ত্রিপুরায় নতুন আঞ্চলিক দল তিপ্রা মোথা। আর তার নেতা প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মা। এখন তাঁরা সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। আজ, বৃহস্পতিবার সেখানে ভোট গণনা চলছে। ত্রিপুরার রাজপরিবারের সন্তান প্রদ্যোৎকে এখানে ‘বুবাগ্রা’ বলে ডাকেন ত্রিপুরাবাসী। এই বুবাগ্রা শব্দের অর্থ হল— ত্রিপুরার রাজা। প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মা ত্রিপুরার জনজাতির আদরের রাজা। তাই তাঁকে ‘বুবাগ্রা’ বলেন আদিবাসীরা। তিনি আবার তিপ্রা মোথা’র মাথা। এই দলটি এখন সবার ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
সত্তরের দশকের শুরুতে ত্রিপুরায় ছিল কংগ্রেস রাজত্ব। তখন নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ে কমিউনিস্ট পার্টির উপরই ভরসা রাখত ত্রিপুরার জনজাতির মানুষজন। ১৯৭২ সালে ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যে দুই–তৃতীয়াংশ আসন জিতলেও, জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার দুই–তৃতীয়াংশ আসনই গিয়েছিল সিপিএমের কাছে। ১৯৭৭ সালে জনজাতি এলাকার মানুষজনকে নিয়ে তৈরি হয় নতুন সংগঠন। ত্রিপুরা উপজাতি যুব সমিতি বা টিইউজেএস। এই জনজাতির সমর্থনে ভর করেই ত্রিপুরায় ক্ষমতায় আসে বামেরা। তারপর ১৯৮৯ সালে জোট বদল হয়। বামেদের ছেড়ে কংগ্রেসের হাত ধরে টিইউজেএস। তখন কংগ্রেস ফেরে ক্ষমতায়।
এই ইতিহাস থেকে দেখা যাচ্ছে, ত্রিপুরার নির্বাচনে সবসময়ই নির্ণায়ক ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করেছে ত্রিপুরার জনজাতির ভোট। তাই ত্রিপুরা ট্রাইবাল অটোনোমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল (টিটিএডিসি) তৈরি হয়। ১৯৭৯ সালে এই জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে তৈরি হয় কাউন্সিল। যার নিয়ন্ত্রণে পড়ে যায় ত্রিপুরার দুই তৃতীয়াংশ এলাকা। তবে ২০০১ সালে হারিয়ে যায় ত্রিপুরা উপজাতি যুব সমিতি। আর জন্ম নেয় জনজাতিদের দুই নতুন সংগঠন। এক, ইনডিজেনাস ন্যাশনালিস্ট পার্টি অফ তিপ্রা। দুই, ইনডিজেনাস পিপলস ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা।
এখানেই শেষ নয়। ২০১৮ সালে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন হয়। তখন বামেদের অবক্ষয়ের সূচনা হয়েছিল। চিড় ধরেছিল জনসমর্থনে। সেই সুযোগে জনজাতি সংগঠন আইপিএফটি–কে সঙ্গী করে সরকার গড়ে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হন বিপ্লব দেব। তার পর থেকেই মানুষদের সমর্থন হারাতে থাকে এই আইপিএফটি। তখন থেকেই দাবি ওঠে, গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড–এর। জনজাতিদের কথা কেউ ভাবছিল না। এদিকে জনজাতিদের মধ্যে বিজেপি বিরোধিতার বীজ রোপনে সিএএ’র মতো ইস্যু কাজ করেছিল। ঠিক তখনই সিএএ বিরোধিতায় ত্রিপুরার অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন রাজা প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মা। সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করেন। বহুদিন কংগ্রেসে থাকলেও ২০১৯ সালে দল ছেড়ে দেন। নতুন নাম নিয়ে তিনি আসেন তিপ্রা ইনডিজেনাস প্রগ্রেসিভ রিডিওনাল অ্যালায়েন্স বা তিপ্রা। জনজাতির পুরনো দাবি গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড তিনি ফের সামনে নিয়ে আসেন। আর তারপরই ত্রিপুরা ট্রাইবাল অটোনোমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল নির্বাচনে ৪৭ শতাংশ ভোট নিয়ে ১৬টি আসনে জয়লাভ করে তিপ্রা। এবার ত্রিপুরায় ৬০ বিধানসভা আসনের ২০টিই জনজাতি অধ্যুষিত। আর এই ২০টিতেই ভাল প্রভাব রয়েছে প্রদ্যোৎ কিশোরের তিপ্রা মোথা পার্টির।