ওম রাউতের ‘আদিপুরুষ’ নিয়ে প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, চলতি বছরের সবচেয়ে সফল বলিউড ছবি হতে চলেছে এই সিনেমা। স্টার কাস্টও ছিল চোখ ধাঁধানো। বাহুবালীর পর প্রভাসের প্রতি আলাদাই টান গোটা দেশের মানুষের মনে। সইফও অভিনেতা হিসেবে খাঁটি। সঙ্গে বলিউডের সুন্দরী নায়িকা কৃতি শ্যানন। যদিও বাস্তবে দেখা গেল উল্টো ছবি। সিনেমা মুক্তি পেতে না পেতে মুখ ফেরাল সাধারণ মানুষই। রামায়ণের এরকম ‘সস্তা সংস্করণ’ যে হতে পারে, তা ভাবতে পারেননি অনেকেই। মূল মহাকাব্যের সঙ্গে মিল খুঁজে না পেয়ে চটেছে আম জনতাই। বিশেষ করে এবার আর কোনও রাজনৈতিক বা ধর্মীয় দলকে ‘বয়কট’ বা ‘নিষিদ্ধ’ করার ডাকই তুলতে হয়নি। বরং লোকমুখে ছড়ি পড়া খারাপ রিভিউ-র কারণে হল বিমুখ হয়েছে সাধারণ মানুষ ছবি মুক্তির দ্বিতীয় কি তৃতীয় দিন থেকেই।
অনেকেরই প্রশ্ন এরকম একটা সিনেমাকে কীভাবে ছাড়ত্র দিল সিবিএফসি (Central Board of Film Certification)। বর্তমানে সিবিএফসি-কে একাধিক ছবি নিয়ে বেশ কড়া হতে দেখা গিয়েছে। তাহলে কীভাবে অনুমতি পেল আদিপুরুষ? সম্প্রতি এই নিয়ে মুখ খুললেন সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশনের সদস্য বিবেক অগ্নিহোত্রী।
যখন একটি নিউজ পোর্টালের তরফে বিবেককে প্রশ্ন করা হয়, কেন তাঁরা ছবি মুক্তির সময় আদিপুরুষের একাধিক দৃশ্য বা ডায়লগ নিয়ে আপত্তি করলেন না? তখন জবাব আসে, তাঁরা সার্টিফিকেশনের জন্য ছবি দেখেন না। বরং সিনেমা সাধারণ নারী-পুরুষরা দেখে।
সঙ্গে যোগ করেন, তিনি আদিপুরুষ দেখেননি। তাই জানেন না ছবিটির কোন পর্যায়ে কী হয়ছিল বা কারা এটি দেখেছিল। কেননা তিনি সেই সময় তাঁর পরের ছবি ‘দ্য ভ্যাক্সিন ওয়ার’-এর কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সঙ্গে ‘কাশ্মীর ফাইলস’ পরিচালক নিজের কথায় যোগ করেন, তিনি সাধারণত অন্য চলচ্চিত্রের বিষয়ে কথা বলেন না এবং অন্যরা বানানো ছবি ভালো না খারাপ, এ ব্যাপারে সেভাবে মত দেন না।
তবে বিবেক নিজের বক্তব্যে যোগ করেন, কারুর বিশ্বাস নিয়ে ছবি বানাতে গেলে একটু বেশি সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। হতেই পারে সেই ব্যক্তির বিশ্বাস অন্যান্যদের থেকে আলাদা। আসলে বিশ্বাস আর ভালোবাসায় কোনও যুক্তি থাকে না।
বিবেক এরপর উদাহরণ দিয়ে বোঝান, যেমন একজন মা যদি বিশ্বাস করেন তাঁর সন্তান এই দুনিয়ায় সবচেয়ে সুন্দর, তাহলে সেই মা-কে ভুল প্রমাণ করতে যাওয়া কখনোই ঠিক নয়। বিশ্বাস নাড়িয়ে দেওয়ার অর্থই হল অনুভূতিতে আঘাত, যা পাপ ছাড়া আর কিছুই না।
এদিকে, এলাহাবাদ হাইকোর্ট আদিপুরুষের নির্মাতাদের নিন্দা করেছে। এবং প্রশ্ন করেছে, কেন তারা হিন্দু ধর্মের সহনশীলতা পরীক্ষা করছে। বিচারপতি রাজেশ সিং চৌহান এবং বিচারপতি শ্রী প্রকাশ সিং-এর বেঞ্চকে বলতে শেনা গিয়েছে, আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত যে কিছু লোক সিনেমা হলে গিয়েছিল এবং ছবিটা দেখার পর শুধু সিনেমাটা বন্ধ করতে বাধ্য করেছে। আর বড় কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। আদালতের পক্ষ থেকেও সিবিএফসি-র কাছে প্রশ্ন রাখা হয়ছে, তাঁরা ভবিষ্যত প্রজন্মকে কী শেখাতে চায়? মামলার শুনানির সময় শুনানির প্রযোজক, পরিচালক এবং অন্যান্য পক্ষের অনুপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত।