আজকাল রুপোলি পর্দার নায়িকাদের বিকিনিতে দেখাটা আম ব্যাপার। কিন্তু ষাটের দশকে সিনেপর্দায় বিকিনি লুকে আগুন ঝরিয়ে ছিলেন বঙ্গ তনয়া শর্মিলা ঠাকুর। স্বাধীনচেতা শর্মিলা বরাবরই বেঁচেছেন নিজের শর্তে। কাজ করেছেন নিজে শর্ত বেঁধে দিয়ে। ষাটের দশকে পর্দায় বিকিনি পরাটা ট্যাবু হিসাবেই গণ্য করা হত, সেই ট্যাবু শর্মিলা ভেঙেছিলেন ‘অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস’ ছবিতে। তবুও দিনের শেষে তিনি নবাব পরিবারের পুত্রবধূ! রক্ষণশীল শাশুড়ির ভয়ে অবাক কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
টুইঙ্কেল খান্নার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মনের ঝাঁপি খুলেছেন টাইগার পতৌদির স্ত্রী। অক্ষয় ঘরণীর চ্যাট শো ‘দ্য আইকনস’-এ অতিথি হিসাবে হাজির ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। ‘অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস’ ছবির বিকিনি লুকের প্রসঙ্গ উঠতেই হেসে ফেলেন শর্মিলা। কোনওদিন সেই স্মৃতি ভুলবেন না জানান, সত্যজিতের ‘অপুর সংসার’-এর অপর্ণা। তিনি বলেন, ‘উফ! ওটা বিরাট একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল’। একটা কাপড়ের টুকরো নিয়ে এত বিতর্ক হতে পারে, এই ধারণা ছিল না শর্মিলার।
বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি কোনওদিন বলব না আমাকে কেউ জোর করেছিল ওই পোশাক পরতে বা ওই দৃশ্যটা ফুটিয়ে তুলতে। ওটা আমার সিদ্ধান্ত ছিল। ফটোগ্রাফারও ওই ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। আমরা খুব স্পনটেনিয়াসলি ব্যাপারটা করেছিলাম। কিন্তু পরে ওই দৃশ্য নিয়ে শোরগোল তৈরি হয়’। পরিচালক শক্তি সামন্তর কাছে বকাও খেয়েছিলেন শর্মিলা। পরবর্তীতে লোকজন তাঁকে সিরিয়াস চরিত্রে গ্রহণ করতে পারবে না, ভয় ছিল শক্তি সামন্তর মনে।
অভিনেত্রী স্মৃতির সরণিতে হারিয়ে যান। বলেন, ‘আমি দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলাম। বাণিজ্যিক সাফল্য পেতে চেয়ছিলাম। তবে আমার বিশ্বাস আমাকে সুন্দর দেখাচ্ছিল (বিকিনিতে)।’ সেই সময় স্বামী মনসুর আলি খান পতৌদির পূর্ণ সমর্থন পেয়েছিলেন শর্মিলা। সেইসময় টেলিফোনের যুগ ছিল না, টেলিগ্রাম মারফতই কথা হত। লন্ডন থেকেই স্বামী জানিয়েছিলেন, ‘তুমি চিন্তা করো না, বিকিনিতে তোমাকে সুন্দর লাগবে আমি জানি’।
তবে নিজের জগতে বাস করা একজন জন প্রতিনিধির পক্ষে সম্ভবপর নয় তা এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল শর্মিলাকে। দর্শকদের পছন্দ-অপছন্দগুলোকে মান্যতা দেওয়াটা জরুরি। ভারতীয় দর্শকরা সেইসময় এই ব্যাপারটিকে সহজে মেনে নিতে পারেনি, উপলব্ধি হয়েছিল তাঁর। তাই পরবর্তীতে আরাধনা-র মতো ছবিতে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এরপরই টুইঙ্কল প্রশ্ন করেন, আমচকা শর্মিলা বিকিনি পোস্টার কেন গায়েব হয়ে গেল মায়ানগরী থেকে? জবাবে টাইগার ঘরণী বলেন, ‘গোটা শহর নয়, তবে আমি যে এলাকায় থাকতাম সেখান থেকে সমস্ত পোস্টার ছিড়ে ফেলার নির্দেশ আমি আমার ড্রাইভারকে দিয়েছিলাম, কারণ আমার শাশুড়ি মা সাজিদা সুলতান এসেছিলেন। সেই সময় আমাদের বিয়ে হয়নি, বাগদান হয়েছিল মাত্র। ছবির পোস্টারে শাম্মি কাপুর সামনে দাঁড়িয়ে, আমি তাঁর পিছনে। ওঁনার শরীর আমার ছবিটা খানিকটা আড়াল করেছিল, তবে আমার খোলা পা, হাত এগুলো দেখা যাচ্ছিল। সেই পোস্টার সরিয়ে ফেলতে আমার ড্রাইভার মাঝরাতে বেরিয়েছিল। কিন্তু রাস্তায় নিশ্চয় আম্মা আমার সেই পোস্টার দেখে ফেলেছিলেন’।