বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ হলেন মানসী সিনহা। কে না চেনেন তাঁকে! এবার পরিচালকের আসনে বসেছেন সেই মানসী সিনহা-ই। আগামীকাল ২৬ এপ্রিল, শুক্রবারই মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর পরিচালিত ছবি 'এটা আমাদের গল্প'। অভিনয়ে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, আর অপরাজিতা আঢ্য। এদিকে সেই ছবি তৈরি করতে গিয়ে বড়সড় প্রতারণার ফাঁদে পড়েন মানসী দেবী। সেবিষয়েই Hindustan Times Bangla-র কাছে খোলসা করেছেন অভিনেত্রী তথা পরিচালক মানসী সিনহা।
ফোন করে প্রতারণার বিষয়ে প্রশ্ন করতেই মানসী সিনহা বলেন, ‘কত অটোগ্রাফই তো দিয়ে থাকি অনুরাগীদের। অনেকেই বউ, মেয়ে, বোন বিভিন্ন জনের কথা বলে অটোগ্রাফ চান, দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ও চেয়েছিলেন। আর সেই অটোগ্রাফে ভিত্তিতেই যে উনি আমার বিরুদ্ধে ২৬ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ তুলবেন। আমাকেই জোচ্চর বলবেন, কে তা জানত!’
তবে ইতিমধ্যেই পুলিশের জালে আটকা পড়েছেন প্রতারক দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ঠিক কী ঘটেছিল? কে এই শুভঙ্কর।
মানসী সিনহা জানালেন, ‘আমার ছবি- এটা আমাদের গল্প এটা আসলে প্রথম শ্যুট হয়েছিল ২০২০-তে। তখন এই ছবি ছবির প্রযোজক ছিলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ। তিনি এই দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিযুক্ত করেছিলেন ফাইনান্সার হিসাবে। ওই দীপঙ্কর ছবিতে অনেক টাকাই বিনিয়োগ করেন। তবে শর্মিষ্ঠার থেকে উনি টাকার সঠিক হিসেব পাননি। তারপর উনি টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন। এরপর উনি আর শর্মিষ্ঠাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আমরাও শর্মিষ্ঠা ঘোষকে খুঁজে পাইনি। এদিকে এই শর্মিষ্ঠা ছবিও শেষ করেননি, কাউকে টাকাও দেননি। এরপর আমরা শর্মিষ্ঠা ঘোষের থেকে ছবিটার NOC-নিয়ে অন্য কোনও প্রযোজকের মাধ্যমে ছবিটা করতে চেয়েছিলাম, আর সেটা নতুন প্রযোজককে সবটা জানিয়েই। এরপর NOC দেওয়ার সময় শর্মিষ্ঠা কিছুতেই দীপঙ্করের নাম উল্লেখ করতে দেননি। উনি জানান, দীপঙ্করের সঙ্গে আমার কোনও চুক্তিই হয়নি। তাই শর্মিষ্ঠা ওঁর নাম দিতে চাননি। আমার কাছে তখন NOC- নেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাই সেটা নিয়েছিলাম।’
মানসী সিনহা আরও বলেন, ‘এরপর আমরাও আর দীপঙ্করকে খুঁজে পাইনি। তবে যাঁরা ছবিটা শেষপর্যন্ত করলেন তাঁরা হলেন ধাগা প্রোডাকশনের শুভঙ্কর মিত্র ও সুভাষ বেরা। ওঁদেরকে কিন্তু আমি জানিয়েছিলাম, যে দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম এখানে নেই, তবে উনি কিন্তু ছবির শুরুতে বিনিয়োগ করেছিলেন। আমি যতটুকু জানি শুরুতে যা বিনিয়োগ হয়েছে, সেটা ওই দীপঙ্করেরই টাকা। এটা ফেরত দেওয়ার সময় ভেবেচিন্তে দিতে হবে, যাতে দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ওঁর বিনিয়োগের টাকা ফেরত পেয়ে যান। ধাগা প্রোডাকশনও রাজি ছিল।
ইতিমধ্যে দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ভেবে নেন, আমিও হয়ত শর্মিষ্ঠার মতো টাকা হজম করে ফেলব। উল্টে উনি আমার নামে কেস করেন। চিঠি পাঠিয়ে জানান, আমিই নাকি ওঁর টাকা আত্মসাৎ করেছি। বারুইপুর থানাতেও আমি যাই। দীপঙ্করের স্ত্রীও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আমি যখন যাই তখন আমার সঙ্গে গিয়েছিলেন প্রযোজক শুভঙ্কর মিত্র। আমরা দীপঙ্করকে বলি, টাকা আপনি পেয়ে যাবেন, কিন্তু আপনিই তো ভুল করেছেন। শর্মিষ্ঠা ঘোষকে আপনি কোনও চুক্তিপত্র ছাড়া কেন টাকা দিয়েছেন! যদি আপনি শর্মিষ্ঠা ঘোষের সঙ্গে এগ্রিমেন্ট করতেন, তাহলে তো আমি শর্মিষ্ঠা ঘোষকেই চাপ দিতাম, সেটা তো করতে পারছি না। আইনত সেটা আমি পারিও না। ভুলটা তো আপনার। আমরা তো আপনার সঙ্গে যোগযোগ করতেই চাইছিলাম, তবে পাইনি। আর অফিসিয়ালি তো আপনার নামও নেই, যেহেতু চুক্তি নেই। এমনকি আমি ওঁর আইনজীবীকেও বলেছিলাম, যে আসলেই ওঁর টাকা নিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে উনি লড়াই করলে আমি কিন্তু পাশে আছি। আমি চাই দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের টাকা ফেরত পান। কিন্তু উনি সেটা করেননি। দীপঙ্কর উল্টে আমার বিরুদ্ধে স্টেপ নিলেন, ছবিটাও আটকানোর চেষ্টা করেন।'
মানসী জানান, ‘এদিকে শুরুর দিকে যখন শ্য়ুটিং চলত তখন দীপঙ্কর আমার কাছে অটোগ্রাফ নিয়েছিলেন। বলেন, ওঁর বউ নাকি আমার অনুরাগী। এরাম তো আমরা দিয়েই থাকি। কিন্তু ও জানত না, যে ওটা আমার অফিসিয়াল সই নয়। ওই যে কাগজটায় ও অটোগ্রাফ নিয়েছিল, সেটার উপর টাইপ করে চিঠি বানায় যে আমিই ওঁর থেকে সব টাকা নিয়েছি। শুধু তাই নয়, এটা একটা বড় সংবাদমাধ্যমে উনি জানিয়েও ছিলেন। এরপর বাধ্য হয়ে আমি দীপঙ্করের নামে FIR করি নরেন্দ্রপুর থানায়। ও অটোগ্রাফ নিয়ে আমার নামে ২৬ লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগ এনেছে। দীপঙ্কর যে ওই সই জাল করে আরও কিছু করে রেখেছে কিনা সেটাও তো জানি না!'
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে ধন্যবাদ জানাব, ওঁরাই ওঁকে (দীপঙ্করকে) খুঁজে বের করেন। ওঁর তো ফোন সুইচ অফ থাকে, ওঁকে পাওয়া যায় না। পুলিশ ওঁকে ট্র্যাক করে দেখে ও কখনও দার্জিলিং, কখনও কোচবিহার সহ নানান জায়গায় রয়েছে। দীপঙ্কর পুলিশের বিরুদ্ধেও কমপ্লেন করেছিল, যে কেন পুলিশ আমায় গ্রেফতার করছে না। এরপর পরশু দিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার দীপঙ্করকে বাঁকুড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।’