হাতে আর তিনদিন বাকি। শহর জুড়ে পুজো পুজো পরিবেশ তৈরি হয়ে গিয়েছে। আজ তৃতীয়া। করোনা আবহে বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো হতে চলেছে। আছে আতঙ্ক, আছে আশঙ্কা, আছে বেকারত্ব এবং আছে সৃ্ষ্টির আনন্দ। আর এই সৃষ্টির আনন্দে মেতে উঠেছে ১৪ বছরের কিশোরী স্নেহা মণ্ডল। তার এখন খাওয়া–ঘুমানোর সময় নেই। কারণ সে ১.৫ ফিটের দুর্গাপ্রতিমা গড়ে তুলছে।
বন্ধুরা তাতে হাত লাগিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ভদ্রকালী গ্রামে থাকে স্নেহা। এই কাজ এখন শেষ হয়ে এসেছে। বলা যেতে পারে শেষ তুলির টান দেওয়া চলছে। স্নেহা বলছে, ‘আমরা সবাই উত্তেজিত। কারণ আমরা এই প্রতিমা নিয়ে প্রথমবার কলকাতায় যাচ্ছি। গাড়ি ঠিক হয়ে গিয়েছে। সকালে সেখানে পৌঁছে সন্ধেবেলা ফিরে আসব।’
কলকাতার মানুষদের চোখ বড় পুজোমণ্ডপ ও প্রতিমার দিকে থাকলেও দক্ষিণ কলকাতার এক সরু গলিতে কিছু গরিব শিশুরা মিলে দুর্গাপুজো করে, যা অনেকেরই অজানা। এটা শহরের সবচেয়ে ছোট পুজো বলা যেতে পারে। কিন্তু এখানে আছে এক কৈশরের অনাবিল আনন্দ। এখানের ছেলে মেয়েরা খুব কষ্ট করেই পুজোটা করছে। কারণ এদের বাবারা পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করত। করোনার জেরে এখন বেকার। ঘূর্ণিঝড় আমফান তাদের সর্বস্ব গ্রাস করেছে। এখানের ছেলেমেয়েদের অনেক পরিবার পতিতাপল্লীর সঙ্গে জড়িত। বস্তি অঞ্চল হলেও পুজো তারাও পালন করে।
স্নেহা মণ্ডলের বাবাও পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে উত্তরপ্রদেশের বৃন্দাবনে কাঠের মিস্ত্রির কাজ করতেন। ১৫ হাজার টাকা বেতন পেতেন। এখন তাঁর কাজ নেই, বেকার। আর তার মেয়েই তৈরি করেছে দুর্গা প্রতিমা। এখানে আর একটি মেয়ের কথা জানা যাচ্ছে। যার নাম তিষা পুরকাইত। মাত্র আট বছর বয়সের তিষা জানাচ্ছে, সে নানারকমের ফুল তৈরি করছে। আর সঙ্গে কিছু আলোর তৈরি করেছে। পুজোমণ্ডপে সেগুলি লাগানো হবে।
এখানের মণ্ডপ যে ছেলে মেয়েরা তৈরি করছে তাদের মায়েরা সোনাগাছির পতিতাপল্লীর সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এই ছেলে মেয়েরাই মাস্ক, খালি স্যানিটাইজারের বোতল এবং ফেস শিল্ড দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করছে সচেতন করে তোলার জন্য। এখানেই স্বগুণা মুখার্জি ও জয়দীপ মুখার্জির স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন কাজ করে। তাঁরাই জেলা আর কলকাতার শৈল্পিক ভাবের মেলবন্ধন ঘটাচ্ছেন। এখানেই আসবে স্নেহার তৈরি প্রতিমা। আর মণ্ডপ তো ওরা তৈরি করেই রাখছে। এভাবেই ঘটে যাবে শৈল্পিক ভাব–বিনিময়। এই বিষয়ে স্বগুণা মুখার্জি বলেন, ‘আমরা জেলার এবং শহরের গরীব মানুষদের কিছু সাহায্য করতে চাই। এখানে সব ধরনের মানুষই আছে। আমফানে সর্বস্ব হারানো থেকে পতিতাবৃত্তির সঙ্গে জড়িতরাও। পুজোয় তাদের ছেলেমেয়েদের আনন্দ দেওয়াটাই মূল লক্ষ্য।’