মনোজ বাজপেয়ী নামটা শুনলেই এখন মাথায় একগুচ্ছ দুর্দান্ত ছবির নাম ভেসে আসে। মনে পড়ে যায় দারুণ কিছু কাজের কথা। সত্য, আলিগড়, গ্যাংস অব ওয়াসিপুর, ইত্যাদি ছবির মধ্যে দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেন মনোজ বাজপেয়ী। পান পরিচিতি। ২০০৩ সালে তিনি সত্য এবং পিঞ্জর ছবি দুটির জন্য জাতীয় পুরস্কার পান। আবার ২০১৮ সালে ভোঁসলে ছবির জন্য এই সম্মানীয় পুরস্কারে সম্মানিত হন তিনি। কিন্তু তাঁর এই সফরটা মোটেই সুখকর ছিল না। আজ সবাই তাঁকে এক ডাকে চেনে, বলিউডে সিরিজ থেকে সিনেমায় দাপিয়ে কাজ করছেন বটে কিন্তু স্ট্রাগলিং পিরিয়ডে তাঁকে সইতে হয়েছে বহু অপমান। অপমানিত হতে হয়েছে। তাঁর চোখের সামনেই তাঁর ছবি ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে ডাস্টবিনে!
২০১৯ সালে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মনোজ তাঁর এই দীর্ঘ সময়ের স্ট্রাগলের কথা তুলে ধরেছিলেন। জানিয়েছিলেন ওই সময় তিনি কীভাবে হতাশা, অবসাদে ডুবে গিয়েছিলেন। একটি বিহারের ছেলে দুচোখ জোড়া স্বপ্ন নিয়ে মুম্বই এসেছিল। কিন্তু কিছুদিনেই সেই ঘোর কেটে যায় তাঁর। আছড়ে পড়েন বাস্তবের কড়া মাটিতে। সহ পরিচালকরা তাঁর সঙ্গে তখন কেমন ব্যবহার করতেন সেই কথাও তুলে ধরেন ওই সাক্ষাৎকারে। তিনি জানান, 'আমি তখন এই অপমানগুলো দিয়েই নিজের মনের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলাম।'
তিনি আরও বলেন, 'অন্যান্যদের মতো আমাকেও অনেক লম্বা পথ পেরোতে হয়েছিল, প্রচুর স্ট্রাগল করতে হয়েছিল। আমি যখনই আমার কোনও ছবি সহ পরিচালককে দিতাম ওঁরা সঙ্গে সঙ্গে ডেটা আমার চোখের সামনে ডাস্টবিনে ফেলে দিতেন।আর সেটা যেন একটা রুটিনে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। আমি এই অপমানকে অনুপ্রেরণা বানানোর জন্য রোজ খবরের কাগজ থেকে একটা চরিত্র বেছে নিতাম আর সন্ধায় সেটা বন্ধুদের অভিনয় করতে দেখাতাম। আমি কিছুটা শিখেছি স্ট্রিট থিয়েটার থেকে কিছুটা ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে। সেটাই যেন আমাকে পেশাদারিক ভাবে বাঁচিয়ে রেখেছিল। এবং একই সঙ্গে তৈরি রেখেছিল যখন আমি প্রথম কাজের অফার পাই।' রেডিফকে দেওয়া একটা সাক্ষাৎকারে তেমনটাই জানিয়েছিলেন মনোজ।
ভোঁসলে ছবিতে যেন তাঁর নিজের লড়াই প্রতিফলিত হয়ে হল। বিহার থেকে মুম্বই সফর, সেই স্ট্রাগল। সেই প্রসঙ্গে তাঁর কী মত? এই বিষয়ে অভিনেতা জানান, ' কাজের জন্য যাঁরাই তাঁদের বাড়ি পরিবার ছেড়ে অন্য জায়গায় যান তাঁদের সকলকেই একটা সাময়িক স্ট্রাগল তো করতেই হয় নতুন শহরে মানানোর জন্য, কাজ পাওয়ার জন্য। ভোঁসলে ছবি সেটাই শেখায় যে এই সময় কী করা উচিত আর কী নয়। আসলে মুম্বই শহরটা আপনার জন্য কষ্টদায়ক হতে পারে যদি আপনার এখানে কাজ বা বন্ধু না থেকে। লড়াইয়ের সময়টায় ধৈর্য না রাখতে পারলে আপনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়তে পারেন। কিন্তু একবার সাফল্য পেয়ে গেলে সেখান থেকে আর ফেরা যায় না। আপনাকে পুরো বদলে দেবে এই শহর।'
প্রসঙ্গত মনোজকে শেষবার গুলমোহর ছবিতে দেখা গিয়েছিল। তাঁর সঙ্গে এই সিরিজে শর্মিলা ঠাকুরকে দেখা গিয়েছিল। ডিজনি প্লাস হটস্টারে মুক্তি পেয়েছিল এই ছবি।