টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার মতো চোট নেই। ফিজিওর দেওয়া ফিট সার্টিফিকেট পৌঁছে গিয়েছিল নির্বাচকদের হাতে। দলের ব্যর্থতার মাঝেও শেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে নজর কাড়েন। সুতরাং, না ফিটনেস সংক্রান্ত সমস্যা, না পারফর্ম্যান্সগত, তাঁর বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পাওয়ার কারণ যে অন্য কিছু, সেটা নিজের মুখে জানিয়ে দিলেন তামিম ইকবাল।
নিউজিল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ শেষ হওয়ার পরেই বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ১৫ জনের স্কোয়াডে বিশেষ চমক নেই। শুধু নজর কাড়ে তামিম ইকবালের অনুপস্থিতি। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেটমহলেও আলোড়ন পড়ে যায় কিউয়ি সিরিজে মাঠে নামা সত্ত্বেও তামিম বিশ্বকাপের দলে না থাকায়।
বাদ পড়ার কারণ হিসেবে ওদেশের সংবাদ মাধ্যমে তামিমের ফিটনেস নিয়ে সমস্যার খবর ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টা নাকি এরকম যে, তামিম বিশ্বকাপে ৫টির বেশি ম্যাচ খেলতে পারবেন না। তাই তাঁকে দলে রাখেননি জাতীয় নির্বাচকরা। এমন খবরের মধ্যে যে বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই, সেটা স্পষ্ট করতেই আসরে নামেন তামিম নিজে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ ভিডিয়ো পোস্ট করে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ তারকা সামনে নিয়ে আসেন পর্দার আড়ালের যাবতীয় ঘটনা।
ঘটনা পরম্পরায় তামিমের বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার কারণ দেখে নেওয়া যাক:-
১. তামিম স্বীকার করে নেন যে, তাঁর শরীরে ব্যাথা রয়েছে। তবে কোনও চোট নেই। আনফিট নন তিনি। কয়েকদিনের রিহ্যাবেই পুরোপুরি তরজাজা হয়ে উঠবেন। বিশ্বকাপের আগে বেশ কিছুদিন সময় রয়েছে। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ পর্যন্ত বিশ্রাম নিলেই কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি কখনও বলেননি মাত্র ৫টি ম্যাচে মাঠে নামতে পারবেন। বরং লিগের ৯টি ম্যাচই খেলার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন তিনি। বিশেষ করে বিশ্বকাপে প্রায় প্রতিটি ম্যাচের পরেই কয়েক দিনের বিশ্রাম পাওয়া যাবে। তাই খেলতে বিশেষ অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
২. ফিজিওর রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ করা রয়েছে যে, তামিম বিশ্বকাপের দলে নির্বাচিত হওয়ার জন্য ফিট। কেউ চ্যালেঞ্জ করলে তামিম ফিজিওর রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনতেও রাজি বলে দাবি করেন ভিডিয়ো বার্তায়।
৩. তাহলে বাদ কেন তামিম? এক্ষেত্রে বোর্ডের নোংরা রাজনীতিকেই দায়ী করলেন তারকা ক্রিকেটার। তামিম বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে আসছেন, এই বিষয়ে কার্যত সবাই নিশ্চিত ছিলেন। হঠাৎ করেই বিসিবির এক শীর্ষ কর্তা ফোন করে তামিমকে বলেন যে, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তিনি যেন মাঠে না নামেন। যেহেতু ততদিনে পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠবেন, তাই সেই প্রস্তাবে রাজি হননি তামিম।
৪. পরক্ষণেই সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্তা তামিমকে প্রস্তাব দেন যে, আফগান ম্যাচে যদি তামিম মাঠে নামেন, তাহলে তাঁকে নীচের দিকে ব্যাট করানো হবে। তামিম সেই প্রস্তাব শুনে রেগে যান। কেননা ১৭ বছরের কেরিয়ারে তিনি কখনও ৩-৪ নম্বরেও ব্যাট করেননি। বরাবর ওপেন করেছেন। তাছাড়া শেষ ম্যাচে রান পাওয়ায় তাঁর আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে।
৫. তামিম উপলব্ধি করেন যে, তাঁর সামনে পরিস্থিতি কঠিন করার চেষ্টা চলছে। পদে পদে এমন বাধা সৃষ্টির চেষ্টা দেখেই তামিম রাগের সঙ্গে বলেন যে, এমন নোংরামি করা হলে তাঁকে বিশ্বকাপে না পাঠানোই ভালো।
সুতরাং, তামিমের কথা যদি যথার্থ হয়, তাহলে এটা বলতে অসুবিধা নেই যে, রীতিমতো চক্রান্ত করেই তামিমকে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের ১৫ জনের স্কোয়াড:-
শাকিব আল হাসান (ক্যাপ্টেন), তানজিদ হাসান তামিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ, তৌহিদ হৃদয়, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান শাকিব।