বয়স ৯০-এর ঘরে ছিল। তারপরও এতটুকু উদ্যম কমেনি। অনলাইনে উঠতি প্রতিভাদের গান শেখাতেন। এমনটাই জানালেন পণ্ডিত যশরাজের কন্যা দুর্গা।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সোমবার নিউ জার্সিতে মৃত্যু হয়েছে ধ্রুপদী সঙ্গীত জগতের দিকপাল শিল্পীর। সেদিনই তাঁর মেয়ে বলেন, ‘উনি ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীত জগতের জন্য যা করেছেন, তা অভাবনীয়। সারা বিশ্বে তাঁর ধ্রুপদী সঙ্গীতের স্কুল ছিল - উত্তর আমেরিকা, কানাডা, মুম্বই, কেরালা এবং পুণেতে। ৯০ বছরেও উনি ভিডিয়ো চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে (গান) শেখাতেন। প্রযুক্তি বা অন্য কোনও কিছুর ক্ষেত্রে ওঁনার কোনও মানসিক বাধা ছিল না। সম্প্রতি তিনটি ভার্চুয়াল কনসার্টও করেছিলেন।’
সেই মানুষটার মৃত্যু মানতে পারছেন না কবি ও গীতিকার জাভেদ আখতার। তিনি বলেন, ‘হিন্দুস্তানি ধ্রুপদী সঙ্গীতের বিশাল বড় স্তম্ভ চলে গেলেন। ভারত এবং বিদেশে আমি পণ্ডিত যশরাজের সঙ্গে ছিলাম। মানুষ কীভাবে তাঁর সঙ্গে আচরণ করতেন, তাঁর প্রতি মানুষের যেরকম শ্রদ্ধা ও প্রশংসা ছিল, তা থেকেই মানুষটার প্রতিভা এবং নম্রতা প্রমাণিত হয়।’
প্রয়াত শিল্পী যে দর্শক-শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন, তা বলার জন্য ২০০৭ সালের নয়াদিল্লির একটি অনুষ্ঠান বেছে নেন জাভেদ। তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানের নাম ছিল তেরঙা এবং পুরোটাই তাঁর মেয়ে দুর্গা যশরাজ পরিকল্পনা করেছিলেন। সরাসরি জাতীয়তাবোধ বা দেশপ্রেমের ব্যাখ্যা না করে কবিতার মাধ্যমে ভারতের জাতীয় পতাকার বিবরণ দিতে হত। সেটি আমি আবৃত্তি করতাম। উনি কমলা রং নিয়ে পারফর্ম করেছিলেন, গান গেয়েছিলেন। শুধুমাত্র নিজের গলা, তাঁর তান এবং গান দিয়ে এমন পরিবেশ তৈরি করেছিলেন, যে বার্তাটা কবিতার মাধ্য়মে দিতে চাওয়া হয়েছিল।’
গায়ক হওয়ার আগে তবলাবাদক ছিলেন পণ্ডিত যশরাজ। ১৯৯০ সালে হায়দরাবাদের চৌমহল্লায় একটি অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল প্রখ্যাত তবলাবাদক অনীশ প্রধানের। পণ্ডিত যশরাজের বাবা, দুই দাদা মোতিরাম এবং মণিরামের সম্মানে প্রতি বছর সেই মণিরাম অনুষ্ঠান হত। অনীশ প্রধান বলেন, ‘গ্রিনরুমে আমার তবলা নিয়ে বসেছিলাম। পণ্ডিত যশরাজ আসেন এবং বলেন, একবার আমি চেষ্টা করে দেখি। এতদিন পরও বাদ্যযন্ত্র পুরোপুরি তাঁর দখলে ছিল। এটা রীতিমতো অবিস্মরণীয়।’
বিখ্যাত তবলাবাদক জানান, সেই কয়েকটি মিনিটে তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন, একজন সঙ্গীতপ্রেমীর নতুন করে বাদ্যযন্ত্র পাওয়ার আনন্দ। তিনি বলেন, ‘তাঁর মধ্যে স্টার হওয়ার কোনও বিষয় ছিল না। একজন সঙ্গীতজ্ঞ যা করতে ভালোবাসেন, সেটাই ছিল এবং তা ছিল হৃদয়গ্রাহী।’