কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ বাংলার দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে বহুবার কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের অন্যান্য নেতারা। অনেক ক্ষেত্রেই কেন্দ্রের কাছ থেকে টাকা না মেলার জন্য প্রকল্পের কাজে সমস্যায় পড়তে হয় রাজ্যকে। মাঝপথে আটকে যায় অনেক প্রকল্প। তাছাড়া পঞ্চায়েতগুলিকেও সমস্যায় পড়তে হয়। তাই গ্রাম বাংলার উন্নয়নের স্বার্থে এবার পঞ্চায়েতগুলিকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করতে চায় রাজ্য সরকার। আর এই অবস্থায় পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরে অর্থাৎ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের নিজস্ব আয় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে রাজ্য সরকার। কীভাবে এই আয় বাড়ানো যাবে তার জন্য নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করা হবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প, এবার আবেদন করা যাবে এই ২টি প্রকল্পেরও
পঞ্চায়েত ভোট পর্ব মিটে। এবার বোর্ড গঠনের পালা। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, ১৬ অগস্টের মধ্যে বোর্ড গঠন করতে হবে। বোর্ড গঠন হলেই তিনটি স্তরের সমস্ত জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানানো হবে। তার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হবে। নবান্ন সূত্রের খবর, পঞ্চায়েতের বোর্ডগুলি যাতে নিজস্ব আয় বাড়াতে পারে তার জন্য জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। গত শুক্রবার পঞ্চায়েত দফতরের আধিকারিক, জেলা শাসক, এসডিও এবং বিডিওদের নিয়ে এ বিষয়ে একটি পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সেই বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি পঞ্চায়েতকে নিজস্ব আয় বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। এছাড়া পঞ্চায়েত দফতরের অধীনে চলা সমস্ত কাজের একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনও শেয়ার করেছেন মুখ্য সচিব। সেখানে জানানো হয়েছে, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পঞ্চায়েতগুলিকে নিজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার।
নিজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য সে ক্ষেত্রে মূলত রাজস্ব আদায়ের উপরই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে এই তিনটি স্তরের অধীনে থাকা দোকান, বাজার, ঘাট, গুদাম ঘর প্রভৃতি জায়গা থেকে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে বলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বকেয়া থাকলে তা আদায় করতে হবে। কোনওভাবে বকেয়া রাখা যাবে না। পুরসভার মতো পঞ্চায়েত এলাকাতেও অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স, বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমোদনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠলে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজস্ব আদায়ের জন্য অনলাইনে পরিষেবা দেওয়ার উপরও গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে পঞ্চায়েত দফতরকে। রাজ্যের লক্ষ্য রয়েছে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পঞ্চায়েতগুলির নিজস্ব আয় বাড়ানো।
প্রসঙ্গত, বাংলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা না দেওয়ার অভিযোগ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। সেক্ষেত্রে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা কম পাচ্ছে বাংলা। এছাড়া আবাস যোজনার ৮ হাজার কোটি টাকাও আটকে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতগুলিকে নিজস্ব আয় বাড়ানোর উপর জোর দিতে বলেছে নবান্ন।