৭৬ বছরে পা রাখলেন বলিউড অভিনেত্রী জয়া বচ্চন। তাঁর অনবদ্য অভিনয়প্রতিভা বারবার হৃদয় ছুঁয়ে যায় দর্শকের। কেরিয়ারের মধ্যগগণে থাকাকালীন ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন অমিতাভ বচ্চনকে। অভিনয়, রাজনীতি, সংসার—সবকিছুই এক হাতে সামলেছেন তিনি। জন্মদিনে ফিরে দেখা জয়া বচ্চনকে-
১৯৪৮ সালের ৯ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের জবলপুরে জন্মগ্রহণ করেন জয়া বচ্চন। ১৯৬৩ সালে কিশোরী বয়সে সত্যজিৎ রায়ের বাংলা ছবি ‘মহানগর’ দিয়ে শুরু হয় তাঁর অভিনয় জীবন। আজ ৭৬ বছরে পা রাখলেন অভিনেত্রী। তাঁর বাবা ছিলেন ভারতের খ্যাতনামা সাংবাদিক, লেখক তরুণ কুমার ভাদুড়ি। মায়ের নাম মা ইন্দিরা ভাদুড়ি।
আরও পড়ুন: আধখোলা শার্টের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে বক্ষবিভাজিকা, শ্রাবন্তীর আগুন ধরানো ছবিতে বোল্ড আউট ভক্তরা
১৯৭১ সালে ঋষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘গুড্ডি’-তে অভিনয়ের সুবাদে বলিউডে লাইমলাইটে আসেন জয়া। এরপর অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমা হল ‘অভিমান’, ‘উপহার’, ‘কোশিশ’, ‘কোরা কাগজ’, ‘জঞ্জির’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘মিলি’, ‘শোলে’, ‘কাভি খুশি কাভি গম’, ‘কাল হো না হো’, ‘সিলসিলা’, ‘গুড্ডি’, ‘অনামিকা’, ‘পিয়া ক্যা ঘর’, ‘গঙ্গা দেবী’, ‘সমাধি’ প্রমুখ।
আরও পড়ুন: স্কুলের মাঠে তারকা প্রচারক দেবের হেলিপ্যাড, হাফ ছুটি ঘিরে দানা বেঁধেছে বিতর্ক, উচ্ছ্বসিত পড়ুয়ারা
নয়টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছন জয়া, এর মধ্যে তিনটি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে, তিনটি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে।১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাঁকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রীতে ভূষিত করেন। ২০০৭ সালে তিনি ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পান।
১৯৭৩ সালের ৩ জুন কেরিয়ারের মধ্যগগণে থাকাকালীন অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন অভিনেত্রী। অমিতাভ বচ্চন যখন কেরিয়ার শুরু করেন, জয়া বচ্চন তত দিনে প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী। ১৯৭১ সালে যখন ‘গুড্ডি’ মুক্তি পায়, তখন থেকেই অমিতাভে সঙ্গে জয়ার প্রেমের সূত্রপাত। শোনা যায়, ওই ছবির সেট থেকেই জয়ার প্রতি টান অনুভব করতে শুরু করেন বিগ বি। জানা যায়, ‘জঞ্জির’ বক্স অফিসে সাফল্য ফেলে তাঁরা লন্ডন বেড়াতে যাবেন বলে স্থির করেন।
আরও পড়ুন: মুক্তির ২ বছর পর নন্দনে প্রদর্শিত হবে ‘অপরাজিত’, কী বলছেন উচ্ছ্বসিত পরিচালক অনীক দত্ত
জয়া-অমিতাভের লন্ডন ভ্রমণে বাদ সাধেন বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন। অমিতাভকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিয়ে না করে কোনওভাবেই একসঙ্গে বিদেশে বেড়াতে যাওয়া যাবে না। বাবার কথা অনুয়ায়ী, পরদিন সকালে পরিবার ও বন্ধুদের খবর দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ডেকে আনা হয় পুরোহিতকে। রাতে লন্ডনের বিমান থাকায় ওই দিন সকালে ঘরোয়া পরিবেশে বসে অমিতাভ-জয়ার বিয়ের আসর। বিয়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁরা রাতে লন্ডনের বিমান ধরেন। ‘সিলসিলা’, ‘অভিমান’, ‘মিলি’, ‘শোলে’-সহ একাধিক ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেন অমিতাভ-জয়া।
বিয়ের এক বছর পর ১৯৭৪-এর ১৭ মার্চ মেয়ের মা হন জয়া। নাম রাখেন শ্বেতা। আরও দুই বছর পর ১৯৭৬ সালে জন্ম হয় অভিষেকের। অমিতাভ-জয়ার দুই সন্তান—শ্বেতা বচ্চন ও অভিষেক বচ্চন। শ্বেতার দুই ছেলেমেয়ে নভ্যা এবং অগস্ত্য। আর ঐশ্বর্য রাইয়ের সঙ্গে অভিষেকের একটি মেয়ে রয়েছে, নাম আরাধ্যা।
অভিনয়, সংসারের পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয় জয়া বচ্চন। বর্তমানে সমাজবাদী পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ তিনি। জয়া বচ্চন ২০০৪ সালে প্রথম সমাজবাদী পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর টানা এই আসন ধরে রেখেছেন। ২০১৮ সালে চতুর্থ মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে প্রাচীন স্মৃতিসৌধ, প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট ও অবশিষ্টাংশ (সংশোধনী) বিলসংক্রান্ত সিলেক্ট কমিটির সদস্য।
১৯৮৮ সালে বিখ্যাত বলিউড সিনেমা ‘শাহেনশাহ’-এর জন্য চিত্রনাট্য লিখেছিলেন জয়া বচ্চন, যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তাঁর স্বামী। ২০০২ সালে প্রকাশ পেয়েছিল ‘টু বি অর নট টু বি অমিতাভ বচ্চন’। এই বইয়ের মাধ্যমে নিজের স্বামী অমিতাভ বচ্চনকে তাঁর ৬০তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন জয়া। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে এখন সুখী গৃহকোণ তাঁর।