HT বাংলা থেকে সেরা খবর পড়ার জন্য ‘অনুমতি’ বিকল্প বেছে নিন
বাংলা নিউজ > বায়োস্কোপ > মা আর তেজেন্দ্র মামার জন্যই সুরের পথে এতটা হাঁটা হল: সাত্যকি বন্দ্যোপাধ্যায়

মা আর তেজেন্দ্র মামার জন্যই সুরের পথে এতটা হাঁটা হল: সাত্যকি বন্দ্যোপাধ্যায়

আগামী ২৮ এপ্রিল যাদবপুরে রয়েছে তাঁর একক গানের অনুষ্ঠান। তিনি সাত্যকি বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছুদিন আগেই 'বিরহী ২' ওয়েব সিরিজে যাঁর 'চাঁদগান' শুনে মুগ্ধ হয়েছেন অনেকে। HT বাংলাকে তিনি জানালেন তাঁর অজানা জীবনকথা। শিল্পীর মুখোমুখি অরুণাভ রাহারায়

সাত্যকি বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সৃঞ্জয়

প্রশ্ন: আপনার জীবনে মায়ের প্রভাব সবথেকে বেশি। সেই কথা আপনার মুখ থেকেই শুনতে চাই।

সাত্যকি: মায়ের প্রভাব যে ঠিক কতটা, তা বলে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমার দাদা সেতার শিখত, আর আমি সরোদ শিখেছিলাম। মা না থাকলে সরদ শেখা হত না কোনওদিন। মা সরকারি অফিসে চাকরি করার পাশাপাশি নাটক, নাচ-- অনেক কিছু করেছেন। সবথেকে বড় কথা, মা কোনওদিনও আমায় মধ্যবিত্তের গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখেননি। আমার দাদা প্রথম থেকেই খুব ভালো ছাত্র, পড়াশোনায় দারুণ। ও অপূর্ব সফল হয়েছে জীবনে।

আমি প্রথম থেকেই গানবাজনা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারতাম না। মাঝে ভেবেছিলাম চলচ্চিত্র নিয়ে পড়ব। তাই দিল্লি গিয়ে আবার ফিরেও এসেছিলাম। ভেবেছিলাম কলকাতা থেকে পুণে যাব। তখন মা আমায় নিয়ে গেলেন রমাপ্রসাদের কাছে। ওনার বোঝানোতেই সেই ভাবনাচিন্তা দূর হয়। এখন বুঝতে পারি ওগুলো আজগুবি চিন্তাভাবনা ছিল। ভাগ্যিস কেটে গিয়েছিল। ২০০১ সালে আমি দোতারা নিয়ে গিয়েছিলাম দিল্লিতে। ইতিহাসই পড়তাম। প্রথমে দোতারা নিয়ে যাই। তার পিছনেও খানিকটা মা দায়ী! কারণ, আমি মাকে বলেছিলাম, মা, দিল্লিতে থাকতে ভালো লাগছে না। আমার সরোদ নিয়ে যেতে চাই। সরোদটা থাকলে আমিও দিল্লিতে থাকতে পারব।

মা বলেছিলেন, এই সরোদ আমি কোথাও নিয়ে যেতে দেব না। এই যন্ত্রটা ভেঙে গেলে আমি আর গড়িয়ে দিতে পারব না। তখন আমি লালবাজার থেকে সরোদের মতো দেখতে একটা দোতারা কিনে নিয়ে গেলাম। দামও কম। পড়ে বা ভেঙে গেলে চিন্তাও নেই। প্রথমত এটা ছোটবেলা থেকে বাজাচ্ছি না। ভাঙলে আরেকটা কিনেও নিতে পারব। সেই থেকে দোতারা বাজানো শুরু। তারপর অদ্ভুতভাবে দোতারায় ঢুকে গেলাম।

পড়াশোনা ছেড়ে কলকাতায় ফিরে আসার পর আমি নেতাজি নগর কলেজে প্রথমে সান্ধ্য ভাগে ও পরে মহিলা ভাগে তিন-চার বছর পড়িয়েছিলাম। মাসে ৩২টা ক্লাস ছিল। বেতন ছিল চার হাজার টাকা। তার মধ্যে দুই হাজার টাকা পেতাম। বাকি দুই হাজার টাকা বকেয়াই থেকে যেত। যদিও আমার তেমন অসুবিধা হয়নি। কারণ, তখন তো যাদবপুরের ছায়াতেই থাকতাম। ঘুরতাম, ফিরতাম, চলে যেত। ওই সময় একটা রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ডিং-এ সরোদ বাজানোর আমন্ত্রণ পেলাম। সকালবেলা পার্থদা (পার্থ মজুমদার) নিয়ে গেলেন। সারাদিন বাজালাম। শেষে ওরা আমায় দুই হাজার টাকা দিল। মাকে এসে বললাম, সারামাস পড়িয়ে, ৩২টা ক্লাস করিয়ে যা টাকা পাই, একটা রেকর্ডিং-এ যদি সেই টাকাই পাই, তাহলে আমি গানবাজনাই করি।

মা সঙ্গে সঙ্গে বলেন, আমি তো তোকে চিরকালই বলে এসেছি, তোর ইচ্ছা হলে তুই গানবাজনা কর। তবে, আমি সরোদ ছেড়ে বাউল গানে ঢুকে যাওয়ায় মায়ের প্রথম প্রথম খুব অসুবিধা হতো। বলতেন, তুই সরোদটা একেবারে কেন ছেড়ে দিলি? ১৫-১৬ বছর বাজিয়েছিস। তুই গান কর, দোতারা বাজা। কিন্তু, সরোদ ছাড়বি কেন? একদিন আমার গুরুজি দীপক চৌধুরীর কাছে নিয়ে গেলেন। আমি ওনাকে গুরুজি মামা বলে ডাকতাম। উনি আমার মায়েরও গুরুজি ছিলেন। গুরুজিমামা বললেন, তুই বাউল গান গাইছিস এখন? একটা গান শোনা তো।

আমি দোতারা নিয়েই গিয়েছিলাম। বনমালি তুমি পরজনমে... গানটা গেয়ে শোনালাম। শুনে গুরুজিমামা মাকে বললেন, মাইমা আপনি ওকে গান করতে বারণ করবেন না ও কী ভালো গান করেছে আপনি জানেন? তারপর আমায় বললেন, শোন যে পথে থাকবি একপথে থাকবি। গান করার ইচ্ছে হলে শুধু গান করবি, আর কিচ্ছু করবি না। তারপর মা-ও বুঝতে পারলেন কিছু একটা ব্যাপার আছে আমার মধ্যে। আগেও বুঝতেন। কিন্তু, তাও ভাবতেন, সরোদ ছেড়ে দেবে? আসলে আমি যাতে সরোদ বাজাতে পারি তার জন্য বাবা-মা প্রচুর চেষ্টা করেছিলেন। যাতে পুরোপুরি বখে না যাই তার জন্য আগলে রাখার চেষ্টা করেছিলেন যথা সাধ্য। মা বাবা দাদার ঋণ আমি কখনও শোধ করতে পারব না।

সাত্যকি বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সৃঞ্জয়

প্রশ্ন: এক সময় পন্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের কাছে সরোদ শিখতেন। সেই সময়কার কথা যদি একটু বলেন…

সাত্যকি: গুরুজি মামার (দীপক চৌধুরি) কথা আগেই বলেছি। ছোটবেলায় মা ওনার কাছেই আমায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তবলা শেখার পর গুরুজিমামা জিজ্ঞেস করলেন, তুই কী শিখবি বল। সেতার শিখবি? আমি তো তখন খুব ছোট ছিলাম। বলেছিলাম, আমি শিখব যে যন্ত্রে কোনও দাগ নেই। মানে সেতারে তো ঘাট থাকে। সরোদে কোনও ঘাট বা দাগ থাকে না। তখন গুরুজিমামাই সরোদ শেখার জন্য তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদারের কাছে পাঠান। মাকে বলেছিলেন, মাইমা ওকে তেজেন্দ্রর কাছে নিয়ে যান। আমি বলে দিচ্ছি।

ওনাকেও আমি মামা বলতাম। সত্যি বলছি, তেজেন্দ্র মামা এত আদরে আমায় সরোদ শিখিয়েছিলেন, এখনও ভাবলে আমার চোখে জল চলে আসে। আমার হাতটা ধরে তৈরি করে দিয়েছিলেন তেজেন্দ্রমামা। এই হাতের গোড়ার বীজটা মাটিতে পুঁতে দিয়েছিলেন তেজেন্দ্রমামা। এরকম গুরুভাগ্য সবার হয় না। কোলে বসিয়ে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকে হাতটা তৈরি না হলে আমার এই এখনকার পরিচয়টাই তৈরি হতো না। উনিই নদী, উনিই সেতু। আমার ভাগ্য, ওনাকে পেয়েছিলাম। রোজ আধ ঘণ্টা ও পরেরদিকে রোজ এক ঘণ্টা করে বাজাতে বলতেন। তেজেন্দ্রমামা আমায় দিয়ে অর্কেস্ট্রায় বাউল গান গাইয়েছিলেন। গাওয়ার পর আমায় এসে জড়িয়ে ধরেছিলেন। উনি প্রকৃত গুরু।

প্রশ্ন: দোতারা কথা যখন উঠলই তখন বাউল গানের কথাও আসুক। বাউল গানের কেন দিকটা আপনাকে সবথেকে বেশি আকর্ষণ করে?

সাত্যকি: বাউলের নাচ, গান বা বাজনা, কোনও কিছুই আমাকে টানেনি। আমার সবসময় মনে হয়, যেটা সাংঘাতিকভাবে আমাকে আকর্ষণ করেছিল সেটা হল বাউল গানের বাণী এবং বাউল গানের ভাষাটা। বাউলরা যেরকমভাবে বাংলা কথা বলে, তাঁদের কথা বলার যে 'তার', সেটা কানে লাগে। বাংলা গানের শিক্ষাটা আমার ছোটবেলা থেকেই ছিল। কিন্তু, বাউল গানের বলার যে কায়দা, আমি সেটা আগে কোথাও শুনিনি। বাংলায় যে গল্প বলার আঙ্গিক, সেই তারটা সত্যি অন্য গানে পাই না। চোখে চোখ রেখে এমন কথা বলে, যা মনের ভিতরকে নাড়িয়ে দেয়। নিজেকেই চেনা যায় না। মনে হয় যেন চ্যালেঞ্জ করছে। সেই গান চুপ করে শোনা যায় না। আমার সবসময় গান গাইতে ইচ্ছে করে।

'ঝরাপালক' চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা আমার। তখন আমার মাথায় এসেছিল যে আমি জীবনানন্দের কবিতা থেকে গান গাইব। তাই করি। ১২টা কবিতা থেকে গান করি। সেইসব গানের বাণী আমায় খুব আকর্ষণ করে। বাউল গানের মতো যদি কোনও বাণী হয় তাও ভালোলাগে আমার। মনে হয় দোতারা বাজিয়ে বাউল গানের মতো করে গাই। সেটা আমার খুব ভালোলাগে। আমি গাইলাম, আমিও বাউলদের পায়ে ছাপ অনুসরণ করলাম।

সাত্যকি বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সৃঞ্জয়

প্রশ্ন: আপনার জীবনে গৌড় ক্ষ্যাপার প্রভাব কতটা? তাঁর সঙ্গে সময় যাপনের কথা যদি কিছু বলেন...

সাত্যকি: পরিচয়পর্ব থেকে বলতে গেলে আমায় থামানো যাবে না। শুধু বলতে পারি, প্রত্যেকের একটা ব্যক্তিগত যৌবন থাকে। আমার ব্যক্তিগত যৌবনের পুরোটাই প্রায় গৌড়কে নিয়ে। যাদবপুর আর গৌড়, এছাড়া আর কিছু নেই। যা গানবাজনা করেছি, গৌড় না থাকলে কিছুই হতো না। ওঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ২০০৪ সালে প্রথম বাউল-ফকির উৎসবে। আমায় পার্থদা (পার্থ মজুমদার) ওঁকে খুঁজে নিয়ে আসতে বলেন। ওঁর দু-তিন জায়গায় আখড়া ছিল। এদিক ওদিক যাচ্ছি। কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেলাম ফকিরদার আখড়ায়। আমি গিয়ে জড়িয়ে ধরি। সে বছর একটা বেশ মজার ঘটনা ঘটেছিল।

২০০৫ সালে আমাদের দ্বিতীয় বাউল-ফকির উৎসবেও গৌড় এসেছিলেন। তখন আমাদের সম্পর্কটা আরও গাঢ় হয়। তারপর থেকে আমি সামনে গেলেই গৌড় সুর করে বলতেন, 'সাত্যকি বাবা আমার, শিশুস্বভাব, বিবেকানন্দ, হরিবোল। সারাজীবন গোল থাকবি বাবা, রসগোল্লার মতো গোল। কোনওদিন চ্যাপ্টা হবি না, হরিবোল।'

প্রশ্ন: বললে ভুল হবে না যে গৌড় ক্ষ্যাপার জীবনযাপন আপনাকে বিশেষভাবে টেনেছিল। এখনও তাঁর অভাববোধ করেন?

সাত্যকি: গৌড় ছাড়া আর কেউ নেই। তাই গৌড় চলে যাওয়ার পর আমি আর কোনও মেলা, উৎসব, আখড়ায় যাই না। তবে, সত্যি বলতে গৌড় মারা গিয়েছে বলে আমার বিশ্বাস হয় না। মনে হয় বিদেশ বা বাইরে কোথাও ঘুরতে গিয়েছে। কিন্তু, মারা গেলে যে শোক হয়, সেই শোকের অনুভূতি কোনওদিন হয়নি। ওর মৃত্যুর পর ওঁকে নিয়ে বর্ধমানে যাই। ওঁর সমাধির পাশে বসে সারারাত গান গাই। ভোরবেলা বোলপুরে আখড়ায় ফিরি। সেখানেও সারাদিন গানবাজনা হয়। সে সবই স্পষ্ট মনে আছে এখনও।

প্রশ্ন: যাদবপুরে শক্তিগড়ের মাঠে বাউল-ফকির উৎসব সূচনার সময় অনেকটাই জড়িয়েছিলেন। কীভাবে এই উৎসবের পরিকল্পনা?

সাত্যকি: কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। আড্ডা থেকেই বাউল-ফকির উৎসবের ভাবনার সূত্রপাত। শক্তিগড় মাঠের পাশেই উৎপলদার (উৎপল বসু) বাড়িতে আড্ডা হতো। ওইদিন লোডশেডিং হয়েছিল। আমি অরূপদা (অরূপ দাস) আর উৎপলদা মাঠে বসেছিলাম। সামনে একটা রোডরোলার ছিল। দৃশ্যটা এখনও স্পষ্ট মনে আছে। উৎপলদাই হঠাৎ বলে ওঠেন, এতো তো বাউল সঙ্গ করলাম, চিনিও অনেককে। একটা উৎসব করলে কেমন হয়? দুই দিন ধরে গানবাজনা হবে। সবাই একযোগে বললাম, হ্যাঁ করলেই তো হয়। রবিবার সকালের আড্ডাতে অনেকে আসতেন। সেখানে প্রসঙ্গটা উঠল। সবাই বলল-- হোক হোক। শীতকালে হোক।

হোক হোক তো বলা হল। তারপরে খরচ সামলাতে তো মাথা খারাপ। চাঁদা তোলা যে কী ঝক্কির, বুঝেছিলাম তখন। আমার বন্ধু পান্তু আর আমি কত জায়গায় গেলাম, চাঁদা তুললাম। তারপর শেষ পর্যন্ত যখন উৎসবটা হল, তখন তো মারাত্মক ব্যাপার। এত মানুষ এল, আর আমরা তো মাত্র ১০-১২টা লোক, সামলাতে হিমসিম খেলাম। কিন্তু, পাড়ার লোকজন খুব সাহায্য করেছিল। উৎসবের প্রথম রাতে যেদিন সবাই আসত, সেদিন একটা পায়েস হতো। সেটা পাড়ার পারমিতাদি (পারমিতা ভট্টাচার্য) বানিয়ে দিল। রুটিও পাড়ার লোকজন দিত। তা ছাড়াও অনেক কাজ থাকত। নিজে হাতে সবই করেছি। কিন্তু, সত্যি বলতে, বন্ধুরা মিলে করতে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু, বন্ধুরা যেদিন থাকল না, নানারকম তর্কবিতর্ক শুরু হল, তখন আড্ডাটাও আস্তে আস্তে থিতিয়ে গেল। আমিও মেলাটা থেকে সরে এলাম। কিন্তু, ভালো লাগে দেখে যে মানুষ এই উৎসবটা উপভোগ করছে।

প্রশ্ন: বাবুল সুপ্রিয় ও অনুপম রায়ের সঙ্গে 'মনের মানুষ' গানে আপনিও উজ্জ্বলভাবে গলা মিলিয়েছিলেন। এই গানই তো বহু মানুষের কাছে আপনাকে পৌঁছে দেয়...

সাত্যকি: আমি তখন পাটুলি থেকে বাসে করে নবমিতা-রাজর্ষিদের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। তখন অনুপমের ফোনটা পাই। কোক-স্টুডিওতে গান গাওয়ার কথা বলে। তখন সেভাবে রাজি হইনি। পরে নবমিতা-রাজর্ষি শুনতেই ঝাঁপিয়ে পড়ল। বলল, সাত্যকিদা তোমাকে গাইতেই হবে। তারপর রাতে আবার অনুপমের সঙ্গে কথা হয়। কী গান গাইতে হবে জানতে চাই। বলে, 'মিলন হবে কত দিনে…' গানটা গাইতে হবে। আমি ঠিক একমাস আগেই গানটা গেয়েছিলাম। তখন রাজি হলাম। তারপর তো সারা পৃথিবী শুনেছে গানটা।

আমার মা-ও খুব খুশি হয়েছিলেন। বাবাও আমার দোতারা বাজানোর প্রশংসা করেছিল। গানটা অনেকেই রাস্তায় এসে ধরত। যাদবপুরে যখন গান গাইতাম তখনও বলত। তবে, হয়তো এই গানটার পরে লোকজনের কাছে একটু পরিচিতি বেড়েছিল। বাড়ির লোকজন খুশি হয়েছিল সেটা সবথেকে বড় ব্যাপার। আমার কাছে প্রায় চাকরি পাওয়ার মতো স্বীকৃতি। একেবারে সরকারি চাকরি পাওয়ার মতো। তার আগে পর্যন্ত লোকজন জিজ্ঞেস করত, চয়ন (আমার ডাক নাম) কী করছে? বাড়ির লোকেরা বলত, গানবাজনা করে সারাক্ষণ। সত্যি বলতে, ওরা একটু লজ্জাই পেত। যদিও আমায় সবসময় বলত, তুই গানবাজনাই কর।

অনুপম রায় আর বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে গানটা করার পর ব্যাপারটা বদলে গিয়েছিল। মধ্যবিত্ত সংসারে গানবাজনা করলে একটা সময়ের পর বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়। আমায় সেটা করতে হয়নি। আপোশোসও তেমন করতে হয়নি। এটা বোধহয় গৌড়ের আশীর্বাদ। গৌড় আমায় আশীর্বাদ করে গিয়েছিল।

বর্ণ অন্যন্য। ছবি: সৃঞ্জয়

প্রশ্ন: আমরা জানি 'বর্ণ অন্যন্য' গানের দলের সঙ্গে আপনি যুক্ত। গানে নানা এক্সপেরিমেন্ট করছেন আপনারা। এতে কি আপনার নিজের গানের ধারা দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে? যেমন ধরুন, 'গিরগিটির ভীষণ জ্বালা' গানটা আপনি আগে একভাবে গাইতেন। কিন্তু যখন বর্ণ অন্যন্যে গাওয়া হল তখন দেখলাম সেই গানে সুরে অনেক গয়নাগাটি পারানো হয়েছে। যদিও সে গান স্পর্শ করেছে অনেককেই...

সাত্যকি: প্রথমে একা দোতারা বাজিয়ে 'গিরগিটির ভীষণ জ্বালা' গানটা গেয়েছিলাম, আড্ডা টাইমের 'ক্ষ্যাপা' নামের একটা ওয়েব সিরিজের জন্য। আমায় একটা পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছিল, এরকম কি কোনও গান মনে পড়ছে? তখন আমি ওদেরকে এই গানটার কথা বলেছিলাম। ওদের খুব ভালো লাগে। তখন আমি দোতারা বাজিয়ে আমার যেরকম মনে হয়, সেরকম করে গেয়েছি। ওরা পরে একটা কোক স্টুডিও-র আদলে অনুষ্ঠান করেছিল। সেখানে আমায় ডেকেছিল। গানটা চলেছে, আমি গেয়েছি, বাজিয়েছি। যারা এই গানটা গায়, তারাও কিন্তু একটা যন্ত্রে গায় না গানটা। মাদল, ধামসা, করতাল, বাঁশির মতো নানা যন্ত্র বাজে। আবার একাও গাওয়া যায়। আমি বলব এগুলো সবই মহাজনী পদ। এটা তো মহাজন পদ বটেই। এটা নানা বাদ্যযন্ত্র সহযোগেও গাওয়া যায়, একাও গাওয়া যায়।

বর্ণ অনন্যে গানটা গেয়েছিলাম 'মুভমেন্ট' নামে একটা অ্যালবামের অংশ হিসেবে। সেখানে গানটা গেয়েছিলাম একটা অঞ্চলের ইতিহাস হিসেবে। এই গানটা একটা জনজাতির ইতিহাসের কথা বলছে। আমরা গানের মধ্যে দিয়ে অন্বেষণ করি, কী করে গানটা প্রজন্মান্তর করে তোলা যায়। গানটা শুনলেই যেন মানুষের মনে হয়, এটা তো আমার গান। এই গিরগিটির জ্বালা তো আমারও জ্বালা। গানগুলোকে দেশকাল পার করাতে হবে। সেই যোগসূত্রগুলোই আমরা দেখাতে চাই বর্ণ অনন্যে। এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, গানের মিউজিক্যাল অর্থ শুধু যন্ত্র দিয়ে হয় না। কারা কারা বাজাচ্ছে, কী রকমভাবে অনুসঙ্গ হচ্ছে, গানের মাধ্যমে যে গল্পের দুনিয়া তৈরি করছি, তার জন্য নানা ধরনের যন্ত্রের শব্দের প্রয়োজন হয়েছে। নাহলে সেই দুনিয়াটা তৈরি করা যেত না।

প্রশ্ন: কোনও রাজনৈতিক বার্তাও আছে কি, এর মধ্যে?

সাত্যকি: নিশ্চয়ই। বর্ণ অনন্যও তাই। আমাদের রাজনীতি কোনও দলবিশেষ নয়। আমরা যখন 'জয় বাংলা' ধ্বনি দিই, সেটা তৃণমূলের নয়। যখন 'লালে লাল' গাই, সেটাও সিপিএমের নয়। আমরা নিজেদের মতো করে রাজনীতিকে বুঝছি।

প্রশ্ন: বিরোহী ১ ও ২-এ আপনার গানগুলো জনপ্রিয় হয়েছে। গান পাগল মানুষদের কাছে শুনেছি বিরোহীর পর্ব দুটো নাকি শুধুমাত্র আপনার গান শোনার জন্যই দেখা যায়! আপনি কী মনে করেন?

সাত্যকি: আমায় যখন প্রথম খসড়া চিত্রনাট্যটা দেওয়া হয়েছিল, তখন থেকেই মিউজিকের ভাবনা আরম্ভ হয়ে যায় আমার ভেতরে। প্রথমে সিরিজের নামটা ছিল 'রাধাকৃষ্ণ বিরোহী'। আমি দেখলাম, রাধা ও কৃষ্ণ এই দু'টো নাম আমার সব গানের সঙ্গেই আছে। 'যমুনা কীর্তন' গানটার মধ্যে একটা অদ্ভুত গতি আছে। আমি তখন ওই গানটা করছিলাম। প্রথম বাউলদের নিয়ে করা চলচ্চিত্র 'দ্য সংস অফ ম্যাডম্যান'-এও এই গানটা ছিল।

সিরিজে কৃষ্ণ চরিত্রের সংগ্রাম আছে। সেই সংগ্রামের মধ্যে একটা অ্যাডভেঞ্চারের আনন্দও আছে। আমি একটা যাত্রাপথের মধ্যে পড়েছিলাম, যেখানে আমাকে অনেক দূর যেতে হবে। আমি যদি শুধু এটাকে কষ্ট ভাবতাম তাহলে কিন্তু পারতাম না করতে। কোথাও একটা আনন্দও আছে এই যাত্রার মধ্যে। গল্পটা শুনে আমার তাই মনে হয়েছিল। এই যাত্রাটা যদি শুধু কষ্টেরই হতো প্রথমদিন থেকে, তাহলে কৃষ্ণ কিন্তু পারত না। কোথাও একটা আনন্দ আছে, জেদ আছে, অভিমান আছে, অহংকার আছে যে আমি যাব। আমাকে পৌঁছতে হবে। সেটা ওর মনের মধ্যে খেলা করছে। আমার মনে হয়েছিল, ওর মনের মধ্যে খেলা করছিল যে ও (কৃষ্ণ) ডুবতে চায়।

সুখপাখি গানটা বাড়িতেই রেকর্ড করে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। পরিচালক সেটাকে টাইটেল ট্র্যাক করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, আমি একদম বিশ্বাস করি না যে, বিরোহী ওয়েব সিরিজটা শুধুমাত্র আমার গানের জন্য দেখা যায়। কোন দৃশ্যে কোন গান বাজবে সেটা প্রদীপ্ত করেছে। আমি বাজার করে দিয়েছি। রান্নাটা প্রদীপ্ত করেছে। প্রদীপ্তর মতো বন্ধু পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হয়।

বায়োস্কোপ খবর

Latest News

RR-কে হারিয়ে উত্থান DC-র, দুইয়েই থাকলেন সঞ্জুরা, চার দলের ১২ পয়েন্ট, জমেছে লড়াই রাত পেরোলেই উচ্চমাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ! HT বাংলায় এক ক্লিকেই দেখুন রেজাল্ট ভাইপোকে ‘রাজনৈতিক উত্তরসূরী’র পদ থেকে সরালেন মায়াবতী, বাংলার ঠিক উলটো! সঞ্জুর লড়াই জলে গেল, ২০ রানে হারল রাজস্থান, দিল্লি জিতে সুবিধে করে দিল KKR-এর আইসিএসই, আইএসসিতে নজর কাড়ল শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি, বিহার থেকে বাংলায় এসে সাফল্য দেবের চেয়ে উচ্চশিক্ষিত,রয়ছে PhD ডিগ্রি! BJP-র হিরণের মাথায় কোটি টাকার দেনা আজই ৫ লাখ কোটি টাকা গায়েব! ভোটের মধ্যে কেন লোকসভা ভোটে ধস নামল? এখনই ঠিক হবে? ডুবে যাওয়া টাইটানিকের ধনী যাত্রীর সোনার পকেট ঘড়ি নিলামে, কত দাম উঠল BCCI-এর সঙ্গে কথা বলবেন না- বোর্ডের নামে আতঙ্কিত হর্ষিত সাবধান করলেন কোচকে বেতনে পাবেন দু'টি প্রাইভেট জেট কেনার টাকা! উইপ্রোর নতুন সিইওর বেতন আকাশছোঁয়া

Latest IPL News

সঞ্জুর লড়াই জলে গেল, ২০ রানে হারল রাজস্থান, দিল্লি জিতে সুবিধে করে দিল KKR-এর BCCI-এর সঙ্গে কথা বলবেন না- বোর্ডের নামে আতঙ্কিত হর্ষিত সাবধান করলেন কোচকে ৪-৪-৪-৬-৪-৬- ম্যাকগার্কের পিটুনি,১৯বলে অর্ধশতরান করে অনন্য নজির গড়লেন DC-র তরুণ IPL 2024: ভক্তের আইফোন ভেঙে ফেললেন মিচেল,পরিবর্তে ক্ষমা চেয়ে দিলেন উপহার- ভিডিয়ো T20 WC-এর কথা মাথায় রেখে কি বুমরাহকে বিশ্রাম দেওয়া হবে? সম্ভাবনা ওড়ালেন পোলার্ড জিতলে গম্ভীরের প্রশংসা, হারলে কেন দোষী শ্রেয়স? KKR সমর্থকদের আচরণে প্রশ্ন বিশপের CSK-তে বড় ধাক্কা! মুস্তাফিজুরের পরে এবার দেশে ফিরলেন দলের অন্যতম সেরা পেস বোলার KKR-কে নিশ্চিন্ত করলেন তারকা আফগান উইকেটকিপার-ব্যাটার,শীঘ্রই যোগ দিতে চলেছেন দলে মাহি ভাইও এই বিষয়ে কোনও সাহায্য করতে পারবেন না- হঠাৎ ধোনির কথা মনে করলেন হার্দিক সানরাইজার্স হায়দরাবাদ সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্লক করা প্রসঙ্গে মুখ খুললেন ওয়ার্নার

Copyright © 2024 HT Digital Streams Limited. All RightsReserved.
প্রচ্ছদ ছবিঘর দেখতেই হবে ২২ গজ