বড় রাস্তার পাশেই দোকানটা। কিন্তু আলাদা করে আপনার নজর কাড়বে না মোটেই। পান, বিড়ি কিনতে গেলে নজরে পড়বে এক অদ্ভুত জিনিস। উপরের তাকে থরে থরে সাজানো বই। একদিকে কম্পিটিটিভ এক্সামের বই। আরেকদিকে রাখা পিন্টু পোহান নামক এক ব্যক্তি লেখা ছোটদের বই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল লেখক হলেন দোকানের মালিক স্বয়ং! এরপরই কথায় কথায় যা উঠে এল সেটা অকল্পনীয়।
১৯৯৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার পরই এই ২/২ সাইজের দোকানটি চালু করেন পিন্টু। দোকান না বলে এটাকে গুমটি বলাই ভালো। পেটের দায়ে দোকান খুলে বসলেও পড়াশোনার খিদে কিন্তু তাঁর যায়নি। নিজেই লেখালিখি করতে থাকেন। ছোটবেলার অভ্যেসটাকে নিয়মিত চর্চা করে ফেলেন। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখা পাঠাতে শুরু করেন। সকলকে অবাক করে দিয়ে দেশ, শুকতারা, ইত্যাদিতে লেখাও বেরোতে থাকে তাঁর। আর সেটাই যেন কোথাও একটা সাহস জুগিয়েছিল তাঁকে। আর সেই সাহসেই ভর করে এগিয়ে গিয়েছেন জীবনের দিকে।
পিন্টু জানান, 'সকালবেলা এসে যে দোকান খুলতাম আর বাড়ি যেতাম না। এখানেই থাকতাম। দুপুরে মুড়ি, বা কিছু খেয়ে পড়তাম, লিখতাম।' দোকানে বসে এই লেখালিখির জন্য তাঁকে সইতে হয়েছে বহু অবজ্ঞা, লাঞ্ছনাও। পাননি যথাযথ স্বীকৃতি। তবুও দমে যাননি পিন্টু। এই দোকানে বসেই নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে গেছেন।
ব্যবসা সামলিয়ে তিনি ৫টি বই লিখে ফেলেছেন ছোটদের জন্য। লিখেছেন ১১টি উপন্যাস। শুধুই কি তাই? ডিসটেন্সে স্নাতক হয়েছেন। অর্জন করেছেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও। কিন্তু জীবনে এগোলেও এই দোকান তিনি ছেড়ে যাননি। তাঁর কথায়, 'অনেক জায়গায় টুকটাক কাজ করার চেষ্টা করেছিলাম। কোথাও টাকা মেরে দিয়েছে। তো কোথাও পরিবেশ ভালো ছিল না। তাই নিজের এই দোকানটাই চালাব ঠিক করি।'
কিন্তু এভাবে ব্যবসা সামলিয়ে সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে ব্যবসার ক্ষতি হয় না? পিন্টুর কথায়, 'ক্ষতি তো হয়ই। কিন্তু কী করব এটাই আমার নেশা। আর দুটো পয়সা যাতে বেশি আসে তাই তো দুপুরে বাড়ি যাই না।' এই সামান্য আয়ে দুই সন্তান স্ত্রীকে নিয়ে জীবন 'চালিয়ে নিচ্ছেন' পিন্টু। কিন্তু তবুও তাঁর একমাত্র নেশা সাহিত্য চর্চা ছাড়তে নারাজ তিনি।
কিন্তু এখন যে বইমেলা চলছে, তিনি যাচ্ছেন না? এই বিষয়ে জানান, 'আমি জানি না কেন আমার এই সাহিত্য চর্চা কখনও কারও চোখে পড়ল না। আমায় কখনও ডাকা হল না। তাই আমি যাই না বইমেলায়। আর একদিন বইমেলা যাওয়া মানেই তো সারাদিন দোকান বন্ধ রাখা। দোকান না চললে খাব কী? খালি পেটে তো সাহিত্য চর্চা হয় না।'