বৃহস্পতিবার ৫১-য় পা দিলেন অভিনেত্রী তথা রাজনীতিবিদ জুন মালিয়া। যদিও তাঁকে দেখে তা বিন্দুমাত্র বোঝার উপায় নেই। টলিপাড়াতেও নয় নয় করে কাটিয়ে ফেলেছেন প্রায় আড়াই দশক। ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দা চুটিয়ে কাজ করেছেন তিনি। বলা ভালো এখনও করে চলেছেন .বর্তমানে তার সঙ্গে পা রেখেছেন রাজনীতির আঙিনায়। সবমিলিয়ে অন স্ক্রিন টু অফ স্ক্রিন বরাবরই গথে বাঁধা পথে হাঁটেননি তিনি। আসুন পিছন ফিরে একবার দেখা যাক জুনের সেই যাত্রাপথ।
জুনের জন্ম থেকে বেড়ে হয়ে ওঠা সবটুকুই দার্জিলিংয়ে। তাই মহিষাদল রাজ পরিবারের মেয়ে হয়েও জুনের ব্যক্তিত্বে মিশে গিয়েছিল ঝাঁ চকচকে 'আরবান' ব্যাপার। কম বয়সেই প্রথম বিয়ে থেকে দুই সন্তান শিবাঙ্গি ও শিবেন্দ্রর মা হয়েছেন জুন। আবার সেই বিয়ে টেকেওনি খুব বেশিদিন। আপোষ করে না থেকে সংসার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। তুলে নিয়েছিলেন 'সিঙ্গল মাদার' এর সমস্ত দায়িত্ব। তবে জানিয়ে রাখা ভালো নয় দশকে কিন্তু 'সিঙ্গল মাদার'-এর তকমা বয়ে নিয়ে বেড়ানোর পাশাপাশি সেইসমস্ত দায়িত্ব পালন করা মোটেই বর্তমান সময়ের মতো সহজ ছিল না। তবে পিছিয়ে পড়েননি জুন। একহাতে সন্তানদের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে মন দিয়েছিলেন নিজের কেরিয়ারের দিদকেও। কারণ স্বামীর থেকে কোনওরকম খোরপোষ নিতেই যে রাজি ছিলেন না তিনি। অথচ বাবা তখন ক্যানসারের রুগী। বাবার প্রতি মেয়ের দায়িত্বও পালন করেছিলেন তিনি।
সেই সময় ইন্ডাস্ট্রিতে জুনের আসা ছিল এক ঝলক টাটকা বাতাসের মতোই। প্রায় প্রতি ছবিতে একই নায়িকাদের মুখ দেখতে দেখতে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন দর্শক। সেইসময় জুনের স্মার্ট ব্যক্তিত্ব, ছিপছিপে আকর্ষণীয় চেহারা এবং দ্বিধাহীনভাবে সাহসী দৃশ্যে অভিনয়, সব মিলিয়ে জনপ্রিয়তার লাইলমলাইটে আসতে মোটেও দেরি হয়নি এই নায়িকার। তাছাড়া জুনের সহজাত ব্যক্তিত্বর মধ্যে থাকা 'আর্বানাইজড লুক'-ও বুঁদ হয়েছিলেন বাংলা ছবির দর্শক। সুদেষ্ণা রায় থেকে প্রভাত রায়ের মতো পরিচালকদের মতো জনপ্রিয় পরিচালকদের ধারাবাহিক ও ছবিতে ডাক পাওয়া শুরু করলেন জুন।এই তালিকায় রয়েছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মতো পরিচালকের নামও। প্রয়াত এই বিখ্যাত পরিচালকের 'মন্দ মেয়ের উপাখ্যান' ছবিতে জুনকে আজও ভোলেননি দর্শক। রয়েছে পরিচালক সুব্রত সেনের হইচই ফেলে দেওয়া ছবি 'নীল নির্জন'-ও। সেখানেও জুনের কিচু সাহসী দৃশ্য নিয়ে বেজায় মাতামাতি শুরু হয়েছিল।
ছোটপর্দার 'তৃষ্ণা' ধারাবাহিকে সেইসময় জুনকে এক ঝলক দেখার অপেক্ষাতেই বসে থাকতেন সকলে। সেই সময়ের যুবক-যুবতীদের 'দুপুরের ঘুম' কেড়ে নিয়েছিলেন জুন, একথাও বললে মোটেই অত্যুক্তি হবে না। ভুলে চলবে না সেইসময় ' রূপকথা' ধারাবাহিকে জুন মালিয়া এবং শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের একটি অন্তরঙ্গ দৃশ্য শোরগোল ফেলে দিয়েছিল টলিপাড়া থেকে শুরু করে বাঙালি দর্শকদের মধ্যে!
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে দীর্ঘ বছর প্রেম করার পর সৌরভ চট্টোপাধ্যায়কে বিয়ে করেছেন জুন। তাঁর বয়স তখন ৪৯। চারপাশে গুঞ্জন বা সংবাদমাধ্যমে ওঠা চর্চাকে বিন্দুমাত্র আমল দেননি তিনি। বর্তমানে অভিনয়ের সঙ্গে রাজনীতিতেও জুনের ব্যস্ততা তুঙ্গে। চলতি বছরেই রাজ্যের শাসকদলের হয়ে মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে বিধানসভা ভোটে জিতেছেন। সঙ্গে ছোটপর্দার বেশ কয়েকটি ধারাবাহিকে কাজ তো করছেনই তিনি। সবমিলিয়ে কর্মজীবন থেকে ব্যক্তিজীবন প্রথম থেকেই অন্য পথে হেঁটেছেন জুন। স্বতন্ত্রভাবে। নিজের মেজাজেই তৈরি করেছেন জীবনের যাত্রাপথ।