মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া বার্তার পর চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি। তারইমধ্যে শুভেন্দু অধিকারীর পর তৃণমূল কংগ্রেসের 'অস্বস্তি' বাড়ালেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি 'অরাজনৈতিক' অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে নাম না করেই তৃণমূল এবং দলের নেতৃত্বকে কার্যত তুলোধনা করলেন। আক্ষেপ করলেন, স্তাবকতা করলেই বেশি নম্বর পাওয়া যায়। সেজন্যই তাঁর নম্বর কম।
শনিবার হরিদেবপুর এলাকায় একটি বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে যান রাজীব। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার খুব খারাপ লাগে, যখন যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছি, যখন দক্ষতার সঙ্গে কোথাও কাজ করার চেষ্টা করেছি, জানি না, কোথায় কী হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে পিছনের সারিতে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। যে মুখগুলোকে মানুষ পছন্দ করে না, যে মুখগুলোকে মানুষ দেখতে চায় না, যাঁদের সম্বন্ধে মানুষের বিরাট অভিযোগ আছে, যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত, যাঁরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে পারেন না, যাঁরা সত্যি কথা বলতে পারেন না, আজকে তাঁরা শুধু স্তাবক বলে সামনের সারিতে আনা হচ্ছে। এগুলো সত্যিকারের এক-এক সময়ের যন্ত্রণা। কী যন্ত্রণা বলে বোঝাতে পারব না হয়ত।’
এমনিতেই ‘কাজের লোক’ হিসেবে পরিচিত রাজীব। জনমানসে যথেষ্ট প্রভাবও আছে। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের মতে, তাঁকে হাওড়া জেলার রাজনীতিতে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হয়। সেই ঘটনায় অরূপ রায়ের প্রত্যক্ষ মদত আছে বলে একটি অংশ থেকে অভিযোগ। ‘ভালো কাজ’ করলেও রাজীব দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সেভাবে নেক-নজরেও থাকেননি বলে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য। তা নিয়ে একাধিকবার দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। সরব হয়েছিলেন আমফান পরবর্তী 'দুর্নীতি' নিয়েও। ফলে তাঁকে ঘিরে জল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে।
তারইমধ্যে বনমন্ত্রী দাবি করেন, মানুষকে যাঁরা বোকা ভাবেন, তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করেন।রাজীব বলেন, ‘এখন হচ্ছে, স্তাবকতার যুগ। অর্থাৎ আমি ভালো বললে ভালো বলতে হবে। আমি খারাপ বললে খারাপ বলতে হবে। অর্থাৎ শুধুমাত্র হ্যাঁ’তে হ্যাঁ, না'তে না - এটুকু বলতে পারলেই তুমি ভালো। নয়তো তুমি খারাপ। আজ আমরা এরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এগুলি মানুষ পছন্দ করেন না।'
যদিও রাজীবের মন্তব্যে 'ক্ষোভ'-এর কিছু দেখছেন না পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘রাজীব ভালো ছেলে। খুব ঘুরে ঘুরে কাজ করছে। রাজীব আমাদের ছোটো ভাই। পরের প্রজন্মের যে নেতারা আছেন, তাঁদের মধ্যে রাজীব আছেন।’ একইসঙ্গে তিনি জানান, দলে থাকতে থাকতে ‘ডিপ্রেশন’ তৈরি হয়। কিন্তু কোনও সমস্যা নেই।
ফিরহাদের সাফাইয়ে অবশ্য পাত্তা দিতে রাজি নয় বিরোধী শিবির। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় জানান, তৃণমূলের প্রকৃত ছবি তুলে ধরেছেন রাজীব। যাঁরা তৃণমল তৈরি করেছিলেন, তাঁদের এটা অন্তরের কথা। অন্যদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী জানান, তৃণমূলে যাঁরা থাকতে চাইছেন না, তাঁদের জন্য সকাল-বিকেল-রাত কংগ্রেসের দরজা খোলা আছে।