গণেশ চতুর্থী উপলক্ষ্যে কলকাতার প্রায় কম বেশি সমস্ত পাড়ায় পুজো হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না বাড়িগুলো। তবে বাংলার সব থেকে বড় উৎসব যেমন দুর্গাপুজো, তেমনই মহারাষ্ট্রের সব থেকে বড় উৎসব গণেশ পুজো বা গণেশ চতুর্থী। তবে এই উৎসবের নেপথ্যে কোন গল্প লুকিয়ে আছে জানেন কি? ১৯ শতকের শেষভাগে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার হাত ধরে শুরু হয় গণেশ পুজো।
প্রাককথন
১৮৯৩ সালে মহারাষ্ট্রের একটি হনুমান মন্দিরে গান বাজানো হয় একটি, আর সেটাকে কেন্দ্র করেই ঘটে যায় একটি ভয়াবহ হিংসাত্মক ঘটনা। আর ভালো করে বলতে গেলে, আরব সাগরের পাড়ে এই মহারাষ্ট্রের বুকে ঘটা প্রথম সব থেকে বড় সাম্প্রদায়িক ঘটনা ছিল এটি। ৭৫ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন এই হিংসায়। প্রসঙ্গত এখানকার মারাঠি টেক্সটাইল মিলের একাধিক কর্মীও যোগ দিয়েছিলেন এতে। ধীরে ধীরে এই হিংসা মহারাষ্ট্রের অন্যত্র যেমন রাভার, ইওলারে ছড়াতে থাকে। পরবর্তীকালে সেই হিংসার ঘটনা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করলে খবর দেওয়া হয় সেনাবাহিনীকে।
এই হিংসার ঘটনায় তখন বাল গঙ্গাধর তিলক হিন্দুদের পক্ষ নেন। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন এমন হিংসার ঘটনায় যেন ব্রিটিশরা মূলত ব্রিটিশ পুলিশরা নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু বলাই বাহুল্য সেটা হয়নি। উল্টে তখনকার যিনি গভর্নর ছিলেন অর্থাৎ লর্ড হ্যারিস তিনি সোজাসুজি হিন্দুদের দায়ী করেন সমস্ত কিছুর জন্য। এবং হিংসার ঘটনায় তৃতীয় পক্ষ হিসেবে জড়িয়ে যায় ব্রিটিশরা।
এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, তখন লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক যে লড়াই শুরু করেন সেটা কিন্তু পুরোপুরি ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে। যদিও অনেক সময়ই সেটা মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই বলে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু সেটা সত্য নয়।
মূল ঘটনা
১৮৯৩ এর ঠিক পরের বছরই আবারও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। পুনের একটি উৎসবকে কেন্দ্র করে ছড়ায় হিংসা। সাধক ধ্যানেশ্বরের পালকিকে পাথর ছুঁড়ে আক্রমণ করা হয় সেই সময়। আর এটার জেরেই হিন্দু মুসলিমের যে সুসম্পর্ক ছিল তখন সেটা নষ্ট হয়ে যায়।
বম্বে প্রেসিডেন্সির অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব ছিল মহরম। আর তখন মহরমের ট্যাবুস বানানো হতো রস্তেস, খাসগিওয়ালেস, এমনকি বাজিরাওয়ের বানানো শুক্রবার ওয়াডায়। বাল গঙ্গাধর তিলক নিজেও ১৮৯২ সালের মহরমের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। খুব সহজ করে বলতে গেলে মহরম তখন দারুণ জনপ্রিয় একটি উৎসব ছিল। কিন্তু এই হিংসার জেরে হিন্দুরা মহরমে অংশ নেওয়া বন্ধ করে দিল। ১৯৮৪ সালে মাত্র ৫০-৭৫ টি ট্যাবুস বেরিয়েছিল যেখানে ঠিক আগের বছর ৩০০-৪০০ টি ট্যাবুসকে রাজপথে দেখা গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: ৬৯ কেজি সোনায় সাজানো হয়েছে সিদ্ধিদাতা গণেশকে, আকর্ষণের কেন্দ্রে জিএসবি সেবা মণ্ডল
আরও পড়ুন: গণেশ পুজোর আনন্দ জমুক বলিউডি তালে, প্লেলিস্টে থাকতে হবে কোন গানগুলি
১৯৮৪ সালেই মহরমের বিপরীতে গণেশ পুজোকে তুলে ধরেন লোকমান্য তিলক। হিন্দুদের উজ্জীবিত করেন এই পুজো করতে। তারপর একটা সময় ধীরে ধীরে মহরমকে সরিয়ে মহারাষ্ট্রের সেরা উৎসবের জায়গা নেয় এই গণেশ পুজো।
তবে এমনটা ভাববেন না যে বাল গঙ্গাধর তিলকের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল গণেশ পুজো। আগেও অনেকেই এই পুজো করতেন, কিন্তু সেটা বিপুল মাত্রায় ছড়িয়ে যায় তিলকের হাত ধরেই। এবার ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এই উৎসব।