দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ায় খুশির হাওয়া। গর্ভাবস্থায় প্রথম ২৪ সপ্তাহে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ করল কলম্বিয়া। সমগ্র দক্ষিণ আমেরিকার নারীবাদীরা সাধুবাদ জানিয়েছেন এই প্রস্তাবকে। শুধু কলম্বিয়া নয়, সম্প্রতি মেক্সিকো এবং আর্জেন্টিনাতেও গর্ভপাতের ক্ষেত্রে সময়সীমার পরিবর্তন করা হয়েছে। এর আগে কলম্বিয়ার ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গর্ভপাত শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট মহিলার জীবন বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আশঙ্কার মতো ব্যতিক্রম পরিস্থিতিতেই আইনসঙ্গত ছিল। এর ফলে কোনও ধর্ষণ বা বলপূর্বক যৌনসঙ্গম বা ভ্রূণের কোনও সমস্যা বা ত্রুটি থাকলে, গর্ভপাতের আইনগত সুযোগ ছিল না। অর্থাৎ বলা যেতে পারে, কলম্বিয়ার গর্ভপাত কেন্দ্রিক আইন অনেকটাই বাস্তবিক এবং বিজ্ঞান ও সমাজসম্মত ছিল না এবং নারীবিরোধী ছিল।
স্থানীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর সব মিলিয়ে ৪ লক্ষ গর্ভপাত হয়ে থাকে কলম্বিয়ায়। এর মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ আইনসঙ্গত ভাবে হয়ে থাকে। ২০২০ সালে প্রায় ২৬ হাজার বিপজ্জনক গর্ভপাত করানো হয়েছে কলম্বিয়া। জানিয়েছে প্রফেমিলিয়া নামের একটি সংস্থা, যারা স্থানীয় প্রজনন ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কাজ করছে। আরও একটি সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গিয়েছে, ২০০৬ থেকে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ১৮ বছরের কম অন্তত ২০টি মেয়েকে দোষী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে আইনবিরুদ্ধ গর্ভপাতের জন্য।
দক্ষিণ আমেরিকার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, অনেক দেশেই গর্ভপাত সম্পর্কিত নিয়মকানুন বেশ কড়া, মানবতাবিরোধী বটে! শক্তিশালী ক্যাথলিক চার্চ এবং খ্রিস্টান লবির প্রভাবে পৃথিবীর কঠোরতম গর্ভপাত আইন দেখা যায় লাতিন আমেরিকায়। এমনকী এল সাল ভাদোরের মতো দেশে গর্ভপাত করানো মহিলাদের খুনের দায়ে জেলবন্দি করা হয়েছে অতীতে। কলম্বিয়ায় গর্ভপাত আইন নিয়ে যাঁরা কাজ করে চলেছেন নিরলস ভাবে, তাঁদের গ্রিন ওয়েভ আখ্যা দেওয়া হয়। দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন লড়াই করে চলেছে এই আইন বদল করার জন্য।
সামনের দিনে আশা করা যায়, সামগ্রিক ভাবে দক্ষিণ আমেরিকায় বিভিন্ন দেশে নারীর অধিকার নিয়ে উদারমনস্ক হবে এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে। গত সপ্তাহেই ইকুয়েডরের পার্লামেন্টে ধর্ষণের ক্ষেত্রে গর্ভপাতে আইনের ছাড় দেওয়া হয়েছে। বলাই বাহুল্য, কলম্বিয়ায় গর্ভপাত নিয়ে আইন পরিবর্তন এক নতুন সূর্যোদয়ের ইঙ্গিত করে যেখানে নারী অধিকার এবং তার সঙ্গে প্রজনন ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বেআইনি বিপজ্জনক গর্ভপাতের সংখ্যা অনেকটাই হ্রাস পাবে। এর সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের তরফ থেকে গর্ভপাত পুরোপুরি আইনসিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। তবে সাম্প্রতিক পরিবর্তন অবশ্যই ইতিবাচক ইঙ্গিত করে।