‘আরে আউট হয়ে যা! বাবরের ব্যাটিংটা দেখব’......নির্বিষ ম্যাচে বাংলাদেশকে দুরমুশ করল পাকিস্তান। ২০৫ তাড়া করতে গিয়ে প্রথম উইকেটের জুড়ির জমাট ব্যাটিংয়েই কার্যত ম্যাচের দফারফা। সাতটার সময়ই ধীরে ধীরে পাতলা হতে শুরু করল জনতার ঢল। বাবর এলেন, দেখলেন তবে জয় করতে পারলেন না। জয় অবশ্যই পেল পাকিস্তান, সেমিফাইনালের ক্ষীণ আশা জিইয়ে রেখে। তবে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে আউট হয়ে সস্তায় সাজঘরে ফিরলেন তিনি। ব্যাস, তখনই বাকি জনতা বাড়িমুখী। শেষপর্যন্ত সাড়ে আটটায় খেলা শেষ। তবে শেষ মুহূর্ত অবধি চার, ছক্কা ও উইকেটের জন্য গলা ফাটিয়ে গেলেন ইডেনের দর্শকরা। কী বাংলাদেশ, কী পাকিস্তান, দুই দেশের জন্যই ছিল সোচ্চার সমর্থন। আসলে সমর্থন ছিল ভালো ক্রিকেটের জন্য, যেটা বাংলাদেশের দৌলতে খুব কমই দেখা গেল।
প্রথম থেকেই বাংলাদেশের কোমর ভেঙে দেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। তখনও সিটে ঠিক করে বসেননি দর্শকরা, তার আগেই শুরু আয়ারাম গয়ারাম। তবে বলের জোরের দৌলতে দর্শকদের ভালোবাসার সিংহভাগ পেলেন হ্যারিস রউফ। শেষের দিকে ওয়াসিম জুনিয়রের ইয়র্কারগুলিও শিহরন জাগালো মানুষের মনে। এক একটা উইকেট ভাঙছে, আনন্দে ফেটে পড়ছে জনতা। সঙ্গে মাঝেই মাঝেই বাবর, রিজওয়ানদের জন্য জয়ধ্বনি। মাঠে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি সমর্থকদের অক্সিজেন জোগালেন মাহমুদুল্লাহ, লিটন, শাকিবরা। শাকিব লেখা জামা পরে উপস্থিত বাংলাদেশিদের তখন একটাই দোয়া, অন্তত যেন আড়াইশো হয়, পড়শিদের সামনে যেন মানটা বাঁচে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। ক্রমশই তলিয়ে গেল শাকিবরা। তাও মেহদি, হৃদয়ের ছক্কায় উদ্বেল হল ইডেন। ২০৫ টার্গেট দেখে আশাভঙ্গ হলেও তখনও ম্যাচ জমতে পারে, এই বিশ্বাস তখনও ছিল চড়া দামে টিকিট কাটা মানুষের মধ্যে।
কিন্তু বাংলাদেশের বোলারদের নির্বিষ ডেলিভারি দেখেই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল জনতার। প্রথম উইকেটেই ১২৮, ম্যাচের নিয়তি তখনই নিশ্চিত। শুধু যে আউট হল না, তা নয়, আউট হওয়ার মতো বলও কেউ করলেন না। বাবরের সঙ্গে টেক্কা দিতে না পারলেও শাকিবের ক্রেজ নেহাত কম ছিল না। কিন্তু তিনিও নেহাতই নিরামিষ। যেন হাল ছেড়ে দিয়েছেন। এই মানসিকতাটাই সবচেয়ে খারাপ লাগল সন্ধ্যার ইডেনের। ক্রমশই নিস্তেজ হয়ে পড়া জনতাকে চাঙ্গা করতে নানান কারিকুরি করলেন স্টেডিয়ামের ডিজে। মোবাইলের ব্যাকলাইট দিয়ে জনতাকে পোজ দিতে বলা সহ নানান সময় প্লেয়ারদেরকে চিয়ার করানো, চেষ্টার অন্ত ছিল না। বারবার বাজল দিল দিল পাকিস্তান, আমদাবাদে যে গান না চালানোয় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মিকি আর্থার। শুধু ডিজে যখন বললেন, যারা যারা পাকিস্তানকে সমর্থন করতে এসেছেন, তারা চিয়ার করুন, কিঞ্চিৎ বিলম্বের পর উঠল আওয়াজ। আসলে এগারোটা বাঙালির দাদাগিরি দেখতেই প্রায় ৭০ শতাংশ ভরেছিল মঙ্গলবারের ইডেন, কিন্তু টাইগাররা পরিণত হলেন কাগুজে বাঘে। এর থেকে পাকিস্তান ব্যাট করলেই ভালো হত, অন্তত ৪০০ করত, দেখে মজা হত, গজগজ করতে করতে ইডেন ছাড়ল জনতা। আর কী বাবর খেলবেন ক্রিকেটের নন্দনকাননে। রাজনৈতিক পরিবেশ যা, নিশ্চিত করে বলা যায় না। পাক ক্রিকেটের যুবরাজ এদিন হয়তো মন ভরাতে পারলেন না, কিন্তু যোগ্য শিল্পীকে সম্মান জানাতে যে ইডেন জানে, দেশকালের ভেদাভেদ না দেখে বাবরকে কুর্নিশ জানিয়ে দেখিয়ে দিল কলকাতা। দিল দিল ইডেন দিনের শেষে!