শিয়রে বিধানসভা নির্বাচন। তাই একের পর এক নকশা সাজাচ্ছে শাসক–বিরোধী দু’পক্ষই। বিজেপি যেখানে বাঙালি, হিন্দু ভোট পেতে মরিয়া, সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস বাঙালি, হিন্দিভাষী, বিহারি, সংখ্যালঘু থেকে আদিবাসী—সব ভোটব্যাঙ্কই পেতে উদ্যোগী। তারইমধ্যে তৃণমূল ভবনে হিন্দিভাষী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আশ্বাস দিলেন প্রত্যেকের পাশে থাকার। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দল অংশগ্রহণ করতে চলেছে বাংলায়। তাতে তৃণমূল কংগ্রেসেরই লাভ হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
এদিকে হিন্দি ভাষা নিয়ে আলোচনা চলাকালীন আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে মমতা বলেন, ‘ওরা আমাকে কী হিন্দি শেখাবে? আমি কান ধরে ওদের হিন্দি শেখাব। বাংলার মতোই হিন্দি ভাষা শেখার অধিকার আমার আছে। উনি তো টেলিপ্রম্পটার দেখে বক্তব্য রাখেন। গুজরাতি ছাড়া কিছুই জানেন না। আমি হিন্দি পড়তেও পারি।’ তবে আক্রমণ করেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে। তাঁর বাংলা সফর প্রসঙ্গে বলেন, ‘উনি এখন বাংলায় এসে বৈঠক করছেন। তাতে কোনও লাভ হবে না। যান ঝাড়খণ্ডের কাজ করুন।’
অন্যদিকে বিজেপির দাবি, ভিন রাজ্যের আঞ্চলিক দল আসলেও বিজেপি ২০০ আসনের বেশি পাবে। যেখানে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি ৯৯ আসন অতিক্রম করতে পারবে না। এই নির্বাচনে জেডি(ইউ), আরজেডি, সমাজবাদী পার্টি, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, শিবসেনা এবং এনসিপি বাংলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইছে। তাই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি কি ঝাড়খণ্ডে গিয়ে বাঙালি ভোট চাই? আগে ঝাড়খণ্ড সামলাও। যখন কেউ ছিল না, তখন পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিলাম। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আর এখন বাংলায় এসে ভোট চাইছে! আমার খারাপ লেগেছে।’
তবে হিন্দি ভোট যাতে তৃণমূল কংগ্রেসের ঝুলিতে আসে তার জন্য হিন্দিভাষী ভোটারদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন। এমনকী হিন্দি ভাষার বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একইসঙ্গে ছটপুজোয় দু’দিন ছুটির কথাও ঘোষণা করেছেন। যদিও পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর–সহ সাতটি জেলায় প্রার্থী দেবে পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতাসীন দলটি। ঝাড়গ্রামের সার্কাস ময়দান মাঠের সভা থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কড়া আক্রমণ করলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। তিনি বলেন, ‘আদিবাসীদের এখন চাক্কিতে পেষা হচ্ছে। নতুন নতুন কানুন তৈরি হচ্ছে। তাতে আদিবাসীদের জীবন দুঃসহ হয়ে যাচ্ছে।’ এই সভা থেকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন হেমন্ত। তিনি ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সভাপতিও বটে। আর তাতেই বেজায় চটেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই জায়গা থেকে বিজেপি ভালো ভোট পেয়েছিল।
এই বিষয়ে বিজেপির সাংসদ তথা আদিবাসী এলাকার নেতা খগেন মুর্মু বলেন, ‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য। আসলে সোরেনের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া রয়েছে। তবে জেএমএম এখানে বিজেপির ভোট কাটতে পারবে না। তৃণমূল কংগ্রেস এখানে আদিবাসী এলাকার জন্য কিছুই করেনি। আর আদিবাসী মানুষরা ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। সুতরাং ভাবার কিছু নেই।’ নীতীশ কুমারের দল জেডি(ইউ) চেষ্টা করছে এখানে প্রার্থী দিয়ে বিহারী ভোট করায়ত্ত করতে। আবার এই রাজ্যে প্রার্থী দেওয়ার কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে মিম। রাজনৈতিক মহলের মতে, মুসলিম ভোট কাটতে চাইছে তারা।
একুশের বিধানসভা ভোটে ৭০–৭৫টি আসনে প্রার্থী দিতে চায় জেডিইউও। সূত্রের খবর, ভোটে লড়ার বার্তা দিয়ে ইতিমধ্যেই বাংলায় দলের কর্মীদের বার্তা দেওয়া হয়েছে খোদ নীতীশ কুমারের তরফে। ২০০৬ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়েছিল তাদের। ২০১১ সালে এককভাবে ৭১টি আসনে, এমনকী গতবার অর্থাৎ ২০১৬ সালের কংগ্রেস–সিপিএমের সঙ্গে জোট বেঁধে দুটি আসনে লড়েছিল বিহারের দলটি। রাজনৈতিক কারবারীদের মতে, বাংলার ভোটে যত বেশি দল প্রার্থী হবে, ভোট ভাগ হওয়ার সম্ভাবনাও ততই বাড়বে। সেক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রথমসারির নেতা বলেন, ‘এটা কোনও ভাবনার বিষয় নয়। এখানে লড়াই হবে তৃণমূল কংগ্রেস বনাম বিজেপির। ভিন রাজ্যের আঞ্চলিক দলগুলি প্রার্থী দিলে ক্ষতি হবে বিজেপির। ভোটাররা সরকার পরিবর্তন করতে চাইছে না।’