হালফিলে যত অভিনেতারা ‘মহানায়ক’ সম্মান পান না কেন, বাঙালির কাছে তাঁদের মহানায়ক সারাজীবন থাকবেন উত্তম কুমারও। বাঙালিকে হয়তো এখনও পছন্দের নায়ক কে প্রশ্ন করলে, ১০ জনে ৫ জন নেবেন উত্তমেরই নাম। বাংলা বিনোদন জগতে অন্যতম সফল, সুদর্শন, সুপুরুষ অভিনেতা তিনি। একটা সময় কেরিয়ারে চরম ব্যর্থতা এলেও, থামানো যায়নি তাঁকে। আর তারপরেই ইতিহাস তো সবারই জানা। উত্তমের শো-র টিকিট পেতে সকাল থেকেই হলের সামনে লেগে যেত লম্বা লাইন। নারীরা মন দিত, পুরুষরা করত অনুকরণ।
তা, এহেন উত্তম অভিনয়ের সঙ্গে কি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল কখনও। কংগ্রেস না বাম, কোন দলকে সমর্থন করতেন? অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়ের পুরনো একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে খুব। যেখানে বর্ষীয়ান অভিনেত্রীকে সহকর্মী উত্তমের ব্যাপারে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। উত্তমের রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দের কথাও উঠে এল সাক্ষাৎকারে।
সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের জমানায় উত্তম কুমার বন্যাত্রাণে সাহায্য করেছিলেন বলে অনেকেই মনে করেন মহানায়ক বুঝি কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন। যদিও মাধবী সাফ মানা করে দেন। উত্তম প্রকৃত অর্থেই কংগ্রেসি না কি প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘একদমই না’। যদিও প্রয়াত অভিনেতাকে বাম-সমর্থক বলতেও রাজি নন তিনি। তবে কমিউনিস্ট বলা যেতে পারে বলেই জানালেন, কারণ উত্তম কুমার যেভাবে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন, সাহায্যের হাত বাড়াতেন, তাতে খুব সহজেই বলা যায় ‘কমিউনিস্ট’।
একটি পুরনো ঘটনার স্মৃতিচারণও করলেন মাধবী। এক মেকআপ আর্টিস্ট উত্তমকে এসে জানিয়েছিল একবার, তাঁর মেয়ের বিয়ে ঠিক হলেও, সেই তারিখে বিয়েটা হচ্ছে না। কারণ পণের ৫ হাজার তিনি যোগার করতে পারেননি। আর এই কথা অভয় দিয়ে উত্তম কুমারের জবাব ছিল, ‘তুই এই টাকার চিন্তা করিস না। বিয়ের আয়োজন কর’। এরপর দেখা যায় বিয়ের তারিখ ঠিক মনে রেখেছেন। পাঁচ হাজার নগদ নিয়ে হাজির হয়েছেন সেই মেকআপ আর্টিস্টের বাড়িতে।
মাধবী এই সাক্ষাৎকারেই সাফ জানান, উত্তম কুমারের সঙ্গে তাঁর কখনও রাজনীতি প্রসঙ্গে কথা হয়নি। টলিউডের খ্যাতনামা অভিনেত্রী রত্না ঘোষালও এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ‘দাদা রাজনৈতিক আলোচনা একেবারে পছন্দ করতেন না’।
যদিও মৃত্যুর পর এখন উত্তম কুমারের নাম নিয়ে চলে রাজনীতি। কদিন আগেই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম শাসকদের দিকে তুলেছিলেন আঙুল। উত্তম কুমারের মৃত্যুদিনে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠান থেকেই মমতা বলে উঠেছিলেন, ‘মৃত্যুর পর উত্তমকুমারের দেহকে রবীন্দ্রসদনে রাখার প্রয়োজন পর্যন্ত মনে করেনি বাম সরকার। মহানায়কের মৃত্যুর পর তাই আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগই পাইনি। তবে আমার দল যখন থেকে ক্ষমতায় এসেছে, তখন থেকেই আমরা উত্তম কুমারের পরিবারের সকলকে ডেকে এই দিনটায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই। একইসঙ্গে যে চলচ্চিত্র জগতের মানুষ তিনি, সেখানের অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও এই অনুষ্ঠানে সামিল করে নেই।’