ছবি: ডাঙ্কি
পরিচালক: রাজকুমার হিরানি
অভিনয়: শাহরুখ খান, তাপসী পান্নু
রেটিং: ৪.৮/৫
'বড়ি দুবিধা থি ইয়ার' হাসব না কাঁদব! ডাঙ্কি রিভিউ যদি এক কথায় বলেন তাহলে বলব এটুকুই। ভরপুর কমেডির সঙ্গে একটা ইমোশনাল রোলার কোস্টার রাইড। ২১ ডিসেম্বর মুক্তি পেল শাহরুখ খানের এ বছরের তৃতীয় ছবি ডাঙ্কি। কেমন হল সেটাই এবার বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
একদিকে থাকে সুদিনের স্বপ্ন, হাতছানি। আরেকদিকে বাড়ি, পরিবার, আত্মীয়, চেনা মুখ সবটা ছেড়ে চলে যাওয়ার কষ্ট। তবুও সবটা মেনে অনেকেই সুদিনের আশায়, স্বপ্নপূরণের লক্ষ্য নিয়ে পাড়ি দেন বিদেশে। কেউ কেউ আবার আইনি ভাবে ভিসা না পেয়ে বেছে নেন বেআইনি পথ। ডঙ্কি পদ্ধতি প্রবেশ করেন ভিনদেশে। কী হয় তাঁদের সঙ্গে সেটারই এক নিদারুণ গল্প উঠে এল রাজকুমার হিরানির এই ছবিতে।
- ডাঙ্কির গল্প
প্রথমে আসা যাক গল্পে। হার্ডি পেশায় একজন সেনা অফিসার ছিলেন। যিনি গুলিবিদ্ধ হলে এক অ্যাথলিট তাঁকে বাঁচায়। এরপর সেই অ্যাথলিটের টেপ রেকর্ডার যা হার্ডির কাছে থেকে গিয়েছিল সেটা তিনি তাঁর বাড়িতে ফেরত দিতে গিয়ে প্রেমে পড়েন মনুর। খুঁজে পান নতুন করে বাঁচার মানে। খুঁজে পান অনেক বন্ধুও। ঘটনাচক্রে মনু এবং তাঁর বন্ধুরা নিজেদের ভবিষৎ ভালো করার জন্য বিদেশ যেতে চান, কিন্তু দুর্বল ইংরেজি থুড়ি তাঁদের ভয়ঙ্কর ইংরেজির জন্য ভিসা পান না। এমতাবস্থায় প্রেমিকা এবং বন্ধুদের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্য নিয়ে তাঁদের নিয়ে হার্ডি বেরিয়ে পড়েন লন্ডনের উদ্দেশ্যে। পথে কী কী হয় তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারেন কিনা শেষ পর্যন্ত সেটা নিয়ে ছবির গল্প। তবে এটুকু বলতে পারি গল্পটা যতটা সহজ মনে হল সেটা একেবারেই নয়। বরং এতে ভরপুর টুইস্ট এবং টার্ন আছে। আছে ভরপুর ইমোশন, ভরপুর কমেডি এবং অল্প বিস্তর অ্যাকশন।
- ডাঙ্কিতে কে কেমন অভিনয় করল?
শাহরুখের এই বছর মুক্তি পাওয়া পাঠান বা জওয়ানের থেকে ডাঙ্কি অনেক আলাদা। অ্যাকশন থেকে দর্শক এবং ভক্তদের অন্য কিছু উপহার দিলেন কিং খান বড়দিনে। তাঁর হিউমার সেন্স এবং কমিক টাইমিং নিয়ে নতুন করে কী বলি! তাঁর ডায়লগ এবং সাবলীল অভিনয় দেখে আপনি খিলখিলিয়ে হাসতে বাধ্য। আবার তেমনই কোনও ইমোশনাল বা রোম্যান্টিক সিনে তাঁর অভিনয় বরাবরের মতোই নজর কেড়েছে।
অন্যদিক তাপসী পান্নু ফাটিয়ে দিয়েছেন। বাই গড বলছি অভিনেত্রীকে বয়স হলে কিন্তু সেই লাগবে। কিন্তু এই ছবিতে তাঁকে কখনও কখনও কেন যে ঋদ্ধি ডোগরা আর অমরদীপ ঝার মতো লাগল বুঝলাম না!
বিক্রম কোচ্চার, অনিল গ্রোভার নিজ নিজ ভূমিকায় যথাযথ। তবে অল্প সময়ে আলাদা ভাবে নজর করলেন ভিকি কৌশল। তাঁর মনোলগ হোক বা ইমোশনাল কোনও সিন সবেতেই যেন ছাপিয়ে গিয়েছেন সকলকে।
- ওভারঅল কেমন লাগল ডাঙ্কি?
সিনেমাটোগ্রাফি ভীষণই ভালো। বিশেষ করে শাহরুখ খানরা ভারত থেকে ডঙ্কি পদ্ধতিতে যখন লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন সেই সময় নদীর মধ্যে সিন বা ইরানের মরুভূমির দৃশ্য বিশেষ ভাবে নজর কেড়েছে। তুর্কি যাওয়ার পথে শাহরুখ তাপসীর ট্রেনের সিন মনে থাকবে। এমন টুকটাক অনেক দৃশ্য রয়েছে যা ছবি, গল্প বা অন্যান্য সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়ে বিশেষ ভাবে মনে দাগ কেটেছে। গল্পের বাঁধন বড়ই সুন্দর, কোথাও এতটুকু ঝিমিয়ে পড়তে দেননি পরিচালক। বরং এক মুহুর্তে কাঁদিয়ে পর মুহূর্তে হাসিয়েছেন। প্রথম দিকে শাহরুখের লালটুতে এন্ট্রি সিনে দর্শকরা বুঝে উঠতে পারছিলেন না যে জাতীয় সঙ্গীত শুনে উঠে দাঁড়াবেন নাকি হাসবেন। আবার তেমনই শেষ দৃশ্যে যখন প্রাণভরে সকলে হাসতে শুরু করেছিলেন তখনই ইমোশনাল টুইস্ট মন খারাপ করে দেয়। আবার দেশ ছাড়ার আগে মাটি নিয়ে যাওয়া বা দেশে ফিরে খালি পায়ে হাঁটা সবটাই এক অনন্য মুহূর্ত তৈরি করেছিল। তাই সবটা মিলিয়ে দুর্দান্ত লাগল শাহরুখের এই ছবি। ছবির সংলাপ অনুযায়ী এখন এটাই দেখার যে 'হ্যাট্রিক হয় কিনা!'
ছবি হিট করে হ্যাট্রিক করবে কি না সেটা তো সময় বলবে। তবে এই ছবি যে অনেক কিছু শেখাল সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সংলাপ থেকে শেষের নোট সবটাই শিক্ষণীয়। তবে বেশি করে যে সংলাপ নজর কাড়ল সেগুলো হল, 'পাখিরা যেটা বোঝে মানুষ কেন বোঝে না যে প্রয়োজন না হলে কেউ নিজের ঘর ছাড়তে চায় না' এবং 'আমার দেশ আমারই। সেটা যেমনই হোক আমার। আমার দেশে আমার কোনও মৃত্যুভয় নেই।'
ছবির প্রতিটা গান এত বেশিই অ্যাকিউরেট যে কোনওত শুনেই মনে হয়নি যে সেটা জোর করে ঢোকানো হয়েছে। বরং প্রতিটা পরিস্থিতির সঙ্গে গানগুলো যেন ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে।
- খারাপ কি কিছুই লাগেনি?
হ্যাঁ, একটা বিষয় বড়ই চোখে লাগল। বয়স হওয়ার পর শাহরুখ, তাপসীর মুখের চামড়া কুঁচকে গেলেও হাতের চামড়া ঠিক ছিল। এই দিকে বোধহয় নজর দেওয়া উচিত ছিল।
ওভারঅল একটা ইমোশনাল রোলার কোস্টার রাইড চড়ার জন্য, ভরপুর হাসার জন্য বড়দিনের ছুটিতে এই ছবি একদিন নির্দ্বিধায় দেখে আসা যেতে পারে।