বক্স অফিসে ব্রহ্মাস্ত্র ঝড়ের কথা সবাই শুনেছে। ছবি দুর্দান্ত ব্যবসা করছে এমন কথাও কানে আসছে। কিন্তু 'ব্রহ্মাস্ত্র'র কালেকশন ঠিক কত কোটি? এই নিয়ে একটা উত্তর আপনি চাইলেও পাবেন না। ছবির কালেকশনে এত ফারাক কেন? এই বিষয়টা নিয়ে অনেকেই বেশ কনফিউসড। অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত তো সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন প্রযোজক করণ জোহরের দিকে। ‘ব্রহ্মাস্ত্র’-এর কালেকশন নিয়ে ঘাপলা করছেন করণ, দাবি কঙ্গনার।
আসলে ভারতে এবং পশ্চিমের দেশগুলোতেও বক্স অফিস কালেকশন নির্ণয় করবার একাধিক পদ্ধতি রয়েছে, সেই কারণেই একটি ছবির ভিন্ন ভিন্ন রকমের কালেকশন সামনে আসছে। গত ৯ই সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে পরিচালক অয়ন মুখোপাধ্যায়ের ব্রহ্মাস্ত্র। শুধু হিন্দি নয়, এর পাশাপাশি তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মামলায়ালাম ভাষাতেও মুক্তি পেয়েছে এই ছবি। একাধিক ভাষায় মুক্তি পাওয়ার জেরেও ছবির কালেকশন নিয়ে অনেকেই ঘেঁটে যাচ্ছেন। ভারতের পাশাপাশি বিদেশেও মুক্তি পেয়েছে এই ছবি। তাই দেশের এক, বিদেশের আরেক কালেকশন রিপোর্ট আসছে।
নেট আর গ্রস কালেকশনের ফারাক কোথায়?
করণের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে কঙ্গনা বলেছেন, কেন করণ জোহর ছবির গ্রস কালেকশনের ডেটা দিচ্ছেন, কেন নেট আয়ের কথা জানাচ্ছেন না! এই নিয়ে অনেকের মনের প্রশ্ন জাগতে পারে গ্রস আয় আর নেট আয়ের পার্থক্য কোথায়? তাহলে জানিয়ে রাখি, বক্স অফিসে গ্রস আয় বলতে কোনও ছবির টিকিট বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় সেই অঙ্কটা বোঝায়। নেট বক্স অফিস কালেকশনের অর্থ হল সরকারের তরফে বিভিন্ন ট্যাক্স ( যেমন-সার্ভিস ট্যাক্স, এন্টারটেনমেন্ট ট্যাক্স) কেটে নেওয়ার পর যে টাকা কোনও ছবি আয় করে। গ্রেস ফিগার সবসময় নেট ফিগারের চেয়ে বেশি হয়। যেহেতু রাজ্য ভেদে ট্যাক্সের পরিমাণ আলাদা, তাই কোনও ছবির গ্রস ফিগার সারা দেশে এক হলেও নেট ফিগারের বিরাট মাত্রায় হেরফের হতে পারে। এর সঙ্গে আরও একটা বিষয় জড়িত আছে, বক্স অফিসের নেট ফিগারে ডিস্ট্রিবিউটারদের শেয়ার যুক্ত থাকে। একটা ছবি থিয়েটারে যারা চালাচ্ছেন তাঁরাও একটা লভ্যাংশ পান।
তাহলে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’-র ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কী দাঁড়াচ্ছে? এই ছবির বিশ্বব্যাপী গ্রস কালেকশন ২২৫ কোটি টাকা। কিন্তু তার মানে কখনই এটা নয়, এই ছবির প্রযোজক ২২৫ কোটি টাকা আয় করেছে।
আরও পড়ুন-নেটের ব্লাউজ,ফিনফিনে কালো শিফনে লাস্যময়ী সৌমিতৃষা, মিঠাইয়ের এই শাড়ির দাম জানেন?
ছবির কালেকশন দেশের এক এক জায়গায় এক এক রকমভাবে জানানো হয়। বলিউডে মূলত কোনও ছবির নেট কালেকশনই সামনে আনা হয়। তবে দক্ষিণ ভারতের ছবিগুলোর গ্রস কালেকশন রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়। সৌভাগ্যবশত নেট কালেকশন থেকে ডিস্ট্রিবিউটারদের শেয়ার বাদ দেওয়া অঙ্কের পরিমাণটা এখনও সামনে আনা হয় না, তাহলে গোটা প্রক্রিয়া আরও জটিল রূপ ধারণ করত।
সোমবার বক্স অফিস ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয় ‘ব্রহ্মাস্ত্র’র কালেকশন প্রথম তিন দিনে দাঁড়িয়েছে ১০৫ কোটি, অন্যদিকে বক্স অফিস ট্রাকার ওয়েবসাইট Sacnilk জানায় ‘ব্রহ্মাস্ত্র’র কালেকশন দেশের বক্স অফিসে তিনদিনে ১৪৬ কোটি টাকা। টাকার অঙ্কে ৪১ কোটির ফারাক! কিন্তু না, এই ফিগারে কোনওরকম কারসাজি নেই। এখানে প্রথমটি হল ‘ব্রহ্মাস্ত্র’র হিন্দি ভার্সনের নেট আয়। দ্বিতীয়টি সব ভাষার গ্রস আয়ের পরিমাণ। তাহলে কনফিউশন দূর হল?
ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের একজন জানান, 'প্রযোজক সবসময়ই চায় সেরা নম্বরটা দেখাতে, যাতে দর্শক আকৃষ্ট হয়। যে যতই কারসাজি করুক, একটা মার্জিনের বাইরে করা সম্ভবপর নয়, আর সেটা ৫-১০%। কারণ সেটা হলে তোমার মিথ্যােটা সবাই জেনে যাবে। যখন কোনও ছবি এতটাই খারাপ ব্যবসা করে যে তা প্রযোজকের লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন তারা ছবির কালেকশন জানানো বন্ধ করে দেয়, যেমন ধরুন প্রভাসের রাধে-শ্যাম বা কঙ্গনার ধাকড়'।
ভারতের মতো বহু ভাষাভাষি দেশে একটা ছবির নির্দিষ্ট আয়ের পরিমাণ জানা কার্যত অসম্ভব কারণ পশ্চিমী দেশগুলোর মতো এখানে কোনও সুবিন্যস্ত প্রক্রিয়া নেই। তাই ছবির কালেকশন সামন্য কম-বেশি হলে তা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামানোর দরকার নেই। বিশ্বস্ত সোর্সের উপর ভরসা রাখুন!