বাঙালিকে ‘বাংগালী’ বলে ফেসবুকে ফের ট্রোল্ড বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। বুধবার ফেসবুকে দুটি ছবি পোস্ট করেছেন তিনি। একটি ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন বিজেপি নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। এবং আর একটি ছবিতে ধরা পড়েছে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সাক্ষাতের মুহূর্ত। এবং সেই পোস্টে রুদ্রনীল লিখেছেন, ‘এই দুই বাংগালীর স্ট্রাগল, পরিশ্রম, বিচক্ষণতা, দায়িত্ববোধ ও সিদ্ধান্ত অনেক মানুষকে সাহস দেয়! নতুন ভাবে ভাবতে শেখায়!’ (অপরিবর্তিত)।
আর ‘বাঙালি’ শব্দের অবাঙালি উচ্চারণ মেনে শব্দটি নিজের পোস্টে লিখে নেট–নাগরিকদের কটাক্ষের মুখে পড়েছেন রুদ্রনীল। ছেড়ে কথা বলেননি তৃণমূল নেতা তথা তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্যও। তিনি একযোগে রুদ্রনীল ও বিজেপি–কে আক্রমণ করে কমেন্টে লিখেছেন, ‘প্রকৃত অর্থে বিজেপি–র গুণ আরোহণ করেছেন বোঝাই যাচ্ছে! ‘বাংগালী’ আবার কী? ওদের ‘বঙ্গাল’ থেকে অনুপ্রাণিত নাকি?’ জনৈক নওয়াজ শরিফের কটাক্ষ, ‘আচ্ছা বাঙালি নয়, বাংগালী ! বাহ্।’
এর আগে ভিক্টোরিয়ায় নেতাজি জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে তোলা সেলফি পোস্ট করে ফেসবুকে ট্রোলের সম্মুখীন হয়েছিলেন টলিউডের এই অভিনেতা। সেই পোস্টে তিনি প্রধানমন্ত্রীর নাম প্রথমে লিখেছিলেন ‘নরাদ্র মোদী’ এবং পরে সংশোধন করে লেখেন ‘নরেদ্র মোদী’। শেষে অবশ্য তা একেবারে সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর নামটা ঠিকই লিখেছিলেন সদ্য বিজেপি–তে যোগ দেওয়া এই নেতা।
তবে ফেসবুকে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’ যায় না। কোনও পোস্ট কেউ যদি এডিট বা সংশোধন–সংযোজন করে তবে তা দেখা যায় ‘এডিট হিস্ট্রি’তে। তাই সেই কথা রুদ্রনীলকে মনে করিয়ে তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যর আরও কটাক্ষ, ‘উহু! এডিট করতে যাবেন না। এডিট হিস্ট্রিতে আগের বারের মত দেখা যাবে আবার!’ এদিন দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে করা এই পোস্টে ইতিমধ্যে হাজারের বেশি কমেন্ট পড়ে গিয়েছে। যার অধিকাংশ কমেন্টেই রুদ্রনীলকে আক্রমণ শানিয়েছেন নেট–নাগরিকরা। পরে অবশ্য এই পোস্টটি সামান্য এডিট করে ‘বাংগালী’কে ‘বাংগালি’ করেছেন রুদ্রনীল।
উল্লেখ্য, গতকাল (১৬ ফেব্রুয়ারি) সরস্বতী পুজো উপলক্ষে অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিজেপি নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। বিজেপি–র অভিযান সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একটি বই প্রসেনজিৎকে উপহারও দেন তিনি। আর এদিন সকালেই অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করতে মুম্বইয়ে তাঁর মাড আইল্যান্ডের বাড়িতে পৌঁছন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। — এই দুই সাক্ষাতের ছবি পোস্ট করে নতুন ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন রুদ্রনীল। তাঁর কথায়, প্রসেনজিৎ, মিঠুনরা ‘বাংগালী’কে ‘নতুন ভাবে ভাবতে শেখায়’। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রুদ্রনীলের এই বক্তব্য অনেকটাই তাৎপর্যপূর্ণ।
তা হলে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবার কি বিজেপি–তে যাচ্ছেন একসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আর মিঠুন চক্রবর্তী? গতকাল থেকে সেই জল্পনাই উঠেছে চরমে। আর বুধবার তাঁদের দু’জনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে নতুন করে সেই জল্পনা বাড়ালেন রুদ্রনীল ঘোষ। একইসঙ্গে কটাক্ষেরও শিকার হলেন বাঙালিকে ‘বাংগালী’ লিখে।