এবারের নির্বাচনের অন্যতম হেভিওয়েট কেন্দ্র হতে চলেছে কৃষ্ণনগর উত্তর। একদিকে রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায়। তার বিপরীতে লড়বেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। অন্যদিকে, বাম-কংগ্রেস-ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) তরফে এই কেন্দ্রে দাঁড়াচ্ছেন কংগ্রেসের সিলভি সাহা।
কৃষ্ণনগর এরাজ্যের নদিয়া জেলার সদর শহর ও পুরসভা এলাকা। কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল ও মূর্তি পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ কুটির শিল্পগুলির অন্যতম। এটি বর্তমানে নদিয়া জেলার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ও প্রাচীন বাংলার অন্যতম শিক্ষা ও সংস্কৃতির শহর বলে পরিচিত।
সংস্কৃতি ও বিদ্যোৎসাহী রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নামানুসারে এই স্থান কৃষ্ণনগর নামে খ্যাত। অতীতে এই জায়গার নাম ছিল রেউই। নদিয়া রাজপরিবারের শ্রেষ্ঠ পুরুষ রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজধানী ছিল কৃষ্ণনগর। তিনি বিদ্বানসংস্কৃত ও ফার্সিভাষায় শিক্ষিত, সংগীতরসিক ছিলেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন শাক্তপদাবলিকার রামপ্রসাদ সেন, অন্নদামঙ্গল কাব্য প্রণেতা ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর, হাস্যরসিক গোপাল ভাঁড় প্রমুখ বাংলার প্রবাদপ্রতিম গুণী ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষক। তার চেষ্টায় এই স্থানে গুণী ব্যক্তিদের সমাবেশ হয় এবং কৃষ্ণনগর বাংলার সংস্কৃতিচর্চার পীঠস্থান হয়ে ওঠে। ১৮৫৬ সালে সারস্বত চর্চ্চার কেন্দ্র রূপে গড়ে কৃষ্ণনগর সাধারন গ্রন্থাগার। কৃষ্ণনগরের জগদ্বিখ্যাত মৃৎশিল্পের সূত্রপাত ও জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন তাঁরই উদ্যোগে ঘটেছিল। কৃষ্ণনগর পৌরসভা ১৮৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ভারতের সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিশনের নির্দেশিকা অনুসারে,৮৩ নম্বর কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রটি কৃষ্ণনগর পুরসভা এবং ভাণ্ডারখোলা, ভীমপুর, আসাননগর, দোগাছিয়া এবং পোড়াগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি কৃষ্ণনগর-১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত। কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রটি ১২ নম্বর কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী অবনীমোহন জোয়ারদার জয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের অসীমকুমার সাহাকে ১২,৯১৫ ভোটে পরাজিত করেছিলেন তিনি। ২০১১ সালের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের অবনীমোহন জোয়ারদার তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআইএমের সুবিনয় ঘোষকে পরাজিত করেছিলেন।২০০৬ সাল পর্যন্ত কৃষ্ণনগরে দু’টি বিধানসভা কেন্দ্র ছিল। কৃষ্ণনগর পূর্ব ও কৃষ্ণনগর পশ্চিম। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআইএমের সুবিনয় ঘোষ কৃষ্ণনগর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের ডা: রমেন্দ্রনাথ সরকারকে পরাজিত করেছিলেন তিনি।২০০১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস, ১৯৯৬ ও ১৯৯১ সালে কংগ্রেসের শিবদাস মুখোপাধ্যায় এই কেন্দ্র থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেনন। ২০০১ ও ১৯৯৬ সালে সিপিআইএমের রাধানাথ বিশ্বাস ও ১৯৯১ সালে সিপিআইএমের সাধন চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করেছিলেন শিবদাস।
১৯৮৭ সালে সিপিআইএমের সাধন চট্টোপাধ্যায় কংগ্রেসের শিবদাস মুখোপাধ্যায় ও ১৯৮২ সালে জনতা পার্টির কাশিকান্ত মৈত্রকে পরাজিত করেছিলেন।১৯৭৭ সালে জনতাপার্টির কাশিকান্ত মৈত্র সিপিআইএমের সাধন চট্টোপাধ্যায়কে এই কেন্দ্র থেকে পরাজিত করেছিলেন।আবার ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেই সিপিআইএমের অশোক বন্দোপাধ্যায় কৃষ্ণনগর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের উজ্জ্বল বিশ্বাসকে পরাজিত করেছিলেন তিনি। ২০০১ সালে সিপিআইএমের সুনীলকুমার ঘোষ তৃণমূল কংগ্রেসের উজ্জ্বল বিশ্বাস, ১৯৯৬ সালে কংগ্রেসের বিশ্বরূপ মুখোপাধ্যায় ও ১৯৯১ সালে কংগ্রেসের উজ্জ্বল বিশ্বাসকে পরাজিত করেছিলেন। ১৯৮৭ ও ১৯৮২ সালে সিপিআইএমের অমৃতেন্দু মুখোপাধ্যায় কংগ্রেসের গৌরীশংকর দত্ত ও ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির মহাদেব ভট্টাচার্যকে এই কেন্দ্রে পরাজিত করেছিলেন।