সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত মাদককাণ্ডে গতকাল এনসিবির হাতে গ্রেফতার হন রিয়া চক্রবর্তী। মঙ্গলবার রাতেই তাঁকে পেশ করা হয় ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে। এনসিবির দাবি মেনে রিয়ার ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজত মঞ্জুর করেন ম্যাজিস্টেট। খারিজ হয় রিয়ার জামিনের আর্জি। বুধবার সকালে সেশন কোর্টে রিয়ার নতুন জামিনের আবেদন দাখিল করেন অভিযুক্তর আইনজীবী সতীশ মানেসিন্ধে।
সেই আবদনে মানেসিন্ধে জানান তাঁর মক্কেল ‘নির্দোষ’ এবংং ২৮ বছরের এই অভিনেত্রীকে ‘এই মামলায় মিথ্যা ফাঁসানো হচ্ছে’। তিনি যোগ করেন ‘উনি কোনওরকম অপরাধ করেননি’।
আগামিকাল সেশন কোর্টে এই জামিনের আবেদনের শুনানি হবে। জামিনের আবেদনে রিয়া বলেছেন, অপরাধমূলক স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য তাঁকে জোর করা হয়েছিল এবং ৮ সেপ্টেম্বর দাখিল করা নিজের জামিনের আবেদনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ধরনের সমস্ত অপরাধমূলক স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আবেদনকারী (রিয়া)।
রবিবার থেকে টানা তিনদিন রিয়াকে জেরা করেন এনসিবির আধিকারিকরা। মঙ্গলবার বিকালে গ্রেফতার করা হয় সুশান্ত মামলার মূল অভিযুক্তকে। জামিনের আবেদনে রিয়া আরও অভিযোগ করেছেন, ‘জেরার সময় কোনও মহিলা অফিসার ছিল যা আইন অনুসারের বাধ্যতামূলক’। এই প্রসঙ্গে শীলা বারসে বনাম মহারাষ্ট্র সরকারের একটি মামলার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলা হয় মহিলা অভিযুক্তদের জেরা চলাকালীন মহিলা পুলিশ কিংবা কনস্টেবেল থাকা বাধ্যতামূলক। আদালতের সেই গাইডলাইন মেনে চলেনি কেন্দ্রীয় সংস্থা অভিযোগ রিয়ার।
রিয়া চক্রবর্তী এবং শৌভিক চক্রবর্তীকে নাককোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর তরফে এনডিপিএস আইনের একাধিক ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ২৭ (এ) ধারাটি, অর্থাত্ অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ। এই ধারার জেরেই মঙ্গলবার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে রিয়ার জামিনের আর্জি খারিজ হয়।
কোনও ধারায় যদি ১০ বছর বা তার বেশি সাজা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সেই মামলায় জামিন মঞ্জুর করবার জুরিসডিকশন নেই ম্যাজিস্ট্রেটের। ২৭ (এ) ধারায় কমপক্ষে ১০ বছর, এবং সর্বাধিক ২০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে।
রিয়ার আইনজীবী সতীশ মানেসিন্ধে রিয়ার উপর এনডিপিএস আইনের এই ধারা যোগ করবার বিরোধিতা করেন। তিনি সওয়াল করেন এই মামলায় খুব অল্প পরিমাণ মাদক জড়িত রয়েছে। তাই মাদক সেবনের অভিযোগ স্বরূপ এনডিপিএস আইনের ২৭ ধারা যোগ করা যেতে পারে এক্ষেত্রে। এই ধারায় দোষী প্রমাণিত হলে খুব বেশি হলে এক বছরের সাজা দেওয়া হয় এবং সেটি জামিন যোগ্য ধারা।
এনসিবির তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় রিয়া চক্রবর্তীকে মাদক সেবনের জন্য গ্রেফতার করা হয়নি। তিনি নিজের জবানবন্দিতে সুশান্তের জন্য মাদক সংগ্রহ করবার কথা মেনে নিয়েছেন। তাই তাঁর জন্য ২৭ (এ) ধারা প্রযোজ্য। সেক্ষেত্রে কোনওভাবেই তাঁকে জামিন দেওয়া হতে পারে না।
আপতত মুম্বইয়ের বাইকুল্লা সংশোধনাগারের ঠাঁই হয়েছে রিয়ার। আজ সকালেই জেলে স্থানান্তরিত করা হয় রিয়াকে।
জামিনের আর্জি থেকে নিজের জবানবন্দি থেকেই ইউটার্ন নিলেন রিয়া চক্রবর্তী। রিয়ার পাশাপাশি আগামিকাল আদালতে উঠবে শৌভিক চক্রবর্তীর জামিনের আর্জিও। ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনসিবির রিম্যান্ডে ছিলেন শৌভিক, স্যামুয়েল, কেশবরা। আজই তাঁদের কাস্টডি রিম্যান্ড শেষ হচ্ছে। আগামিকাল সকলেই আদালতে তোলা হবে।