২০২৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে ট্র্যাভিস হেডের সেঞ্চুরি ভারতকে কোণঠাঁসা করে দিয়েছিল। এবার বিশ্বকাপে প্রথম কয়েকটি ম্যাচে খেলতে পারেননি। চোটের জন্য বিশ্বকাপে দলে ফিরতে পারবেন কিনা, তাও নিশ্চিত ছিলেন না। সেই ট্র্যাভিস হেডই বিশ্বকাপ ফাইনালে ৯৫ বলে সেঞ্চুরি হাঁকালেন। ওপেন করতে নেমে ১২০ বলে ১৩৭ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে যখন তিনি আউট হয়ে সাজঘরে ফিরছেন, তখন ট্রফির থেকে অজিরা মাত্র ২ রান দূরে। আর তাঁর এই স্কোর বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা সেরা ইনিংসগুলির মধ্যে একটি। তিনি রিকি পন্টিং এবং অ্যাডাম গিলক্রিস্টের পরে তৃতীয় অস্ট্রেলিয়ান, যিনি ফাইনালের মঞ্চে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াকে তাদের রেকর্ড ষষ্ঠ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করেছে।
কিন্তু তিনি যখন ম্যাচের সেরা প্লেয়ারের নিতে যাচ্ছিলেন, তখন কিন্তু আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে প্রায় এক লক্ষ দর্শক এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্ত জানতেন যে, এই জয় শুধুমাত্র হেডের ব্যাটিংয়ের কারণে আসেনি। তিনি ফিল্ডিংয়েও নজর কেড়েছিলেন। তাঁর একটি ক্যাচই ম্যাচের রং বদলে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন: অসম্মানজনক- বিশ্বকাপ ট্রফির উপর পা তুলে বিশ্রাম নিচ্ছেন মিচেল মার্শ, ধুইয়ে দিল নেটপাড়া
ভারতীয় ইনিংসের দশম ওভারের প্রথম দিকে হেড পিছনের দিকে দৌড়ে দুর্দান্ত একটি ক্যাচ নিয়েছিলেন। যার ফলে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে প্যাভিলিয়নে ফেরত যেতে হয়। আর ম্যাচের মোড় সেখান থেকেই ঘুরে যায়। তখন ধারাভাষ্যে ইয়ান স্মিথ বলেন, ‘এটা আমার জন্য ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।’ রোহিত আউট হওয়ার পরেও বিরাট কোহলির উইকেট সহ ভারতের হাতে তখনও ৮ উইকেট এবং প্রায় ৪০ ওভার বাকি ছিল। তার পর তো পুরো অজি ইনিংসও বাকি ছিল। সেই সময়ে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট বাছাই করাটা বেশ কঠিন কাজ। কবে ইয়ান স্মিথের দাবি যে একশো শতাংশ সত্যি ছিল, সেটা ম্যাচের পর বেশ টের পাওয়া গিয়েছে।
এই বিশ্বকাপের প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই রোহিত তাণ্ডব চালিয়েছেন। তিনি নতুন বলে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বড় অস্ত্র জোশ হেজেলউডকে পিটিয়ে ছাতু করেছিলেন। পাওয়ারপ্লে-র শেষ ওভারে ব্যাক-টু-ব্যাক ডেলিভারিতে একটি ছক্কা এবং একটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। কিন্তু তার পরেই ম্যাক্সির বলেই সাজঘরে ফিরতে হয় রোহিতকে। ঠিকঠাক ব্যাটে-বলে না হওয়ায় রোহিতের শটে ক্যাচ ওঠে। এবং সেই বল লক্ষ্য করে কভারে দাঁড়িয়ে থাকা হেড পিছনের দিকে দৌড়তে শুরু করেন। তিনি বলের দিকে চোখ রেখেছিলেন, তার পর নিজের হাত বাড়িয়ে ডাইভ দিয়ে অত্যাশ্চর্য ক্যাচটি নিয়েছিলেন। এটি ১৯৮৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভিভ রিচার্ডসের সেই বিখ্যাত কপিল দেবের ক্যাচের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে সেই মুহূর্তে অজিদের বিশাল বড় অক্সিজেন দিয়েছিল।
রোহিত ৩১ বলে ৪৭ রানে সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। তাঁর ইনিংসে ছিল তিনটি ছক্কা ও চারটি চার। তিন রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি মিস করেছিলেন রোহিত। ভারত অধিনায়ক সাজঘরে ফিরে যাওয়ার পর, পরবর্তী ৪০ ওভারে মাত্র চারটি বাউন্ডারি মারতে পেরেছিল টিম ইন্ডিয়া। এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ৫০ ওভারের একটি সম্পূর্ণ ইনিংসে এটি সর্বনিম্ন বাউন্ডারি। ম্যাচের পর ট্র্যাভিস হেড বলেন, ‘তিনি (রোহিত শর্মা) সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ভাগা মানুষ।’
সঙ্গে হেড যোগ করেছেন, ‘এর (ফিল্ডিং) জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। সত্যি বলতে, ও আউট না হলে, আমি সেঞ্চুরি করতে পারতাম কিনা কে জানে! বিশ্বকাপ ফাইনালে যারা সেঞ্চুরি করেছেন, তাদের তালিকায় থাকাটা খুবই বিশেষ। সেই ক্যাচ ধরে রাখাটা দারুণ বিষয় ছিল।’