করোনাভাইরাস তার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে। তাতে দেশের অবস্থা যেমন শোচনীয় হয়ে উঠেছে তেমন রাজ্যেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তার মধ্যে অক্সিজেনের অসুবিধা, ওষুধের সমস্যা নিয়ে কেন্দ্র–রাজ্যের তরজা তুঙ্গে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এলো প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। বিদ্যা যে বিনয়ী করে তা ফের প্রমাণ করল ছাত্রছাত্রীরা করোনায় আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে। হাওড়া ডোমজুড়ের সুমন ঘোষ ও রহড়ার শ্রেয়াস ঘোষাল কৃতজ্ঞ এই ছাত্রছাত্রীদের কাছে।
কেন কৃতজ্ঞ? জানা গিয়েছে, এই ছাত্রছাত্রীরা একটি হেল্পডেস্ক তৈরি করেছে। আর সুমন ঘোষ তাঁর মায়ের জন্য হন্যে হয়ে অক্সিজেন খুঁজছিলেন। নানান জায়গায় চেষ্টা করছিলেন অক্সিজেন জোগাড় করার জন্য। এই পরিস্থিতিতে যোগাযোগ ঘটে গেল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। তারপর সেখান থেকে অক্সিজেনের সাহায্য পেয়ে আপাতত সুস্থ সুমনের মা। একইরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল শ্রেয়াস ঘোষালের। তিনি তাঁর আত্মীয়র জন্য হাসপাতালে বেড খুঁজছিলেন। কারণ তাঁর আত্মীয় করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
এই পরিস্থিতিতে সেই ব্যবস্থাও করে দিয়েছিল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের তৈরি করা হেল্পডেস্ক। এই বিষয়ে সুমন ঘোষ বলেন, ‘সময়মতো সাহায্য পেয়েছিলাম বলে মাকে সুস্থ করা গেল। আমার মায়ের অক্সিজেন নেমে গিয়েছিল ৮৭–তে। এই হেল্পডেস্ক আমাকে সাহায্য করেছিল। মা এখনও দুর্বল। তবে বিপদ কেটে গিয়েছে। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ এই হেল্পডেস্কের কাছে।’
আইসোলেশনে থাকা রোগীদেরও কখনও কখনও বাড়াবাড়ি অবস্থা হচ্ছে। যেমন হয়েছিল শ্রেয়াস ঘোষালের আত্মীয়ের। তিনি বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে ছিলেন আমার আত্মীয়। তথন অনেকটা কাশির ওষুধ খেয়ে পরিস্থিতি জটিল আকার নিয়েছিল। সুগার হাই হয়ে গিয়েছিল। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার দরকার হয়ে পড়ে। তখনই আমার এক বন্ধু এই হেল্পডেস্কের নম্বর দেয়। সেখানে ফোন করতেই যেন মুশকিন আসান হয়ে গেল। এখন আমার আত্মীয় সেরে উঠছে। আমি কৃতজ্ঞ।’
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের এই হেল্পডেস্ক অনেকের উপকার করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে তারা ১৫৬ জনের হেল্পডেস্ক তৈরি করেছে। যারা হাসপাতালের বেড থেকে অক্সিজেন, অ্যাম্বুলেন্স সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। তথ্য দিয়ে সাহায্য করছে। তাদের ফেসবুক পেজ রয়েছে। যেখানে গিয়ে সাহায্য চাইলে মিলবে উপযুক্ত সেবা ও সাহায্য। এই গ্রুপের প্রধান নীলোৎপল সরকার। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আরও ছাত্রছাত্রী। তিনি বলেন, ‘এখানে যুক্ত ছাত্রছাত্রীরা মূলত এসএফআই করে। এমনকী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের এসএফআই ছা্ত্রছাত্রী এবং ডিওয়াইএফআই সদস্যরা আমাদের সাহায্য করছে। তাঁরা সবাই ছড়িয়ে রয়েছেন দমদম, রাজারহাট, ব্যারাকপুর, কল্যাণী, বারাসাত এবং বিধাননগরে।’