রণবীর ভট্টাচার্য
বুধবার জাতীয় প্রযুক্তি দিবস। ১৯৯৮ সালে আজকের দিনে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমলে পোখরানে ভারত সফল ভাবে পাঁচটি পরমাণু বোমার পরীক্ষা করে। বলাই বাহুল্য, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ভারতের প্রথম পরমাণু পরীক্ষার ২৪ বছর পর ভারতের তরফে পরমাণু শক্তির পরীক্ষার দিকটি সারা বিশ্বের আলোড়ন ফেলেছিল। সেই বিশেষ দিনের উদযাপন প্রতি বছর জাতীয় প্রযুক্তি দিবসে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এই বছরের থিম হল ভারতের উজ্জ্বল তথা ভারসাম্যসহ (sustainable) ভবিষ্যতের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন।
১৯৯৮ সালে পরমাণু শক্তি পরীক্ষার পর ভারতকে একাধিক দেশের অর্থনীতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তবে শুধুমাত্র ভারতীয় উপমহাদেশ নয়, সমগ্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় পরমাণু শক্তিধর ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে আসা এক নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিয়েছিল। দীর্ঘস্থায়ী দিক থেকে ভারতের প্রতিরক্ষা সুরক্ষিত হয়েছে এবং কূটনীতিক দিক থেকে ভারসাম্যের নীতির প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কাকতলীয় ভাবে ভারতে এখন দক্ষিণপন্থী দলের নেতৃত্বে যে সরকার রয়েছে, সেই নরেন্দ্র মোদীর সরকারও গঠনমূলক জাতীয়তাবাদপন্থী। তবে বর্তমানে কোভিড এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অনেকটাই টালমাটাল আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্র। গত কয়েক বছরে সীমান্তে পাকিস্তান ও চিনের আগ্রাসী নীতির সামনে ভারতের কূটনীতি প্রশংসিত হয়েছে। তবে স্থানীয় সংঘর্ষের আশঙ্কা কোনওভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতীয় উপমহাদেশ তথা সার্কের জন্য কখনও শান্তি প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দেয় না।
প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন নিয়ে ভারত এখন প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জায়গায় আসছে। কোভিড পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি সাড়া ফেলেছে। অনেক স্টার্ট আপ তৈরি হচ্ছে, কমবয়সীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে নতুন কিছু করার। তবে এর সঙ্গে অন্ধকার এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। দেশে বেকারত্ব চিন্তায় ফেলেছে অনেককটাই। বাজার অগ্নিমূল্য, মুদ্রাস্ফীতি চরমে এবং দিশাহীন অর্থনীতি মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের হেঁশেলে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এই অবস্থায় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ কতটা বাস্তবিক সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সামাজিক সুরক্ষার দিকটি কতটা নিশ্চিত করা যেতে পারে জনসাধারণের কথা ভেবে, সেটি একাধিক স্তরে আলোচনায় বারবার উঠে আসছে।
এই বছরের প্রযুক্তি দিবস তাই ভাবার অবকাশ দিয়েছে অনেকটাই। একদিকে রয়েছে বৃহত্তর বিশ্ব বাজার অর্থনীতিতে ভারতীয় সংস্থার মুনাফা আর অন্যদিকে সামাজিক সুরক্ষার মত সংবেদনশীল দিক, ভারসাম্যের পরীক্ষা থাকছে সামনের দিনের ভবিষ্যতে।