কেন এই একুশে জুলাই পালন হয়? কেমন করে তার সূত্রপাত? নতুন প্রজন্মের ছেলে– মেয়েদের কাছে এটাই এখন বড় প্রশ্ন। তাঁরা আজকের জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রীকে চেনেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না কঠিন লড়াইয়ের সেই দিনগুলি তিনি কেমন করে মোকাবিলা করেছিলেন। তখন রাজ্য–রাজনীতিতে তিনি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেননি। সুবক্তা ও যুব কংগ্রেস নেত্রী হিসাবেই কিছু মানুষ সেদিন চিনত। আর দোর্দণ্ডপ্রতাপ বামফ্রন্ট সরকারের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার সাহস তেমন কেউ দেখাতেন না। যা তিন দশক আগে দেখিয়েছিলেন এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং এখন তৃতীয়বারের বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। রক্তক্ষয়ী ২১ জুলাই দিনটিকে আজও পালন করেন বাংলার নিজের মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পালন করেন ‘শহিদ দিবস’।
ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন? সালটা ১৯৯৩। তারিখ ২১ জুলাই। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম ছিল জ্যোতি বসু। অভিযোগ উঠত, বামফ্রন্ট সরকার দেদার ছাপ্পা, রাহাজানি করে ক্ষমতা দখল করত। কারণ তখন সচিত্র পরিচয়পত্র বা ভোটার এপিক কার্ড ছিল না। আর এই এপিক কার্ডের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন নির্বাচন কমিশনের অফিস ছিল রাইটার্স বিল্ডিংয়ে। তাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সৌগত রায়, মদন মিত্ররা সেদিন মমতার পাশেই ছিলেন। গোটা কলকাতা সেদিন প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। এই আন্দোলন দেখে ভয় পেয়ে যায় বামফ্রন্ট সরকার।
তারপর ঠিক কী ঘটেছিল? চারিদিক দিয়ে মিছিল ঘিরে ফেলছিল মহাকরণকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে তখন কংগ্রেস কর্মী–সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। যা শক্তিশালী সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। মিছিল এগোতেই পথ আটকায় জ্যোতি বসুর সরকারের পুলিশ। শুরু হয়ে যায় ধুন্ধুমার কাণ্ড। রণক্ষেত্র চেহারা নেয় মহানগরী। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তখন গুলি করতে আসে এক পুলিশের কর্তা। কিন্তু তখন রুখে দাঁড়ান তাঁর এক নিরাপত্তাকর্মী। তবে তাঁকে লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন মমতা। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মিছিলের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশ।
আরও পড়ুন: তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের সতর্কবার্তা দিলেন নওশাদ, একুশে জুলাইয়ে কেমন সাবধানতা?
কেন এই একুশে জুলাই? পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় ১৩ জন কংগ্রেস কর্মী। রক্তে লাল হয়ে যায় কলকাতার রাজপথ। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় বিশেষ তাপ– উত্তাপ ছিল না তৎকালিন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর। তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘মহাকরণ দখলে আসছিল বলেই গুলি চালিয়েছে পুলিশ।’ এই মন্তব্যে তোলপাড় হয়ে যায় গোটা রাজ্য। আর লড়াই জারি রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকের যে ভোটার কার্ড নিয়ে মানুষজন ভোট দিতে যান সেটা সম্ভব হয়েছিল তাঁর আন্দোলনের জেরেই। আর তখন থেকেই কাউন্টডাউন শুরু হয়ে বামফ্রন্ট সরকারের। তখন কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৮ সালে তৈরি করেন তৃণমূল কংগ্রেস। সেদিনই কংগ্রেস ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে আসেন শোভনদেব, মদন, জ্যোতিপ্রিয়রা। তখন থেকেই পালন করা হয় একুশে জুলাই।