উত্তরবঙ্গের ‘মাটির গান’ ভাওয়াইয়া। সেই গানে অসামান্য অবদানের জন্য রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মূর হাত থেকে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার গ্রহণ করেছেন গীতা রায় বর্মণ। কোচবিহারের মাথাভাঙার মেয়ে গীতা দেবী। কোচবিহার জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামে তাঁর বাড়ি। পুরস্কার গ্রহণের পরই দিদি নম্বর ১-এর মঞ্চে এসে হাজির হন গীতা রায় বর্মণ। দিদি রচনা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে শোনালেন তাঁর জীবনের গল্প। শোনালেন ভাওয়াইয়া গানও।
‘পদ্মশ্রী’ প্রাপ্ত ভাওয়াইয়া শিল্পী গীতা
খুব ছোটবেলা থেকেই ভাওয়াইয়া গানের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন গীতা রায় বর্মণ। আর এর পিছনে তাঁর বাবা, দাদা, ঠাকুরদাদের অবদান অনস্বীকার্য। ‘পদ্মশ্রী’ প্রাপক জানান, ছোটবেলায় যখন কিছু বুঝতে শিখেছেন, সেই সময় তাঁর গ্রামে কোনও রকমের বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল না, টেলিভিশন তো দূর অস্ত। শুধুমাত্র রেডিও ছিল। অ্য়ান্টেনা সহ ব্যাটারি চালিত বড় রেডিও। বিকেল চারটের সময় যে ভাওয়াইয়া গান হত, তাঁর বাবা-দাদা-ঠাকুরদারা রেডিও চালিয়ে তাঁকে এই গান শোনাতেন।
আরও পড়ুন: এক রঙের পোশাক পরে নাইট আউট, ফাটিয়ে আড্ডা দিলেন সোনি-নীনারা, কী কী করলেন
গীতা রায় বর্মণের ছোটবেলা
ছোটবেলা থেকেই কানে উত্তরবঙ্গের ‘মাটির গান’ ভাওয়াইয়া শুনে শুনে গীতা দেবীর মনে ওই গানের প্রতি ভালোবাসা সঞ্চার হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘যখন আমি পড়াশোনাও করি না, তখন থেকেই আমি অনেক ভাওয়াইয়া গান করতে পারি। (হাসিমুখ) বাবা-দাদারা দেখলেন, আমার মধ্যে হয়তো সেই গুণ আছে, গান হয়তো করতে পারব। যেহেতু প্রত্যন্ত গ্রামে বাড়ি, তাই অনেক দূর দূর থেকে শিক্ষক মহাশয় নিয়ে এসেছিলেন আমাকে গান শেখানোর জন্য'।
আরও পড়ুন: বিগ বস ১৩ রি-ইউনিয়ন, আরতির সঙ্গীতে হাজির রশমি থেকে দেবলীনারা
আরও পড়ুন: ‘দিল তো পাগল হ্যায়’তে মাধুরী-করিশ্মার নাচ মনে আছে! ফের একবার মুখোমুখি দুই তারকা
গীতা রায় বর্মণের গান শেখা
গীতা দেবী যোগ করেছেন, ‘আমার যে মাস্টারমশাইরা, স্বর্গীয় বর্তমানে বেঁচে নেই- তিনজন গুরুদেব ছিলেন। ওঁনারাই শিলিগুড়ি আকাশবানীতে অডিশন দিয়ে, তারপর গান করি। সেখান থেকে যুব-তে গান করি। এরপর জেনারেল যে বিভাগটা রয়েছে, সেখানে আমি আকাশবানীর A গ্রেড শিল্পী’।
‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার প্রাপক জানিয়েছেন, ‘উত্তরবঙ্গে ভাওয়াইয়া সঙ্গীত পর্ষদ রয়েছে। সেই স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানে ভাওয়াইয়া বিষারদটাও করেছি এই গানের উপরে। রাজ্য ভাওয়াইয়া উৎসব হয়, সেখানে পর পর দুবার ফার্স্ট হয়েছি। একবার তৃতীয় হয়েছিলাম। এভাবেই গানটা চলছে’।
‘পদ্মশ্রী’ পেয়ে কেমন অনুভূতি
গীতা দেবী জানিয়েছেন, ‘কোনও দিন ভাবিনি আমি পদ্মশ্রী পুরস্কার পাব। আমি গানটা খুব ভালোবেসে করেছিলাম। করছি এখনও অবধি’। বিয়ের পরও গান চালিয়েছে গিয়েছেন তিনি। কীভাবে সামলান? রচনার প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘আমার স্বামী স্কুল শিক্ষক। আমার দুই ছেলে পড়ছে। যখন ছোট ছিল ওঁরা, তখন একটু অসুবিধে হয়েছিল। একটু বড় হয়ে ওরা আমার স্বামী যখন স্কুলে যেত, আমি দুপুরবেলা গানের চর্চা করতাম। একদিনও বাদ দেইনি। ২-৩ ঘণ্টা টানা গানের চর্চা করতাম। গানও লিখতাম, এখনও লিখি’।
জানান বাড়িতেই গানের স্কুল রয়েছে তাঁর। মোটামুটি ১০ বছর ধরে চালাচ্ছেন। সেখানে এখন গান শেখান। শেষে রচনার মন্তব্য, ‘আপনার মতো শিক্ষক রয়েছে, ওঁরা অনেক দূর এগোবে’।