রাত পোহালেই দ্বিতীয় দফার লোকসভা নির্বাচন শুরু হবে। আর তার আগেই রাজ্য– রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গেল। বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে দেবাশিস ধরের বিকল্প প্রার্থী দিল বিজেপি। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় নিজে দেবতনু ভট্টাচার্যের নামে বিকল্প প্রার্থীকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সম্প্রতি জেলায় প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেবাশিসের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভাগীয় তদন্তের কথা বলেছেন।
কিন্তু কেন এমন করা হল? রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় দল। তাই বীরভূম কেন্দ্রে দ্বিতীয় প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘অনেক কলকাঠি নাড়া হচ্ছে। তাই দ্বিতীয় প্রার্থী আজ মনোনয়ন দিলেন।’ কোচবিহারের বিতর্কিত জেলা পুলিশ সুপার চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেও রাজ্য সরকার তাঁকে ছাড়পত্র দেয়নি। যদিও দেবাশিস ধর জানান, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই তাঁকে ছাড়পত্র দিয়েছেন। তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সূত্রের খবর, দেবাশিস ধর ইস্তফা দিলেও নবান্ন এখনও তাঁকে রিলিজ দেয়নি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহারে শীতলকুচি এলাকায় গুলি চলাকালীন সেখানে পুলিশ সুপার ছিলেন দেবাশিস। তারপর সেখান থেকে তাঁকে সরিয়ে দেয় নবান্ন। কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে রাখা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ভোটের আগে হেল্পলাইন নম্বর চালু করল বিজেপি, উত্তরবঙ্গকে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ নজর
তাহলে কি বিজেপি ভয় পেয়ে গেল? এই আসনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শতাব্দী রায়। এই আসন থেকে বারবার জিতে এসেছেন। তাছাড়া হেভিওয়েট প্রার্থী। সেখানে দেবাশিস ধর আইপিএস হলেও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। সুতরাং কেষ্ট গড়ে বিজেপির জেতা বেশ কঠিন বিষয়। যদিও বিষয়টি স্বীকার না করে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বিকল্প প্রার্থী করা দলের একটা রণকৌশল।’ পুলিশের চাকরি থেকে দেবাশিস ধর ইস্তফা দেন। তবে তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করেনি নবান্ন। যদিও এই অবস্থাতেই বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করে। তারপরই বুঝতে পারে অঙ্ক খুব কঠিন। তাই এবার বিকল্প প্রার্থী সামনে আনল বিজেপি।
এছাড়া আগামী ১৩ মে চতুর্থ দফায় বীরভূমে নির্বাচন রয়েছে। তার আগে বীরভূমে এই বিজেপির দুই প্রার্থীকে নিয়ে জোর চর্চা চলছে। জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘এখনও সারা রাজ্যের সর্বত্র মনোনয়ন জমা দেওয়া শেষ হয়নি। এক এক কেন্দ্রের এক এক রকম রণকৌশল থাকে। এটা তারই অঙ্গ। অন্যরকম খেলা।’ দেবতনু ভট্টাচার্য ৯০–এর দশকে আরএসএসের প্রচারক হিসাবে সিউড়িতে আসেন। তিনি বিজেপির চারটি লোকসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত ক্লাস্টার ইনচার্জ হিসাবে দায়িত্বে আছেন। বীরভূম, বোলপুর, কাটোয়া এবং বর্ধমান লোকসভা কেন্দ্রের তিনি দলের পক্ষে পর্যবেক্ষক আছেন। তাই তাঁকে প্রার্থী করে নিশ্চিন্তে থাকতে চাইছে গেরুয়া শিবির। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘ভরসা না থাকায় তাঁরা প্রার্থী দিয়েছে। এটা তাঁদের বিষয়।’