সৌমিত্রহীন একটা সকাল। বাঙালি বোধহয় এখন দুঃস্বপ্নের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আলোর উত্সবের ফাঁকে সকলকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল বাঙালির প্রাণের অপু। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুশোক সহজে কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয়, তবে তাঁর সৃষ্টিতে তিনি আজীবন বেঁচে থাকবেন বাঙালি মনে। বাংলা তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রের মানচিত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
গতকাল সৌমিত্রর শেষযাত্রায় সারাক্ষণ পাশে ছিলেন রাজ চক্রবর্তী। টলিউডের এই নবীন পরিচালক কোনওদিন কাজ করেননি সৌমিত্রবাবুর সঙ্গে। এটাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখলেন রাজ। পরিচালক এও জানান প্রলয় ছবি তৈরির সময় তিনি সৌমিত্রবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তবে ডেট সমস্যায় ওই ছবির জন্য সময় দিতে পারেননি সৌমিত্র। তবে কাজ করবার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন ভবিষ্যতে।
রাজ ফেসবুকের দেওয়ালে লেখেন- 'ভেবেছিলাম ভালো একটা গল্প নিয়ে যাব তোমার কাছে। এখন শুন্যতার ভেতর আর কোন শব্দ নেই ,ছবি নেই। ইউক্যালিপটাসের বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছ জলপ্রপাতের ধারে দাড়াবে বলে।
প্রলয় করার সময় গেছিলাম তোমার কাছে।তখন সময় হল না তোমার ,তারপর ভেবেছি কতবার ,কবে কাজ করে পুর্ন হব, হৃদ্ধ হব। হয়নি। সেরকম গল্প ভাবতে পারিনি ,সেরকম চরিত্র দিতে পারিনি যা অপু, ফেলুদা ,শ্যাম, ময়ূর বাহন অথবা খিদ্দার মত অমোঘ হবে।
তাই সে স্বপ্ন অধরা থেকে গেল'।
রুপোলি পর্দার অভিনেতা সৌমিত্রর বাইরে নাট্যব্যক্তিত্ব সৌমিত্রেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন রাজ। লেখেন- 'নাটকের মঞ্চে তোমার উপস্থিতি যেন খোলা তলোয়ার ,শাণিত, তীক্ষ্ণ। টিকটিকি, নীলকন্ঠ ,ফেরা, রাজকুমার ,নামজীবন একের পর এক নাট্য অভিঘাতে ভাবিয়েছে আমাদের। এমন কি ঘটক বিদায় এর অসাধারন সেই মনোলোগ এখনো কানে ভাসছে'।
অগস্ট মাসেই পিতৃহারা হয়েছেন রাজ। তাঁর বাবারও করোনা রিপোর্ট পজিটিভ ছিল। সেই কঠিন সময়ের কথা মনে করে তিনি লেখেন-'অসুস্থ ছিলে বেশ কিছুদিন ধরে, খবর নিচ্ছিলাম কিন্তু ভয় পাচ্ছিলাম। কিছুদিন আগে বাবাকে হারিয়েছি ,তাই কেউ হসপিটালে গেলে আতঙ্কিত হই।
মন বলছিল যে ফেলুদা আবার ঘুরে দাঁড়াবে,মৃত্যু কে মগন লাল এর মত দেয়ালে দাঁড় করিয়ে ফেলু মিত্তিরের সার্কাস দেখিয়ে দেবে একবার। হল না। আসলে অন্য এক সময় তোমাকে ডাকছিল। তুমি সেখানে গেলে'।
গতকাল মুখ্যমন্ত্রী ফোন করে জানালেন খবরটা। যেতে বললেন।কতটা পথ কি ভাবে গেলাম জানি না। শুধু দেখলাম কত মানুষ কত গুণগ্রাহী চোখের জলে ,কবিতায় গানে তোমাকে শেষ শ্রদ্ধা ভালোবাসা জানালেন।আজীবন এই আক্ষেপ থেকে যাবে যে কাজ করা হল না।
সৌমিত্রর কবিতার লাইনেই এদিন সৌমিত্রকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। লিখলেন-' ভালো থেকো তুমি।তোমার কবিতার ভাষায় বলি- 'এখন ঢেউ এর সামনে এসে বসতেই আমি দেখলাম আমি নিঃস্ব'। প্রণাম'।