রোগ নির্ণয়ে প্রস্রাবের রং মুখ্য ভূমিকা নেয়। শরীরে কোনও রোগ বাসা বেঁধেছে কিনা তা প্রস্রাবের রং দেখে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন।
শরীর সুস্থ থাকলে প্রস্রাবের রং হালকা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। তবে শরীরে জলের পরিমাণ বেশি থাকলে প্রস্রাবের রং হয় একেবারে স্বচ্ছ। আবার প্রস্রাবের রং হালকা কমলা রঙের হলে তা ডিহাইড্রেশনের ইঙ্গিত দেয়। সাধারণত গরমকালে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার ফলে ডিহাইড্রেশন হয়। এর থেকেই প্রস্রাবের রং হালকা কমলা হয়। একইভাবে গোলাপী, কমলা, লাল, কালো বা বাদামি রঙের প্রস্রাবও কোনও না কোনও শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হলুদ রঙের প্রস্রাব ইউরোবিলিন নামক রঞ্জকের জন্য দেখা যায়। পুরোনো লোহিতরক্তকণিকা ভেঙে এই রঞ্জকটি প্রস্রাবে মিশে যায়। ফলে এর রং হয় হলুদ। কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ ও খাবারের মধ্যেও এমন রঞ্জক থাকে। যেমন বিট থেকে তৈরি বিটিউরিয়া। এর জন্য প্রস্রাব গোলাপী বা লালবর্ণ ধারণ করে। একইভাবে ওষুধ বা খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন বি বা অ্যাসপারগাস খাওয়ার ফলে সবুজ রঙের প্রস্রাব হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কমলা প্রস্রাব নানা কারণে দেখা দিতে পারে। প্রাথমিকভাবে কিছু খাবার খাওয়ার ফলে প্রস্রাবের রং কমলা হতে পারে। গাজর, টম্যাটো, স্কোয়াশ জাতীয় কিছু সবজির কারণে প্রস্রাব কমলা রঙের হয়। এই সবজিগুলোর মধ্যে থাকে বিটা ক্যারোটিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি প্রস্রাবে রঞ্জক হিসেবে থাকে।
তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, পরপর দুদিন যদি কমলা রঙের প্রস্রাব হয়, তাহলে তা স্বাভাবিক ঘটনা নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চিকিৎসকদের মতে, ওষুধের কিছু নির্দিষ্ট উপাদানের কারণেও এমন হতে পারে। সালফাসালাজিন, রিফাম্পিন, ল্যাক্সেটিভ জাতীয় ওষুধ নিয়মিত খেলে প্রস্রাব কমলা রঙের হতে পারে। পাশাপাশি ওষুধ বা খাবারের মধ্যে ভিটামিন সি থাকলে প্রস্রাব কমলা হয়। ভিটামিন বি-এর মধ্যে থাকা রাইবোফ্লাভিন এর জন্য দায়ী।
কমলা প্রস্রাব কিছু রোগেরও ইঙ্গিত দেয়। যেমন প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার থেকে এমন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। প্যানক্রিয়াসের ক্যানসার থেকে জন্ডিসের সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে প্রস্রাবের রং কালচে হলুদ বা কমলা রঙের হয়। তবে জন্ডিস শুধুমাত্র প্যানক্রিয়াসের ক্যানসার থেকে হয় না। প্যারাসাইটের সংক্রমণ, হেপাটাইটিস বা লিভারের ক্রনিক রোগ থেকেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলে কমলা প্রস্রাব জন্ডিসের লক্ষণ হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।