রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু আর বিরাট কোহলি অনেকটা সমার্থক শব্দ। যেমন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সঙ্গে সচিন তেন্ডুলকর জড়িয়ে আছেন। তেমনই বেঙ্গালুরুর সঙ্গে নিজেকে লেপ্টে রেখেছেন কোহলি সেই ২০০৮ সাল থেকে। দেশের এই মূহূর্তের সেরা ব্যাটার যে তিনি। সেটা একান্তই গত বিশ্বকাপের পারফরমেন্সের নিরিখে বলা যায়। যখনই দল বেকায়দায়, তখনই চেনা ঢংয়ে কোমরে রুমাল গুঁজে নেমে পড়েছেন ব্যাট হাতে। সেটা দেশের চেনা নীল বা সাদা জার্সি হোক, অথবা আরসিবির লাল জার্সি। এত বছরে কোনও দল থেকে প্রস্তাব আসেনি? ঠিক কোন কারণে তিনি থেকে গেছেন বেঙ্গালুরুতে, দলের এত ব্যর্থতার পরও? সচিন তেন্ডুলকর, মহেন্দ্র সিং ধোনি, যুবরাজ সিং, গৌতম গম্ভীর, সকলের নামের পাশে বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গে জ্বলজ্বল করছে আইপিএল ট্রফি জয়ের তকমা। তিনিও তো পারতেন অন্যত্র যেতে। কেন গেলেন না? সম্প্রতি এইসব বিষয় নিয়েই একটি পডকাস্টে মুখ খুলেছেন বিরাট কোহলি।
সেই পডকাস্টে বিরাট কোহলিকে প্রশ্ন করা হয় আইপিএলে একই দলে তাঁর বছরের পর বছর থাকা নিয়ে। বিরাট উত্তরে জানান, বহু দলের তরফ থেকেই তাঁর কাছে একাধিকবার প্রস্তাব এসেছে অন্য দলে যোগদানের কিন্তু আরসিবি তাঁকে যতটা ভালোবাসে তিনিও আরসিবিকে ততটাই ভালোবাসেন। সেই কারণেই এই ফ্র্যাঞ্চাইজি ছেড়ে যেতে পারেননি। আরও পড়ুন-IPL 2024- চন্দ্রকান্তকে নিয়ে সোচ্চার প্রাক্তন শিষ্যরা, সতর্ক প্রতিক্রিয়া গম্ভীরের
বিরাট মুখে শোনা যায়,' সত্যি কথা বলতে আমারও মনে হয়েছে অন্য দল কত সাফল্য পায়। আমায় অন্য় দল থেকে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল নিলামে ওঠার জন্য যেনতেন প্রকারেণ। কিন্তু এরপর আমি ভেবে দেখি, দিনের শেষে মানুষ একটা নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তারপর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই সব মিলিয়ে যায়। সেখানে কেউ এসে বলে না ‘ও বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন’ বা ‘আইপিএল চ্যাম্পিয়ন’। যদি তুমি ভালো মানুষ হও সকলে ভালোবাসবে, খারাপ মানুষ হলে সকলে এড়িয়ে চলবে। আমার কাছে আরসিবির প্রতি আমার ভালোবাসা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেউ এসে বলবে আমায় আইপিএল জিতেছ, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ সেই ভালো লাগা পাঁচ মিনিট থাকতে পারে। কিন্তু পরের মূহূর্তে অন্য কোনও কারণে জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠতে পারে। তাই এটা আমার কাছে জীবনে একটা অংশ মাত্র, জীবনের শেষ নয়। আর এটাই আমার জীবনের দর্শন, আমি এভাবেই চলি'।
স্ত্রী অনুষ্কা ছাড়া তৃতীয় ব্যক্তি তাঁকে নিয়ে কি আলোচনা করছে, সেটা নিয়ে মোটেই ভাবিত নন তিনি, স্পষ্টতই জানাচ্ছেন বিরাট। কেরিয়ারের শুরুতে তাঁকে আরসিবি কতটা সাহায্য করেছে সেটা বলতে গিয়ে কোহলি বলেন,' প্রথম তিন বছর আমায় অনেক সুযোগ দিয়েছে আমার দল। অনেকের কাছে সুযোগ থাকলেও তাঁরা আমার পাশে দাঁড়ায়নি। আমার ওপর ভরসা করতে পারেনি। ২০১৮ সালের ইংল্যান্ড সিরিজের আগে পর্যন্ত এগুলো মাথায় চলত,যে আমি সব জায়গায় ভালো খেলছিলাম ইংল্যান্ড বাদে। কিন্তু এরপর বুঝতে পারি, জীবনে কিছু তো পাওয়া না পাওয়া থাকবেই। সেগুলোকে এত গুরুত্ব দিলে হবে না। আর সত্যি কথা বলতে অনুষ্কা ছাড়া আর কোনও তৃতীয় ব্যক্তির পরামর্শ বা বক্তব্য আমার কাছে গুরুত্ব রাখে না। আমরা দুজন চেষ্টা করি সব সময় নিজেদের মধ্যে সঠিক আলোচনা করতে'।
বিরাটের বক্তব্যের কারণ খঁজে বের করলে দেখা যাবে সত্যি তিন বছর সময় লেগেছিল আইপিএলে তাঁর পারফরমেন্স গ্রাফ উর্ধ্বমুখী হতে।
২০০৮ সালে ১৩ ম্যাচে বিরাট করেছিলেন ১৬৫ রান
২০০৯ সালে ১৬ ম্যাচে বিরাট করেছিলেন ২৪৬ রান
২০১০ সালে ১৬ ম্যাচে বিরাট করেন ৩০৭ রান
এরপর এতগুলো বছরে আর কখনও এক আইপিএলে ৩০০ রানের কম করেননি বিরাট কোহলি। চলতি আইপিএলেও ৩০০ রানের গণ্ডি ইতিমধ্যে টপকে ফেলেছেন কোহলি।