লোকসভা নির্বাচনের মরশুমে এখন সমানে সমানে টক্কর চলছে। কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ আচরণ এবং বঞ্চনার কথা বারবারই একাধিক সভা–সমাবেশ থেকে তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডানলপ–জেসপ কারখানা কেন্দ্রের উদাসীনতায় আজ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। এই প্রচারে বিজেপির চাপ বেড়ে গিয়েছে। তাই এবার পাল্টা পদক্ষেপ করল বিজেপি। দলের প্রার্থীকে জেতালে দুর্গাপুরে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা চালুর ব্যবস্থা করবে বিজেপি বলে সোমবার দুর্গাপুরের সভা থেকে আশ্বাস দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অথচ দুর্গাপুরের পাশের কেন্দ্র আসানসোলে বন্ধ কারখানা বা খনি নিয়ে স্পষ্ট কোনও বার্তা নেই বিজেপির প্রচারে। তাই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
যখন বিজেপির হাতে ১৮টি সাংসদ ছিল এবং বাবুল সুপ্রিয় ক্যাবিনেট মন্ত্রী ছিলেন ভারী শিল্পের তখনও বিজেপি আসানসোল শিল্পনগরীর প্রতি নজর দেয়নি বলে অভিযোগ। আর তাই বিজেপি ছেড়ে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী হন। কুলটি ও বার্নপুর ইস্কো কারখানা, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানা, একাধিক কয়লাখনি বহু বছরের পুরনো। হিন্দুস্তান কেব্লস এবং সেনর্যালে সাইকেল কারখানা, চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস কারখানা ছাড়াও ইসিএলের সাতটি খনি বন্ধ রয়েছে। এগুলি নিয়ে কিছু বলছে না বিজেপি। কুলটির ইস্কো কারখানা কোনওরকমে চলছে। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, একাধিক কারখানা এবং প্রায় ১৬টি খনি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: ‘আমি চাই ডানলপ, জেসপ খুলুক’, কেন্দ্রীয় সরকারকে দুষে জোর সওয়াল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এখন শর্ত রাখা হচ্ছে ভোট দিয়ে বিজেপি প্রার্থীকে জেতালে সমস্ত কারখানা খোলার ব্যবস্থা করা হবে। অথচ আসানসোলের পিনক্লিংটন কাচ কারখানা, রানিগঞ্জের বল্লভপুর কাগজকল, জেকে নগরের অ্যালুমিনিয়াম এবং আসানসোলের ধাদকা নীল কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। তার জেরে বেকার সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। তার জেরে শ্রমিক–কর্মীরা কাজ হারিয়েছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প–খনি সংস্থা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ায় বেকারত্ব বেড়েছে শিল্পাঞ্চলে। এখানে বিজেপি প্রার্থী করেছে সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়াকে। বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিং বলেন, ‘এখন আমি এলাকায় ঘুরছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যা জানছি।’
আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী বর্ধমান–দুর্গাপুরের সাংসদ ছিলেন। সেখানে কটা শিল্প ও কলকারখানা খুলেছেন? নতুন কী স্থাপন করেছেন? এমন সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে শিল্পাঞ্চল জুড়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী সবাই বন্ধ কারখানা খোলার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তাতে শেষ পর্যন্ত লাভ হয় না বলে দাবি করেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, ‘যে সরকার রাষ্ট্রের সম্পদ বিক্রি করে দেয়, তারা কারখানা খুলবে!’ আর সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীর দাবি, ‘বিজেপি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।’