ছবি: কাবুলিওয়ালা
পরিচালক: সুমন ঘোষ
অভিনয়: মিঠুন চক্রবর্তী, অনুমেঘা কাহালি, আবির চট্টোপাধ্যায়, সোহিনী সরকার
রেটিং: ৪.২/৫
যাঁরা ৮০-৯০ দশকের ছেলেমেয়ে তাঁদের এক টুকরো ছেলেবেলা ফিরিয়ে দিলেন সুমন ঘোষ। রবি ঠাকুরের কাবুলিওয়ালার এই নবীন সংস্করণ বহুদিন মনে থেকে যাবে যে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে শুরুতেই বুঝে গিয়েছেন ছবিটা কেমন লেগেছে! তবুও চলুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক কোন বিষয়টি বেশি ভালো লাগল, কোনটা কম, কেন দেখবেন এই ছবি ইত্যাদি, প্রভৃতি।
ছবির গল্প নিয়ে নতুন করে কী বলি, সকল বাঙালির অতি পরিচিত কাবুলিওয়ালার উপর ভিত্তি করেই বানানো হয়েছে এই ছবিটি। তবে কিছু জায়গায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে বা যোগ করা হয়েছে। কিন্তু সেটা সামান্যই।
কাবুলিওয়ালা ছবিতে কার অভিনয় কেমন?
সবার থেকে ছোটজনকে দিয়েই শুরু করা যাক। অনুমেঘা বাস্তবে যেমন, পর্দাতেও তেমন। পরিচালক সত্যিই ওর স্বতঃস্ফূর্ত ভাবটা এখানে বজায় রেখেছেন। সেই দুরন্তপনা, সেই সারল্য, মজা, হাসি আনন্দ একে নিখুঁত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতটুকু মনে হয়নি অনুমেঘা অভিনয় করেছে, ভীষণ ভালো। হলজুড়ে কেবলই ওর প্রশংসা।
আরও পড়ুন: বড়দিনের মন ভালো করা সিনেমা 'ডাঙ্কি', শাহরুখের ছবি শেখাবে অনেক কিছুই
এবার বলি মিনির বন্ধু কাবুলিওয়ালা ওরফে মিঠুন চক্রবর্তীর কথা। রবি ঠাকুরের গল্পে থাকা রহমতের সারল্য ধরা পড়েছে মিঠুনের মধ্যে। হিন্দি বাংলা মিশিয়ে বেশ সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি রহমতের চরিত্রটি। শেষ দৃশ্যে যখন ও কাবুলিওয়ালা, কাবুলিওয়ালা বলতে বলতে মিঠুন চলে যাচ্ছেন মিনির বাড়ি থেকে তখন কান্না চেপে রাখা দায়। রাগ, আনন্দ, মজা, যন্ত্রণা সবটা যথাযথ ভাবে মেপে মেপেই যেন মহাগুরু এই ছবিতে দিয়েছেন। একই সঙ্গে সাক্ষাৎকারে যে বলেছিলেন 'এই ছবি বোঝাবে মানব ধর্ম সবার উপরে' সেটা কাঁটায় কাঁটায় তাঁরা সকলে মিলে প্রমাণ করে দিলেন।
আবির চট্টোপাধ্যায় এবং সোহিনী সরকার মিনির বাবা মায়ের চরিত্রে একেবারে পারফেক্ট। বাবা মেয়ের মধ্যে যে সম্পর্ক সেটা সুন্দর করে তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। গুলশানারা খাতুন, কাঞ্চন মল্লিক, সহ বাকিরাও নিজ নিজ চরিত্রে যথাযথ।
কাবুলিওয়ালার অন্যান্য বিষয় কেমন লাগল?
সবার আগে গান নিয়ে বলি। ছবির একদম শুরুতেই আছে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের কণ্ঠে ‘ও হে কাবুল মানুষ’ গানটি অনবদ্য। ছবির পরিস্থিতির সঙ্গে গানের কথা, ভিজ্যুয়াল ভীষণ ভালো লেগেছে। ‘খুশি কী ইদ’ তো ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে। শেষে অরিজিৎ সিংয়ের গানটি ছোটবেলার অনেক স্মৃতি ফিরিয়ে দিল। ফলে কাবুলিওয়ালার মিউজিক একবারের ১০ এ ১০। ছবির একাধিক দৃশ্য, কালার বেশ ভালো। ঠিক মনে হল সাদা কালো পুরনো ছবিতে কেউ রং ছড়িয়ে দিয়েছে। একাধিক দৃশ্য যেমন হাসাবে, যেমন মিঠুন অনুমেঘার নাচ বা তাঁদের কথোপকথন; তেমনই একাধিক দৃশ্য কাঁদাবেও বটে। আবার কিছু দৃশ্য দেখে মনে হবে ঠিক হয়েছে, এমনটাই হওয়া উচিত।
বড়দিনে শিশুদের নিয়ে তো বটেই, বড়দেরও এই ছবি দেখা উচিত। এই অস্থির সময়ে এই ছবি এক দারুণ বার্তা দেবে সমাজকে। ফিরিয়ে দেবে নস্টালজিয়াও।