তাইপেই, তাইওয়ান: চিনের প্রথম নোবেল পুরস্কার জিতেছে মো ইয়ানের লেখা। কিন্তু তাঁকে কতোটা ভালো চোখে দেখেন শি জিনপিং? এমনই প্রশ্ন উড়ে আসছে চারিদিকে। বেশ কিছু বছর ধরে চিনে দেশপ্রেমের ঝড় উঠেছে। আক্রমণ করা হচ্ছে বিভিন্ন জাতীয়বাদী সাংবাদিক, লেখক বা অন্যান্য জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে। কিন্তু এতেই থেমে থাকছে না আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে মো ইয়ানের মতো ব্যক্তিত্বকে।
এবার মো-য়ের নামে মামলা করলেন চিনার এক জনপ্রিয় ব্লগার। দেশপ্রেমিক ব্লগার উ ওয়ানঝেং চিনের বীর এবং শহীদদের অপমান করার জন্য লেখকের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা করেছেন ।
উ দাবি করেছেন যে, 'মো'র বই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে, শত্রু জাপানি সৈন্যদের 'প্রশংসা' করেছে এবং সাবেক বিপ্লবী নেতা মাও সেতুংকে অপমান করেছে।'
গত মাসে দায়ের করা মামলায় লেখককে সকল চীনা জনগণ, দেশের শহীদ ও মাওয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার এবং প্রত্যেক চীনা নাগরিকের জন্য ১.৫ বিলিয়ন ইউয়ান - ১ ইউয়ান ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। শুধু তাই নয় মো'র সমস্ত বই যাতে সরিয়ে ফেলারও অনুরোধ জানিয়েছেন উ।
২০১৮ সালের একটি আইন যেখানে নায়ক এবং শহীদদের অপমান করার অপরাধে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে তার উপর ভিত্তি করেই এই অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই আইনটি 'হিস্টোরিকাল নিহিলিজম'-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
মো, যার আসল নাম গুয়ান মোয়ে, ২০১২ সালে নোবেল জিতেছিলেন। তিনি চীনের গ্রামীণ জীবন চিত্রিত করার জন্য এবং দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের কিছু নেতিবাচক দিক নিয়ে কাজ করার জন্য পরিচিত।
২০০৫ সালে হংকংয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণের সময় তিনি বলেছিলেন, ‘সাহিত্য ও শিল্পের উচিত সমাজের অন্ধকার ও অন্যায়কে উন্মোচন করা। ’ তবে বেইজিংয়ের সঙ্গে ৬৯ বছর বয়সী এই নেতার বেশ দ্বন্দ্বই রয়েছে।
২০১১ সালে তিনি রাষ্ট্র সমর্থিত চিনা লেখক সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান হন। নোবেল পাওয়ার পর দলের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা তাকে চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি ও আন্তর্জাতিক প্রভাবের 'অসামান্য প্রতিনিধি' হিসেবে প্রশংসা করেন।
কোনও ভাবেই এই মামলায় জয়ী হবেন না বলেই মনে করছেন অনেকে। চিন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘটনায় কোনও মন্তব্য করেনি, কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালিত ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস মঙ্গলবার মো এর সাম্প্রতিক একটি বক্তৃতা উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা পরোক্ষভাবে লেখকের প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
চিনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবোতে এই ব্লগার বলেছেন যে বেইজিংয়ের একটি আদালত তার প্রথম মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে কারণ উ মো'র বাড়ির ঠিকানা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তার বর্তমান মামলাটি ২০১৮ সালের আইনের অংশের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যা কাউকে ‘জনস্বার্থের ক্ষতির জন্য বীর ও শহীদদের’ অপমান বা অপবাদ দিলে নাগরিকভাবে দায়বদ্ধ হবে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস স্বাধীনভাবে তার দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি কারণ আদালত নথিগুলি জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি।
মিডিয়া ভাষ্যকার এবং গ্লোবাল টাইমসের প্রাক্তন সম্পাদক হু শিজিনও উয়ের সমালোচনা করে মো'র বিরুদ্ধে মামলা করার তার প্রচেষ্টাকে ‘প্রহসন’ এবং বলে অভিহিত করেছেন। ওয়েইবোতে হু এই পদক্ষেপের প্রতি সমর্থনকে ‘অনলাইন জনমতের ক্ষেত্রে খুবই উদ্বেগজনক প্রবণতা’ বলে নিন্দা জানান ও বিনিময়ে উ হু'র বিরুদ্ধেও মামলা করার হুমকি দেন।
সামাজিক মাধ্যমে এই বিতর্ক দুই দলের মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছে। বিতর্কটি ওয়েইবোতে ট্রেন্ড করেছে, হ্যাশট্যাগ #MoYanbeingsued প্রায় ২ মিলিয়ন ভিউজ পেয়েছে। এ সম্পর্কিত হ্যাশট্যাগটি সেন্সর করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাসনে থাকা প্রখ্যাত চিনা লেখক মুরং জুয়েকুন জানান, ‘সরকার মোকে আক্রমণ করার পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে এমন কোনও প্রমাণ তিনি দেখতে পাচ্ছেন না, কিন্তু এটি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে যেখানে এ ধরনের দেশপ্রেমিক আক্রমণকে উৎসাহিত করা হয়।’
২০১৮ সালের আইন এবং অন্যান্য অনুরূপ আইনের ফলে অসংখ্য মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিকও রয়েছেন যিনি ২০২১ সালে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে চীনের সরকারি হতাহতের সংখ্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন।