন। সুতরাং এখন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্য পাবে কিনা তা নিয়ে চর্চা তুঙ্গে।
অন্যদিকে সূত্রের খবর, কোর কমিটির বৈঠকে নেত্রী বলেছেন, ‘কে গেল, কে থাকল তাতে দলের কিছু আসে যায় না৷ তৃণমূল মোটেই উদ্বিগ্ন নয়৷ দল অনেক বড়। যাঁরা যাচ্ছে তাঁরা দলের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ভালো হচ্ছে ওঁরা নিজেরাই ছেড়ে দিচ্ছে। পাতা ঝরে গেলে নতুন পাতা তৈরি হবে।’ সামনে বিধানসভার অগ্নিপরীক্ষা৷ তার জন্য শীর্ষ নেতৃত্বকে সমস্ত শক্তি দিয়ে নির্বাচনী ময়দানে ঝাঁপানোর পরামর্শ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের জেতা নিয়ে কোনও আশঙ্কা নেই৷ এক ইঞ্চি জমি ছাড়া যাবে না৷ তৃণমূলের হাতিয়ার উন্নয়ন৷ উন্নয়নকে অস্ত্র করে ঝাঁপাতে হবে৷’