খাবার নিয়ে বড্ড অনীহা শাহরুখ খানের। বলা ভালো, খাবারের সঙ্গে সম্পর্ক মোটেই ভালো নয় শাহরুখ খানের। একবার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন 'ডিয়ার জিন্দেগি' ছবিতে 'কিং খান' -এর সহশিল্পী তথা বলি-নায়িকা আলিয়া ভাট। আরও জানিয়েছিলেন ওই ছবির শ্যুটিং চলাকালীন শাহরুখকে কোনওদিনও মুখ চালাতে দেখেননি তিনি। এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরপরই তাঁদের প্রিয় তারকার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন তামাম ভক্তকুল।
২০১৬ সালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আলিয়া বলেছিলেন, 'শাহরুখের কোনও ব্যাপারই আমার অপছন্দ নয়। কিন্তু হ্যাঁ, ওঁর স্রেফ একটিমাত্র ব্যাপার রয়েছে যা দেখে খুব খারাপ লাগে। শাহরুখ প্রায় কিচ্ছু খায় না। একটি ঘটনা বললে বুঝবেন। ওই ছবির সেটে বেশ হল্লা হতো না। সেরকমই নির্দেশ ছিল।কঠিন সব শট, লম্বা লম্বা সব সংলাপ ইত্যাদি থাকার দরুণ ছিল এই সতর্কতা। সোজা কোথায়, যাতে অভিনেতা কিংবা পরিচালকের কাজে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে। একেকবার আমরা একটি আস্ত সিকোয়েন্স এক শটে নিয়ে নিয়েতাম। একবার শাহরুখের খুব কাছে দাঁড়িয়ে শট দিচ্ছি, এমন সময় ওঁর পিটার মধ্যে থেকে গুড়গুড় শব্দ ভেসে এল। স্পষ্ট শুনতে পেলাম। বুঝলাম সারাদিন এক টুকরো খাবারও ওঁর পেতে যায়নি। সঙ্গে সঙ্গে বিস্কুট খাইয়ে দিতাম ওঁকে। এত খারাপ লাগত যে কী বলব! অনেকবার ওঁকে বলেছি যেন খাওয়াদাওয়াটা ঠিকমতো করে সে।
২০১৯ সালে 9XM Startruck অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গে শাহরুখ এক মর্মস্পর্শী কারণ বলেন, যার জেরে তাঁর খাবার খাওয়ার অভ্যাসটুকুই পুরোপুরি বদলে গিয়েছিলেন। 'বাদশাহ-র কথায়, 'আমার ২৫ বছর বয়সে মা মারা গিয়েছিলেন। তার আগে পর্যন্ত উনি নিজের হাতে করে আমাকে খাবার খাইয়ে দিতেন। ডাল,ভ্যাট, পেঁয়াজ, আচার, পাঁপড় এসবকিছুই। ওঁর হাতের মাখা খাবারই বরাবর খেতাম আমি। তাই ওঁর মৃত্যুর পর সত্যি বলতে কী খাবারের প্রতি কেমন একটা অনীহা জন্মে গিয়েছিল আমার। আমি আমার বাড়ির খাবার খেতে এত ভালোবাসতাম যে এরপর থেকে অন্য কোনও খাবার আমার মুখেই রুচত না। তার মানে এই নয় যে সেসব খারাপ। খাবার মানেই ভালো, তা সে যে খাবারই হোক। কিন্তু সত্যি এটাই যে আমার বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর তাঁদের হাতে তৈরি খাবার আমার না পেয়ে খাওয়া নিয়ে প্রবল অনীহা জন্মে গিয়েছিল। এখন আমার বাড়ির লোক কিংবা আমার টিম যে যে খাবার দেয়, তাইই খাই। সে যে খাবারই দিক। কিন্তু নিজে থেকে কিছু ইচ্ছে করে না খেতে।' স্বভাবতই, শাহরুখের মুখে এই মর্মস্পর্শী ঘটনা শুনে চোখ ভিজে উঠেছিল নেটপাড়ার বাসিন্দাদের।
প্রসঙ্গত, শাহরুখের বাবা এবং মা দু'জন্যেই রেঁস্তরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দুজনেই দুর্দান্ত রান্না করতেন। পাঠানি-পেশোয়ার রান্নায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন শাহরুখের বাবা। অন্যদিকে, শাহরুখের মা ছিলেন হায়দরাবাদি খাবারের বিভিন্ন পদ রাঁধায় ওস্তাদ।