সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর দু'মাস পূর্তিতেও অভিনেতার মৃত্যু জট ঘিরে ধোঁয়াশা কাটছে। শুরু থেকেই সুশান্তের মৃত্যুর কারণ হিসাবে মুম্বই পুলিশের তত্ত্ব অবসাদগ্রস্ত হওয়ার কারণে আত্মহত্যা করেছেন সুশান্ত। যদিও এই দাবি শুরু থেকেই মানতে না-রাজ অভিনেতার ভক্তরা। সময় যত এগিয়েছে সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে তত বেশি প্রশ্ন সামনে এসেছে। যার উত্তর জানার চেষ্টা করছে দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা-ইডি এবং সিবিআই। এবিপি নিউজের দাবি রিয়ার কল ডিলেটস রেকর্ড বা সিডিআর অনুযায়ী ১৪ই জুন, সুশান্তের মৃত্যুর দিন ফোনে লম্বা সময় ধরে রিয়া চক্রবর্তী কথা বলেন এক রহস্যময়ী মহিলার সঙ্গে।
১৪ জুন রিয়া ১ ঘন্টার ৭ মিনিট ধরে ফোনে কথা বলেন সেই মহিলার সঙ্গে। রিয়ার ফোনে অভিশপ্ত ওই দিন ৭টি ফোন এবং ২৫টি মেসেজ এসেছে। অন্যদিকে রিয়া ৯টি ফোন করেছেন। সুশান্তের মৃত্যুর দিন সকাল ৭টা ৩৮ মিনিটে রাধিকা মেহতা নামের ওই মহিলা ফোন করেছিলেন। দুজনের মধ্যে ৩০ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড কথা হয়।
এরপর রিয়া ৮টা বেজে ৮ মিনিটে রাধিকাকে পাল্টা ফোন করেন এবং তখনও দুজনের মধ্যে ৩০ মিনিট কথা হয়। এরপর রিয়া তৃতীয়বার রাধিকা মেহতা সকাল ৮টা বেজে ৩৮ মিনিটে ফের ফোন করেন এবং দুজনের মধ্যে ৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ড কথা হয়। সবমিলিয়ে সুশান্তের মৃত্যুর কয়েকঘন্টা আগে রাধিকা মেহতা নামের এই মহিলার একটানা তিনবার কথা বলেন। কী নিয়ে তাদের এই দীর্ঘ আলোচনা চলছিল, তাও রবিবারের সকালে তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
কিন্তু এই রাধিকা মেহতা কে? সে সম্পর্কে এখনও কোনও তথ্য সামনে আসেনি। সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকেই নেটিজেনদের নিশানায় সুশান্তের বান্ধবী। রিয়ার কল ডিটেলস রেকর্ড থেকে এটাও জানা গিয়েছে ৮ জুন সুশান্তের অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে ১৪ জুন সুশান্তের মৃত্যু পর্যন্ত দুজনের মধ্যে ফোনে কোনওরকম যোগাযোগ হয়নি। বেশকিছু মিডিয়া রিপোর্টে এমনটাও দাবি করা হয়েছে সুশান্তের নম্বর ব্লক করে দিয়েছিলেন রিয়া। রিয়ার কল ডিলেটস রেকর্ড থেকে আরও একটি নম্বর ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই তালিকায় থাকা AU-কে ঘিরে। রিয়ার ফোন থেকে বেশ কয়েকবার ফোন গিয়েছে এইউকে। কিন্তু কে এই এইউ? তা তদন্ত সাপেক্ষ।
গত ১৪ জুন সুশান্তের বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার হয় অভিনেতার দেহ। যদিও আজ মৃত্যুর দুমাস পরেও মুম্বই পুলিশ এই মামলায় কোনও এফআইআর দায়ের করেনি। সুশান্তের ময়না তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট বলছে ‘ঝুলে পড়বার কারণে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু’ হয়েছে অভিনেতার।
সুশান্তের গার্লফ্রেন্ড রিয়া এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত, সুশান্তের সঙ্গে প্রতারণা (আর্থিক ও মানসিক) এবং তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মতো অভিযোগ এনে গত ২৫শে জুলাই পাটনার রাজীব নগর থানায় এফআইআর দায়ের করেন কেকে সিং। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ (আত্মহত্যায় প্ররোচনা), ৩৪১,৩৪২,৩৮০,৪০৬, ৪২০-ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। আপতত বিহার সরকারের সুপারিশ মেনে সিবিআইকে এই মামলার তদন্ত সঁপে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার।
এই মামলার সিবিআই তদন্ত এবং বিহার পুলিশের জুরিসডিকশন নিয়ে ইতিমধ্যেই রিয়ার পিটিশনের শুনানি শেষ হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার রায় সংরক্ষিত রেখে গতকালের মধ্যে সকল পক্ষকে লিখিত জবাব জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, তা জমা পড়েছে ইতিমধ্যেই।