প্রথমে ট্রেন্ট বোল্ট, যুজবেন্দ্র চাহালদের দাপট। তার পর রিয়ান পরাগের ঝড়। সোমবার আর সাগরের তীরে মুম্বইকে কাঁদিয়ে ছাড়ল রাজস্থান রয়্যালস। সেই সঙ্গে এই নিয়ে ২০২৪ আইপিএল মরশুমে টানা তিনটি ম্যাচে জয় পেল সঞ্জু স্যামসনের দল। আর হারের হ্যাটট্রিক করল হার্দিক পান্ডিয়ার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। তাও নিজেদের হোম গ্রাউন্ডে একেবারে ল্যাজেগোবরে হয়ে হারল মুম্বই।
রাজস্থানের বোলারদের দাপটে প্রথমে একেবারে নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ব্যাটারদের। ওয়াংখেড়েতে এদিন প্রথমে ধ্বংসলীল শুরু করেছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট। তাঁকে সঙ্গত করেন নান্দ্রে বার্গার। পরে মুম্বইয়ের টুটি চেপে ধরেন যুজবেন্দ্র চাহাল। রাজস্থানের তিন বোলারের দাপটে সোমবার ঘরের মাঠে নির্দিষ্ট ২০ ওভারে ৯ উইকেটে মাত্র ১২৫ রানে শেষ হয়ে যায় মুম্বইয়ের ইনিংস। আর ১২৬ রান তাড়া করতে নেমে দাপটের সঙ্গে রাজস্থানকে ব্যাট হাতে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন রিয়ান পরাগ।
টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাজস্থান অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। ঘরের চেনা ২২ গজে প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েও, কাজে লাগাতে ব্যর্থ মুম্বইয়ের ব্যাটাররা। ইনিংসের শুরু থেকেই নির্দিষ্ট ব্য়বধানে উইকেট হারাতে শুরু করে মুম্বই। প্রথম ওভারেই ট্রেন্ট বোল্টের বিষাক্ত ছোঁবলে গোল্ডেন ডাক করে ফেরেন রোহিত শর্মা এবং নমন ধীর। প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে পরপর দুই ব্যাটারকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেয়েছিলেন বোল্ট। এর পর তৃতীয় ওভারে বল করতে এসে ফের বোল্ট বিস্ফোরণ। কিন্তু হ্যাটট্রিকের সুযোগ তিনি মিস করেন। তবে হ্যাটট্রিক না হলেও, এই ওভারে ফের গোল্ডেন ডাকে ফেরান ডেওয়াল্ড ব্রেভিসকেও।
আরও পড়ুন: রোহিতকে নিয়ে লেখা পোস্টার ওয়াংখেড়েতে ঢোকার আগেই ছুড়ে ফেলা হল, ভাইরাল সেই ভিডিয়ো
বোল্টের দাপটের রেশ শেষ হওয়ার আগেই, নান্দ্রে বার্গার ফেরান ইশান কিষানকে। ১৪ বলে ১৬ করে সাজঘরে ফেরেন ইশানও। চার ওভার শেষে ২০ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে মারাত্মক চাপে পড়ে গিয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। তার পর পঞ্চম উইকেটে কিছুটা হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া এবং তিলক বর্মা মিলে। কিন্তু সেই পার্টনারশিপও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। তাও হার্দিক এবং তিলক মিলে স্কোরবোর্ডে ৫৬ রান যোগ করেন। কিন্তু ২১ বলে ৩২ করে আউট হয়ে যান হার্দিক। তাঁকে ফেরান যুজবেন্দ্র চাহাল। এর পর মুম্বইয়ের ব্যাটাররা এসেছেন, আর সাজঘরে ফিরে গিয়েছেন। তিলক বর্মা তাও ২৯ বলে ৩২ করেছিলেন। কিন্তু তাঁকেও আউট করেন যুজি। বাকিরা কেউ ২০ রানের গণ্ডিই টপকাতে পারেননি। তৃতীয় সর্বোচ্চ রান টিম ডেভিডের। তিনি ২৪ বলে ১৭ করেন।
রাজস্থানের সফলতম বোলার যুজবেন্দ্র চাহাল। তিনি মাত্র ১১ রান খরচ করে তুলে নেন ৩ উইকেট। বোল্ট ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। নান্দ্রে ৩২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। ৩০ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন আবেশ খান।
এর পর রান তাড়া করতে নেমে রাজস্থানকে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। যদি ইনিংসের শুরুতেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল। তিনি এখনও পর্যন্ত এবার আইপিএলে নজর কাড়তে পারেননি। প্রথম ওভারেই কোয়েনা মাফাকার বলে যশস্বী সাজঘরে ফেরায় কিছুটা আশা জেগেছিল। তখন রাজস্থানের রান মাত্র ১০। ৬ বলে ১০ করেই আউট হন যশস্বী। এদিন ব্যর্থ হন রাজস্থানের অধিনায়ক নিজেও। সঞ্জু স্যামসন তিনে ব্যাট করতে নেমে ১০ বলে ১২ করে সাজঘরে ফেরেন। তাঁকে বোল্ড করেন আকাশ মাধওয়াল। জোস বাটলারও ১৬ বলে ১৩ করে আউট হন। তাঁকেও ফেরান আকাশ। ৪৮ রানে যখন রাজস্থানেক তিন উইকেট পড়ে গিয়েছিল, তখন মুম্বইয়ের আকাশে কিছুটা আশার আলো দেখা গিয়েছিল। কিন্তু রিয়ান পরাগ সব আশায় জল ঢেলে দেন।
এদিন রবিন্দ্রন অশ্বিন ১৬ বলে ১৬ করে আউট হন। অশ্বিনেরও উইকেট নেন আকাশ মাধওয়াল। কিন্তু উইকেটে টিকে থাকেন রিয়ান পরাগ। ৫টি চার এবং তিনটি ছক্কার হাত ধরে তিনি ৩৯ বলে ৫৪ করে অপরাজিত থাকেন। তিনি দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। প্রসঙ্গত, এই মরশুমে দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন রিয়ান। পরপর দুই ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করলেন তিনি। প্রথম ম্যাচে ৭ রানের জন্য অর্ধশতরান মিস করেছিলেন। রিয়ানের সঙ্গে এদিন ৬ বলে ৮ করে অপরাজিত থাকেন শুভম দুবেও। ১৫.৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়েই ১২৭ রান করে ফেলে রাজস্থান। ২৭ বল বাকি থাকতেই ৬ উইকেটে তারা ম্যাচ জিতে নেয়।
মুম্বইয়ের হয়ে এদিন সবচেয়ে সফল বোলার আকাশ মাধওয়াল। ৪ ওভার বোলিং করে ২০ রান দিয়ে তিনি ৩ উইকেট তুলে নেন। কিন্তু তাঁর এই বোলিং কাজে এল না। এছাড়া ২ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন মাফাকা।