রণবীর ভট্টাচার্য
বুধবার, ৪ মে সেই সব মানুষদের স্মরণে একটি বিশেষ দিন, যাঁরা কোথাও কোনও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটলে, ঝাঁপিয়ে পড়েন নিজেদের সীমিত ব্যবস্থাপনা নিয়ে, পরোয়া করেন না নিজের প্রাণের। হ্যাঁ, এদিন International Firefighters' Day বা আন্তর্জাতিক দমকলকর্মী দিবস। দমকল বিভাগ নিয়ে সবাই কমবেশি ওয়াকিবহাল। কিন্তু পর্যাপ্ত সুরক্ষাকবচ কি দেওয়া হয় ওঁদের?
সারা পৃথিবীতেই দেখা যায়, দমকল কর্মীদের কাজ সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। কোথাও বহুতলে আগুন লেগে যাওয়া, কোথাও বা গলির মধ্যে কোনও বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নি সংযোগ, আবার কোথাও বা কোনও শিল্পাঞ্চলে অতর্কিতে কোনও দুর্ঘটনা— বিপর্যয় মোকাবিলায় মানুষের সঙ্গে সব সময় রয়েছে দমকল কর্মীরা। মানুষ ও সম্পদ বাঁচানোর জন্য নিজের প্রাণের পরোয়া করেন না তাঁরা। অনেক সময়েই দেখা যায়, তাঁদের মাইনে যৎসামান্য, বিমা আহামরি কিছু নয়, আবার মান্ধাতা আমলের ব্যবস্থাপনা— কিন্তু এই মানুষের কাজের ঝুঁকির ভাগ কি রাষ্ট্র কমাতে পারে না বা লাঘব করতে পারে না?
ইংরেজিতে একটি কথা ভীষণ প্রচলিত। First responder। আক্ষরিক অর্থে দাঁড়ায়, যাঁরা সবার আগে পাশে দাঁড়ান, বিপদে সঙ্গে থাকেন। আধুনিক সমাজে দমকল বিভাগ বিপর্যয় মোকাবিলা টিমগুলোর প্রাণভোমরা। অনেকেই হয়তো জানেন না, দমকল বিভাগে কাজ করতে গেলে বিশেষ শারীরিক সক্ষমতার প্রয়োজন হয়। কলকাতার মতো ঘিঞ্জি শহরে কিন্তু দমকলের কাজ অনেক কঠিন। অনেক সময়ই অলিগলি পেরিয়ে ঠিক বাড়িতে পৌঁছনো মুস্কিল হয়ে যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে পৌঁছনো গেলেও দলকলের গাড়ি দাঁড় করানোর পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না। এর সঙ্গে অনেক সময় স্থানীয় ভাবে জলের জোগান নিয়েও সমস্যা হয়। আর দমকল বাহিনীর শুধু আগুন লাগলেই ডাক পড়ে, এমনটাও নয়। অতীতে কলকাতায় যখন নন্দরাম মার্কেটে বা বস্তিতে আগুন লেগেছে, তখন দমকল বাহিনীর কাছে প্রথম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে আগুন বাগে আনার সঙ্গে প্রাণ বাঁচানো।
গ্রামের ক্ষেত্রে লড়াইটা কঠিন কারণ সব জায়গায় রাস্তা ভালো নয়। শহরে যে রকম পরিকাঠামো অনেক উন্নত, গ্রামের ক্ষেত্রে সমস্যা বেশি। তাছাড়া সচেতনতার দিক থেকেও সমস্যা রয়েছে। বাস্তবে আমার নিয়মিত যে অগ্নি সংযোগের ঘটনা দেখি, তার অনেকখানি কিন্তু এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। বাজি থেকে আগুন, বোমা বাঁধতে গিয়ে দুর্ঘটনা, গুদামের দাহ্যপদার্থ সম্পর্কিত দুর্ঘটনা— এরকম তো শহরে লেগেই আছে। গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করার মতো সংবেদনশীল ঘটনা তো রয়েছেই। আগুনের সঙ্গে লড়াই করা মানুষগুলোর মানসিক অবস্থা অনেক সময়েই চোখ এড়িয়ে যায় সমাজের।
তাই সামনের দিনে সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারকে অনেক বেশি সংবেদনশীল হতে হবে এই পরোপকারী মানুষগুলোর কথা ভেবে। নিয়মিত ভাবে সর্বত্র ফায়ার অডিট করাতে হবে। অত্যাধুনিক পোশাক। কিনতে হবে দমকল বিভাগের কর্মীদের এবং অবশ্যই সাধারণ মানুষকে আগুন নিয়ে আরো সতর্ক থাকতে হবে।