২০২৪-এর শুরুতে মৃত্যুশোক পিছু ছাড়ছে না টলিগঞ্জের। শনিবার প্রয়াত হলেন মৃণাল সেনের মানস কন্যা শ্রীলা মজুমদার। ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের লড়াই থামিয়ে বিদায় নিলেন। মাত্র ৬৫ বছর বয়সেই নিভল জীবন দীপ! চার দশকেরও দীর্ঘ তাঁর অভিনয় জীবন। সিনেমার পাশাপাশি মঞ্চ, টেলিভিশন এমনকী ভয়েস ওভার আর্টিস্ট হিসাবেও নিজের ছাপ রেখে গেলেন শ্রীলা মজুমদার। আরও পড়ুন-'কালো চামড়ার প্রতি সম্মিলিত কুসংস্কার…’, শ্রীলার মৃত্যুতে মুহ্যমান মৃণাল-পুত্র
মৃণাল সেন, তরুণ মজুমদার, শ্যাম বেনেগালদের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করা শ্রীলা মজুমদার কিন্তু বাংলা টেলিভিশনেও অভিনয় করেছেন সমান তালে। স্টার জলসার ‘আঁচল’ ধারাবাহিকের জন্যই সিরিয়ালপ্রেমীরা সবচেয়ে বেশি মনে রেখেছে শ্রীলা মজুমদারকে। ভাদু ও টুসু অর্থাৎ মিষ্টি সিং ও শ্রীপর্ণা রায়ের অনস্ক্রিন মায়ের চরিত্রে শ্রীলা মজুমদারের অভিনয় আজও ভুলতে পারেনি দর্শক। পর্দার মা-কে হারিয়ে বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে মিষ্টি সিং মানে ভাদুকে।
হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে অভিনেত্রী জানালেন, ‘যখন আমি আঁচল-এর কাজ শুরু করি, ওটাই ছিল আমার প্রথম বড় কাজ। প্রত্যেকটা মুহূর্তে ইমোশনগুলো ক্যামেরার সামনে বার করে আনতে শ্রীলাদি সাহায্য করত। ওঁনাকে দেখে অনেককিছু শিখেছি। ক্যামেরার দিকে কীভাবে তাকাতে হয়, সবসময় একটা আয়না রাখত সেটা ধরে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলটা বুঝত।’
মেকআপ রুমের স্মৃতি হাতড়ে মিষ্টি বললেন, ‘শ্রীলাদি সবার সঙ্গে খুব আনন্দ করে সময় কাটাত। ওঁনার স্বভাবটাও খুব মিশুকে। গল্প-আড্ডা, একসঙ্গে খাবার এনে খাওয়া, উনি গোটা মেকআপ রুম জমজমাট করে রাখত শ্রীলাদি।’
এক দশক আগে আঁচল শেষ হয়েছে। তবে মা-মেয়ের সম্পর্কে কিন্তু দূরত্ব তৈরি হয়নি। গত বছরেই সাত পাকে বাঁধা পড়েন মিষ্টি। ভাদুকে আর্শীবাদ দিতে পৌঁছেছিলেন শ্রীলা মজুমদার। মিষ্টি বললেন, ‘আমার বিয়েতে উনি এসেছিলেন… কী যে খুশি ছিলেন। আমাদের শেষ দেখা হয় বিজয়া সম্মিলনীতে মাস কয়েক আগে। তবে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। লাস্ট বার যখন ফোনে কথা হল, বলেছিল চল, আমরা কফি খেতে যাই। তবে ওই হব হব করেও কফি খাওয়ার প্ল্যানটা ঠিক হল না। এর মাঝেই দুম করে শ্রীলাদি চলে গেল… ভাবতেও পারছি না, অবিশ্বাস্য! আফসোস হচ্ছে কেন কফিটা খেতে গেলাম না।’
গলা বুজে এল মিষ্টির। খানিক সামলে নিয়ে বললেন, ‘কত্ত ভালো সময় কাটিয়েছি শ্রীলাদির সঙ্গে। বোলপুরে একসঙ্গে আউটডোর শ্য়ুটিং, রাত জেগে গল্প করা, নিজের অভিনয় জীবনের অনেক গল্প শ্রীলাদি শেয়ার করত। আজ সবই স্মৃতি…’।
শুধু আঁচল ধারাবাহিকই নয়, অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের ‘শঙ্কর মুদি’ ছবিতেও শ্রীলা মজুমদারের সঙ্গে কাজ করেছেন মিষ্টি।