ওয়েব সিরিজ: বোধন ২
পরিচালক: অদিতি রায়
প্ল্যাটফর্ম: হইচই
অভিনয়ে: সন্দীপ্তা সেন, কৌশিক রায়, ইন্দ্রাশিস রায়, দেবজ্যোতি রায়চৌধুরী, প্রমুখ
রেটিং: ৪.২/৫
ইপিলপুরে নির্বিঘ্নে চলছে মেয়ে পাচার। জানে সবাই কিন্তু রোখার ক্ষমতা? উহু সেটা কারও সাধ্যি নেই। কারণ তাহলে যে নিজের প্রাণ দিতে হবে। এমন সময় সেখানে পৌঁছল রাকা সেন। সে কি এই গ্রামের নির্দোষ মানুষগুলোকে বাঁচাতে পারবে? বোধন ২ দিল সেই উত্তর।
বোধন ২ -এর স্টোরিলাইন
সদ্যই মুক্তি পেয়েছে অদিতি রায় পরিচালিত বোধন সিরিজের দ্বিতীয় অধ্যায়। হইচইয়ের এই সিরিজ ছয় পর্বের। এখানে দেখা যাবে রাকা সেন বিয়ের পর বরের সঙ্গে ইপিলপুরে গিয়ে কোন কোন বিপদে জড়ায় আর সেখান থেকে নিজের পাশাপাশি সকলকে কী করে উদ্ধার করে সেই গল্পই।
বোধন ২ -তে সমাজের কিছু নির্মম সত্য তুলে ধরা হয়েছে। গ্রামেগঞ্জে আজও কীভাবে নির্বিচারে মেয়েদের উপর অত্যাচার চলছে, তাদের বেচে দেওয়া হচ্ছে সেটার ভয়ঙ্কর নিকষ কালো রূপ তুলে ধরা হয়েছে এখানে। বাদ যায়নি ডাইনি প্রথার কথাও। কাজে বাধা দিলে আজও কীভাবে মেয়েদের হত্যা করা হয় ডাইনি আখ্যা দিয়ে সেটাও উঠে এসেছে গল্পে। একই সঙ্গে দেখা গিয়েছে মেয়েরা নিজেরাই কীভাবে নিজেদের হয়ে লড়াই করতে পারে, নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারে। সত্যের মুখোমুখি হতে পারে। পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে সিউডো ফেমিনিজম নয়, বরং নারীশক্তির জয়গান গাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: মিঠুনের কাবুলিওয়ালা যেন সাদা কালো নস্টালজিয়ার রঙিন রূপ, একটুকরো ভালো লাগা বয়ে আনল সুমন ঘোষের ছবি
আরও পড়ুন: বড়দিনের মন ভালো করা সিনেমা 'ডাঙ্কি', শাহরুখের ছবি শেখাবে অনেক কিছুই
কে কেমন অভিনয় করলেন বোধন ২ -তে?
ক্ষমতার প্রয়োজন নেই, বরং যদি ইচ্ছে থাকে তাহলে ক্ষমতাবান মানুষের সঙ্গে সাধারণ মানুষ লড়তে পারে যে, সদিচ্ছার জোরে যে সবটা করে যায় সেটা নিজের চরিত্র দিয়ে দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন রাকা ওরফে সন্দীপ্তা সেন। শেষ দৃশ্যে সন্দীপ্তার অভিনয় মনে থাকবে বহুদিন। অন্যদিকে রিজুর চরিত্রে কৌশিক রায় যথাযথ। ইন্দ্রাশিস যে খলনায়কের চরিত্র দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন সেটার প্রমাণ তিনি আগেও দিয়েছেন, এবারও দিলেন। তবে বোধন ২ -তে যিনি সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন তিনি হলেন বুধূয়া। ওরফে দেবজ্যোতি রায়চৌধুরী। ওই নোংরা দাঁত বের করে হাসি, বা চোখে মুখে তিনি যেভাবে শয়তানি ফুটিয়ে তুলেছেন সেটা সত্যি বাহবার যোগ্য। জঙ্গলে সনাতনীকে খুঁজে বেড়ানোর দৃশ্য হোক বা বৃষ্টির রাতে রাকার মুখোমুখি হওয়া, বুধূয়ার চরিত্রটি দেবজ্যোতি যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সেটা সত্যি তারিফের যোগ্য।
ক্যামেরার কাজ বেশ ভালো। কিছু সিন তো রীতিমত নজর কেড়েছে। স্ক্রিপ্ট দারুণ টানটান। একবার দেখা শুরু করলে শেষ না করে থামা যাবে না। গল্পটাকে কোথাওই এতটুকু ঝিমিয়ে পড়তে দেননি পরিচালক।
এই সিরিজে একটিই গান আছে অদিতি চক্রবর্তীর কণ্ঠে আমার হাত বান্ধিবি পা বান্ধিবি, খালি গলায় গাওয়া এই গান হৃদয়কে ছুঁয়ে যেতে বাধ্য। তবে কেবল স্ক্রিপ্ট, গান বা ক্যামেরার কাজ নয়। এই সিরিজের অন্যতম প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে সকলের উচ্চারণ। এত নিখুঁত যে একবারের জন্যও মনে হয়নি আর এঁরা তো সকলেই আমার শহরের সহনাগরিক। মনে হয়েছে এঁরা সকলেই বছরের পর বছর ধরে ইপিলপুরেই থাকেন।
ওভারঅল কেমন লাগল?
এই যুগে দাঁড়িয়ে সমাজের জন্য একটা দারুণ বার্তা ‘বোধন ২’। 'বোধন'-এর মতো তার দ্বিতীয় ভাগও সমান ভাবে ভালো লাগতে বাধ্য। শুধু তাই নয়, ভাবাবেও এই সিরিজ, একই সঙ্গে জোগাবে সাহসও।